• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জেলা পরিষদের প্রশাসক হতে সাবেক এমপি আউয়ালের তোড়জোড়

প্রকাশ:  ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১৯:১৬
পিরোজপুর প্রতিনিধি

দুর্নীতি আর নানা অপকর্মের জন্য বহুল আলোচিত পিরোজপুর-১ আসন থেকে দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য একেএম আউয়াল এবার জেলা প্রশাসক হতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত মামলায় নিজের ও স্ত্রীর স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি আদালতের নির্দেশে জব্দ করেছে দুদক। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অর্থপাচার, সরকারি জমি দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

এত অভিযোগ নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও আবার নতুন করে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের খবরে নড়েচড়ে বসছেন তিনি। চেষ্টা করছেন প্রশাসক পদে বসতে।

গত ১৮ এপ্রিল দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় পর্ষদগুলো বিলুপ্ত করে সরকার। এসব পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের।

তবে এই খবরও শোনা যাচ্ছে, প্রশাসক পদে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আসছেন। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দ্রুততম সময়ে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে। ভোটার তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এতে ভোট দেবেন।

এমন খবরে বিলুপ্ত হওয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে আগ্রহী রাজনীতিবিদরা নড়েচড়ে বসছেন। কেউ কেউ নিজেদের মতো চেষ্টা তদবীরও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দুর্নীতির বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন আউয়াল। দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে তার ভাইও প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হলেও এখন সেই অর্থে পিরোজপুরে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছেন আউয়াল। তাই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদ পেলে প্রভাব ফিরে পেতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।

তবে নিজের আগ্রহ না থাকলেও দল দায়িত্ব দিলে জেলা পরিষদে আসতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে একেএমএ আউয়াল বলেন, আমি আসলে জেলা পরিষদ নিয়ে খুব আগ্রহী না। সামনে ইলেকশন আসতেছে, সেখানে নির্বাচন করতে চাই। এরপরও যার দল করি, সে যদি দায়িত্ব দেয় তাহলে তো কিছু করার নেই।

এমপি থেকে দুদকের একাধিক মামলার আসামি তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও তথ্য গোপনের দায়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে একে একে ৫টি মামলা করে দুদক। যার মধ্যে ২টি মানি লন্ডারিং। বাকি ৩টি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা। এখন পর্যন্ত জমা দেওয়া ৩টি মামলার তদন্তে সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।

এদিকে গত বছরের ২০ জানুয়ারি একেএম আউয়াল এবং তার স্ত্রী মিসেস লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে দুদকের তিনটি মামলায় চার্জশিট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, ২০১৯ সালে আউয়াল সরকারি খাস জমি দখল করে ওই জমিতে অবৈধভাবে তার স্ত্রী মিসেস লায়লা পারভীনের নামে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন।

দুদকের পৃথক আরও একটি অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, এমপি আউয়াল ভিপি ‘ক’ তফসিলভুক্ত রাজার পুকুর নামে পিরোজপুরের একটি পুকুর ভরাট করে অবৈধভাবে দখল ও আউয়াল ফাউন্ডেশন নামে আরও একটি সরকারি তফসিলভুক্ত জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করেন। যদিও স্থানীয় প্রশাসন নিজের নামে করা তার ফাউন্ডেশনের জায়গা ২০২০ সালে দখলে নেয়।

অন্যদিকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায়ও অভিযুক্ত একেএম আউয়াল। বৈধ আয়ের বাইরে তিনি ৩৩ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। বিপরীতে দুদকের কাছে জমা দেওয়া তথ্যে তিনি গোপন করেছেন ১৫কোটির বেশি সম্পদের হিসাব। অর্থপাচারের দায়ে আরো একটি মামলা রয়েছে সাবেক এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি আউয়াল ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয় বর্হিভূত স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে গেলে উচ্চ আদালতও মহানগর আদালতের সম্পদ জব্দের আদেশ বহাল রেখেছেন। তবে বর্তমানে এই দম্পতি জামিনে আছেন।

দুদকের একাধিক মামলা নিয়ে যখন অনেকটা বেকায়দায় আউয়াল তখন ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে সস্ত্রীক কারাগারে যেতে হয়েছিল আউয়াল দম্পতিকে। অবশ্য ওই আদেশ দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচারক আব্দুল মান্নানের বদলির আদেশ আসা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।

পরে ওইদিন বিকালেই তাদের জামিন দেন পিরোজপুর জেলা আদালত। এর বাইরেও ঘুষ বাণিজ্য, ঠিকাদারিতে কমিশন ও এলাকায় তার বিরুদ্ধে নিজস্ব বাহিনী রাখারও অভিযোগ আছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, একেএমএ আউয়াল পরিবারের জামিন কেন বাতিল হবে না তা নিয়ে ইতোমধ্যেই উচ্চ আদালত রুল জারি করেছেন। শিগগিরই জামিন বাতিলের চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তবে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ৪০৯ ধারাসহ অনেক অভিযোগে মামলা চলছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হলে রায়ে কী হবে তা এখনই বলা মুশকিল।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এনএন/জেএস

পিরোজপুর,একেএম আউয়াল,দুদক

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close