• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

কার্ড বিতরণের আগেই টিসিবির পণ্য বিতরণ, বঞ্চিত ১৭০ জন

প্রকাশ:  ২৪ মার্চ ২০২২, ২৩:০০
আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :

যশোরের মনিরামপুরে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কার্ডধারীদের না জানিয়ে তালিকার বাইরের লোকদের পণ্য দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগটি উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়ে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে। তাঁদের অবহেলায় তালিকাভুক্ত দরিদ্র ১৭০টি পরিবার প্রথম কিস্তি পণ্য তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন। সব চেয়ে বেশি লোক বাদ পড়েছেন ইউনিয়নটির ৭ নম্বর (মামুদকাটি-কদমবাড়িয়া) ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

অভিযোগ উঠেছে ওই ওয়ার্ডের মেম্বর বা গ্রাম পুলিশকে মাল বিতরণের কথা না জানিয়ে চেয়ারম্যানের পছন্দের লোকের হাতে কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের হাতে কার্ড দেওয়া হয়েছে তাঁরা সঠিক সময়ে কার্ড বিতরণ না করায় এ ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধশত কার্ডধারী টিসিবির পণ্য তুলতে পারেননি।

তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, উপজেলা থেকে কার্ড দেরিতে দেওয়া হয়েছে। কার্ডধারী ১৭০ জন সময়মত পরিষদে হাজির না হওয়ায় তাঁদের পরিবর্তে মাস্টার রোল করে ১৭০ জনের মাঝে সে পণ্য বিতরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় রমজান মাসে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিতরণ করতে ১ হাজার ৩৫৩ জনের তালিকা করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। দুই কিস্তিতে এ মালামাল বিতরণ করার কথা। প্রথম কিস্তুতে ৪৬০ টাকায় দুই লিটার সোয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি ও দুই কেজি ডাল বিতরণের দায়িত্বপান কেশবপুরের মিম স্টোরের মালিক আব্দুল মমিন। বুধবার (২৩ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে সংশ্লিষ্ট পরিষদ মাঠে তিনি মাল বিতরণ শুরু করেন।

অভিযোগ রয়েছে, মালামাল বিতরণের ৩-৪ দিন আগে ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে তালিকাভুক্তদের হাতে কার্ড পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও খেদাপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেলায় তা মানা হয়নি। ওই ওয়ার্ডের মেম্বর শহিদুল ইসলাম ও গ্রাম পুলিশ বিনয় দাসকে কার্ড বিতরণের দায়িত্ব না দিয়ে চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন আবু হানিফ নামে এক ব্যক্তিকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবু হানিফ সঠিক সময়ে কার্ডগুলো উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারেননি।

এমনিভাবে ইউনিয়নের ১৭০ জন সঠিক সময়ে কার্ড না পাওয়ায় মাল আনতে পারেননি। পরে পরিষদের আশপাশের লোকজন ডেকে টিপসই নিয়ে সে মাল দেওয়া হয়েছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, অনেকে টিপসই দিয়ে মোটরসাইকেলে করে মাল নিয়ে গেছেন। বহু গরিব মানুষ মার পায়নি।

কদমবাড়িয়া গ্রামের জাহানারা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকালে কার্ড পেয়ে পরিষদে মাল আনতি গিছি। যেয়ে শুনি আগেরদিন (বুধবার) মাল দেওয়া হয়ে গেছে।

একই গ্রামের নূরজাহান বেগম ও জয়নাল আবেদীন বলেন, বুধবার (২৩ মার্চ) রাত্রি কার্ড পাইছি। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে পরিষদে মাল আনতি গিছি। না পাইয়ে খালি হাতে ফিরে আইছি।

মামুদকাটি গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, বুধবার বেলা ১০ টায় কার্ড পাইছি। ওই দিন মাল দেবে তা বলেনি। খবর পেয়ে সাড়ে ৫টার দিকে পরিষদে গিছি। আমাদের মাল দেয়নি। বলেছে, সব বিতরণ হয়ে গেছে।

ওই গ্রামের বকুল পারভেজ বলেন, বুধবার বিকেল ৩টার সময় কার্ড পাইছি। কাজে ছিলাম। সেখান থেকে উঠে গোছগাছ করতে সময় শেষ হয়ে গেছে। আর যেতে পারিনি।

চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি আবু হানিফ বলেন, মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় আমাকে পরিষদে ডেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সব কার্ড ধরিয়ে দেছেন দফাদার সোহরাব হোসেন। রাতে এসে কদমবাড়িয়ার কার্ড আলাদা করে নাজের হোসেন নামে একজনের কাছে দিছি। কার্ডে শুধু ব্যক্তির আর গ্রামের নাম ছিল। পিতার নাম ছিল না। এজন্য সবাইকে চিনি উঠতি পারিনি। যাঁদের চিনেছি তাঁদের কার্ড পৌঁছে দিছি। আমার কাছে ৬টা কার্ড থেকে গেছে। তারমধ্যে অন্য গ্রামের কার্ডও আছে। শুনিছি, নাজেরর কাছেও কার্ড থেকে গেছে।

আবু হানিফ বলেন, বুধবার মাল দেবে তা আমাদের কেউ বলিনি। এ জন্য আমরা কার্ড দেওয়ার সময় লোকজনদের জানাতে পারিনি। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ বিনয় দাস বলেন, টিসিবির কার্ড ও মাল বিতরণের খবর আমি পাইনি। বুধবার পরিষদে যেয়ে দেখি মাল দেচ্ছে।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, পরিষদ থেকে কার্ড ও টিসিবির পণ্য দেওয়ার কথা আমাকে কেউ জানাননি। শুনেছি, হানিফ নামে একজন সব কার্ড পরিষদ থেকে এনেছেন। খেদাপাড়া ইউপির সচিব আব্দুল আলিম বলেন, উপজেলা থেকে কার্ড দেরিতে দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার (২১ মার্চ) কার্ড পেয়ে ওইদিন বিতরণ শুরু হয়েছে। কার্ডধারী ১৭০ জন সময়মত পরিষদে হাজির না হওয়ায় তাঁদের পরিবর্তে মাস্টার রোল করে ১৭০ জনের মাঝে সে পণ্য বিতরণ করা হয়েছে।

ইউনিয়ের ট্যাগ অফিসার আজহারুল ইসলাম বলেন, ৩-৪ দিন আগে পরিষদে কার্ড পৌঁছে দিয়ে বিতরণের জন্য চেয়ারম্যান, সচিব ও গ্রাম পুলিশদের বলে দিয়েছি। অনেকে সময়মত হাজির হতে পারেননি। বিষয়টি ইউএনওর সাথে কথা বলে মাস্টার রোল করে অন্যদের মাঝে সে পণ্য বিতরণ করা হয়েছে।

ডিলার আব্দুল মমিন বলেন, ট্যাগ অফিসারের নির্দেশে আমরা কাজ করেছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে সব মাল বিতরণ করেছি।

চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জিন্নাহ বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ট্যাগ অফিসার ফোনে জানিয়েছেন বুধবার সকালে মাল দেওয়া হবে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণে একটু ঝামেলা হয়েছে। ওই ওয়ার্ডের মেম্বর যোগাযোগ না করায় অন্য লোকের উপর কার্ড বিতরণের দায়িত্ব দিতে হয়েছে।

মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, টিসিবির পণ্য না পাওয়ার ব্যাপারে কার্ডধারী কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

মনিরামপুর

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close