• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ধামরাইয়ে খান বোর্ড মিলের বর্জ্যে দূষিত খালের পানি

প্রকাশ:  ২৪ আগস্ট ২০২২, ১৬:৪৭ | আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২২, ১৬:৫৪
সাভার প্রতিনিধি

ধামরাই উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মোরারচর, শোলাবাড়ী, গুলাল, উত্তর দিগল গ্রাম, পটল গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে বংশাই নদীর শাখা নদী । এক সময় এই নদী ছিল ধামরাই উপজেলার তীরবর্তী মানুষের প্রাকৃতিক পানির প্রধান উৎস। যা কৃষি ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করা হতো এসব নদীর পানি। নদীতে পালতুলে নৌকা চলতো। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। মানুষ গোসল করতো মনের আনন্দে। গরু বাছুর গোসল করাতো এই নদীর পানিতে। কালের প্রবাহে দখল দূষনে নদী গুলো আজ খালে পরিণত হয়ে মৃত প্রায়। কিন্তু কাগজপত্র বিহীন আজম খান মালিকানাধীন খান বোর্ড মিলের দূষিত বর্জে নদীর পানি দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। মাছ মরে গেছে।

ঘন কালো বিষাক্ত পানি কোন কাজেই ব্যবহার করতে পারছেনা নদী তীরবর্তী মানুষ। ঔই বিষাক্ত পানি গায়ে লাগলেই চুলকানিসহ নানা ধরনের চর্ম রোগের সৃষ্টি হয়। দূর্গন্ধে টিকতে পাড়ছেনা নদী তীরবর্তী মানুষ। দূষিত ও বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে রাতে ঘুমাতে পারে না তীরবাসীরা। মানুষের দূর্ভোগ আজ চরমে। কিন্তু এই অসহায় মানুষগুলোর দূর্ভোগ দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ধামরাই উপজেলার সোনা টেক, শোলাবাড়ী, গুলাল, পটল, ও উত্তর দিঘল গ্রামের মাঝ দিয়ে ভেদ করে নলাম নদীতে গিয়ে শেষ হয়েছে এ বংশাই নদী। বছরের পর বছর ধরে হাজারো মানুষের চোখের সামনে স্পষ্ট দিবালোকে অবস্থিত খান বোর্ড মিলের বর্জে এবং সেই সাথে বিভিন্ন কলকারখানা ও পৌলট্রি ফার্মের বর্জ পাইপ লাইন দিয়ে সরাসরি ফেলা হচ্ছে বংশাই নদীতে। কিন্তু এ নদীর পার দিয়ে গড়ে উঠা হাজারো মানুেেষ বাড়ী ঘর। দূর্গদ্ধের কারণে বাড়ীতে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাকিয়ে দেখছে বর্জ্যপাতের দৃশ্য। যে পানির অপর নাম জীবন, কলকারখানার বর্জ্য ফেলে পানিকে দূষিত ও বিষাক্ত করে মরণ ফাঁদে পরিনত করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, কে বা বুঝে কার ব্যথা।

এই বিষয়ে খালের পারে বাড়ী মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, এই খান বোর্ড মিলের বর্জের কারণে আমরা দূর্গদ্ধে বাড়ীতে থাকতে পারি না। পচা দূর্গদ্ধের কারণে বাড়ীতে ছেলে মেয়েরা ঠিকমত ভাতপানি খেতে পারে না। আমরা মালিক আজম খানকে বললে আমাদের কথার কোন গুরুত্ব দেয় না।

একই গ্রামের মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, আমরা আগে এই খালের পানিতে গোসল করতাম এবং গরু বাছুর গোসল করাইতাম এমন কি বাড়ীর রান্নাবান্নার কাজ করতেন আমাদের মায় চাচিরা। কিন্তু আজম খানের বোর্ড মিলের বর্জের কারণে কাজবাজ তো দুরের কথা দূর্গদ্ধে থাকায় কষ্ট। এছাড়া এক সময় মসজিদের মুসলিরা এই খালের পানি দিয়ে ওজু করতেন গোসল করতেন। কিন্তু আজম কানের মিলের বর্জের কারণে এখন আর সেটা হয় না।

এই বিষয়ে জাহাঙ্গীর নামে এক যুবক বলেন, ভাই কি আর বলবো আমরা গ্রামের সব লোকজন মিলে মিল মালিক আজম খানের কাছে গিয়ে অসুবিধার কথা জানালেও সে এই বিষয়ে কোন কর্ণপাত না করে চলে যায়। পরে আমরা বোর্ড মিলের দূর্গদ্ধে বাড়ীতে থাকতে না পেরে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে অভিযোগ দেয়।

এই বিষয়ে ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মোসলেম উদ্দিন মাসুম বলেন,গ্রামবাসির অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ঘটনা সত্য। পচা দূর্গদ্ধে মানুষ অতিষ্ট। পরে আমি মিল মালিক আজম খানকে ১৫দিনের সময় দিয়েছি। মিলের বর্জ্য খালে ফেলতে পারবেন না। আপনি কারখানা চালাতে হলে আপনি হাউজ করে সেখানে ফেলবেন। যাতে গ্রামবাসির কোন সমস্য না হয়।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি বলেন, ধামরাই অনেক গুলি বোর্ড মিল আছে যাদের বর্জের কারণে মানুষ অতিষ্ট। এদের একটা তালিকা করে পরিবেশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

পূর্বপশ্চিম- মনোয়ার/ এনই

ধামরাই

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close