• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রোদে পুড়িয়ে চেয়ারম্যানের পক্ষে মানববন্ধন

প্রকাশ:  ০৬ জুলাই ২০২২, ১৯:২৮
নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রচণ্ড রোদ মাথায় করে রাস্তার দুই পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে মানববন্ধনে অংশ নিতে এভাবেই বাধ্য করা হয় নোয়াখালীর সুবর্নচরের আল আমিন বাজার দাখিল মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্রছাত্রীদের।

বুধবার (৬ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের আল আমিন বাজারে এই মানববন্ধন পালিত হয়।

জানা যায়, মানববন্ধনের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে‘চরওয়াপদা ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগন’ লেখা থাকলেও জনসাধারণের পাশাপাশি স্থানীয় ‘আল আমিন বাজার দাখিল মাদ্রাসার’ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালীন তা বন্ধ রেখে জোর করে এনে সড়কে দাঁড় করিয়ে দিয়ে মানববন্ধন করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মানববন্ধনে শিশু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। দীর্ঘসময় ধরে শিশু শিক্ষার্থীদের এ ভাবে সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক, যদিও নিজেদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন তারা।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সকালে একটি ক্লাস শেষ করে আর একটি ক্লাস করার আগে শ্রেণি কক্ষে গিয়ে শিক্ষকরা তাদের বের হয়ে সড়কের দিকে যেতে বলেন। এরপর দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় প্রচন্ড রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাখা হয় তাদের। কেন বা কিজন্য তাদের সড়কে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাও জানেন না কোন শিক্ষার্থী। তাদের বক্তব্য হুজুররা (শিক্ষক) আসতে বলেছেন, তাই এসেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, আমরা বাচ্চাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি পড়ালেখার জন্য। তাদের দিয়ে মানববন্ধন করানো অন্যায়। এটা কোন ভাবে মেনে নিতে পারিনা। তাছাড়া সেখানে যদি প্রতিপক্ষ কোন অঘটন ঘটাতো, তাহলে আমাদের শিশুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নিতো। যেসকল শিক্ষকরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান তারা।

এছাড়াও এছাড়াও ৩-৪ বছরের বাচ্চাদের এই মানববন্ধনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কি কারণে তারা এখানে দাড়িয়েছে জিজ্ঞেস করলে তারা কিছুই বলতে পারে নি।

আল আমিন বাজার দাখিল মাদ্রাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সড়কে দাঁড়িয়েছে। তারা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে তো কোন অন্যায় করেনি। আমরাও চাই যারা বৃদ্ধার ওপর এমন পাশবিক নির্যাতন করেছে তাদের বিচার হোক। তবে, এ ঘটনায় জড়িত না হয়েও যাতে কেউ হেনস্তার শিকার না হতে হয় তারও দাবি জানাই।'

তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা ম্যানেজিং (পরিচালনা) কমিটির সদস্যদের অনুমতি নিয়েই শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে পাঠানো হয়েছে। এটা আমার একান্ত কোন সিদ্ধান্ত না।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, পাঠদান চলাকালিন সময় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে দাঁড় করানো অন্যায়। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যদি এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তবে তার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৈতী সর্ববিদ্যা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমার অনুমতি নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেনি। আমি বিষয়টি খবর নিচ্ছি।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত পহেলা জুলাই শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের থানারহাট সংলগ্ন আমানতগঞ্জে শেখ নাছির উদ্দিন মাইজভান্ডারীকে পায়ু পথে টর্চলাইট ঢুকিয়ে নির্যাতন করে। ঘটনায় ভুক্তভোগির পরিবারের লোকজন ওই ঘটনার সাথে চরওয়াপদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান ভূঞা জড়িত ছিলো বলে দাবি করে। কিন্তু পরবর্তীতে ভুক্তভোগির ছেলে বাদি হয়ে ৮জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করলেও সেখানে চেয়ারম্যানকে আসামি করেন নি। একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবী ভুক্তভোগির পরিবারের। আহত নাছির উদ্দিন ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহনাজসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পূর্বপশ্চিম- এনই

নোয়াখালী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close