আইলার ১৩ বছর, ক্ষত শুকানোর চেষ্টায় উপকূলবাসী
আজ ২৫ মে, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার ১৩ বছর। ২০০৯ সালের এই দিনে আইলা পাইকগাছা-কয়রাসহ গোটা উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিলো। বিস্তীর্ণ জনপদের বিভিন্ন এলাকায় পাউবোর দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম লবণ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বহু কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। হাজার হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়।
উপকূলজুড়ে অর্থনীতিতে পড়ে বিরুপ প্রভাব। আইলা উদ্বাস্তু বহু মানুষ গৃহহারা হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নেয়। শ্রমজীবি পরিবারে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। দেখা দেয় সুপেয় পানির সংকট। জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়ে উপকূলীয় মানুষ।
সম্পর্কিত খবর
ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা, এনজিও, সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন দুর্যোগকবলিত মাানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়রা সফরকালে বাগালিতে জনসভায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ উপকূলীয় অঞ্চলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।
আইলা পরবর্তী গত ১৩ বছরে অবস্থার উত্তরণ হলেও এর ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকেই। এখন পর্যন্ত পাউবো দু’টি উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পোল্ডার অভ্যন্তরে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও পরবর্তী ফনি, আম্পান ও ইয়াস দুর্যোগগুলোতে তা ধোপে টেকেনি। এসব দুর্যোগে এমনকি জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে পাইকগাছা ও কয়রার বিভিন্ন পোল্ডারে বেড়িবাঁধের ভাঙনে ক্ষয় ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।
বেড়িবাঁধ না টেকার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষে বেড়িবাঁধ ও স্লুইচগেটগুলোর অপব্যবহারকে দায়ী করে লবণ পানি বিরোধী জনমত গড়ে তোলেন। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় লবণ পানির পরিবর্তে মিষ্টি পানিতে মাছ চাষের পাশাপাশি ধানসহ নানা মৌসুমী ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে গতি ফিরেছে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে।
এদিকে অভিযোগ ওঠেছে উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা থাকার পরেও দীর্ঘদিনেও মজবুত ও টেকসই বেঁড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। তবে সর্বশেষ সরকার কয়রায় কেসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে সরকারসহ ইউএনডিপি এখন পর্যন্ত দুই উপজেলায় প্রায় দশ হাজার পানির ট্যাংকি সরবরাহ করেছে। এখনো আসার অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় সাত হাজার জলাধার। দুই উপজেলায় ৪০টি পুকুর খনন করা হয়েছে। ৩০০টি নলকূপ ও ১০টি সোলার পি এস স্থাপন করা হয়েছে। পাইকগাছার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নাসিরপুরে ৯ ও পোদা নদীতে ৭ কি:মি: খাল খননের কাজ শুরু হয়েছে। শালিখা হতে আমাদী পর্যন্ত ৩২ কি.মি. কপোতাক্ষ নদ খনন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তবে নানা জটিলতায় অনেক খালখনন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এর জন্য অবশ্য কতিপয় চিংড়ী চাষী ও প্রভাবশালীরা দায়ী বলে মনে করছে মৎস্য অধিদপ্তর।
সর্বশেষ আইলার ১৩ বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা-কয়রার মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে তারা সরকারের সহযোগিতার পাশাপাশি জনসচেতনতা গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এনজে