• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

চাঁদা না পেয়ে ছাত্রদল নেতার পায়ে গুলি: ওসিসহ ৬ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশ:  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২৩:৫২
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সাইফকে ডেকে নিয়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় বায়েজিদ বোস্তামি থানার সাবেক ওসি মো. কামরুজ্জামানসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।

রোবাবর চট্টগ্রামের দ্বিতীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অলি উল্লাহর আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগীর মা ছেনোয়ারা বেগম।

সম্পর্কিত খবর

    বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি কামরুজ্জামান ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন ওই থানারই এসআই মেহের অসীম দাশ, এসআই সাইফুল ইসলাম, এসআই কে এম নাজিবুল ইসলাম তানভীর, এসআই নুর নবী, এএসআই রবিউল হোসেন এবং পুলিশের সোর্স মো. শাহজাহান ওরফে সোর্স আকাশ।

    মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. জসিম।

    মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালের ১৬ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে জরুরি কথা আছে বলে ছাত্রদল নেতা সাইফুলকে অক্সিজেন এলাকার হোটেল জামানে ডাকেন পুলিশের সোর্স আকাশ।

    সে সময় সাইফ পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দক্ষিণ পতেঙ্গায় ছেনোয়ারা হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউসে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলেন। আকাশের ফোন পেয়ে রাত ১০টার দিকে অক্সিজেন এলাকার হোটেল জামানে যান তিনি।

    হোটেল জামানে পুলিশের সোর্স আকাশের সঙ্গে কথা বলার সময় ওসি কামরুজ্জামান, এসআই মেহের অসীম দাশ, সাইফুল, তানভীর, নুর নবী, এএসআই রবিউল ও অজ্ঞাত দুই পুলিশ সদস্য গিয়ে সাইফুলকে আটক করেন। এ সময় তার মোবাইল ও মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ।

    কিছু দূর যাওয়ার পর ওসি অজ্ঞাত ব্যক্তিকে ফোন করে বলেন, ‘সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেছি, তাকে আজকেই ফিনিস করব। তোমরা ইউনিফর্ম পরে জামান হোটেলে যাও এবং সেখানকার গত ২ ঘণ্টার সিসি ফুটেজ ডিলিট করে দাও। এটা এডিসি স্যারের নির্দেশ।’

    পরে শহরের বিভিন্ন স্থানে ২ ঘণ্টা ধরে ঘুরে রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় পৌঁছায় প্রাইভেট কারটি। সেখানে ওসি ও এসআই মেহের গাড়ি থেকে নেমে কিছু সময় কথা বলেন। এ সময় সোর্স আকাশ একটি থলে নিয়ে ওই জায়গায় আসেন।

    পরে এসআই মেহের গাড়িতে উঠে সাইফুলকে বলে, ‘ওপর থেকে তোমাকে ক্রস ফায়ারের অর্ডার আছে। তুমি ৫ লাখ টাকা দিলে তোমাকে আমরা ছেড়ে দেব।’

    এ সময় পরিবার এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানান সাইফুল। তিনি তার অপরাধ কি জানতে চেয়ে আদালতে সোপর্দ করার অনুরোধ করেন পুলিশকে।

    এরপর আসামিরা তার মুখ বেঁধে গাড়ি থেকে নামায়। এ সময় এসআই মেহের, এসআই তানভীর ও এএসআই সাইফুল তাকে উপুড় করে মাটিতে চেপে ধরেন। এরপর ওসি কামরুজ্জামান তার বাম পায়ের হাঁটুর ওপর-নিচে এক রাউন্ড গুলি করেন। এসআই মেহেরও একই স্থানে এক রাউন্ড গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে সাইফুল জ্ঞান হারান।

    জ্ঞান ফিরে নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবিষ্কার করেন সাইফুল। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার বাম পায়ের হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়।

    ড্রেসিংয়ের পর অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে অস্ত্র আইনে সাইফুলের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

    এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী কাজী মফিজুর রহমান বলেন, ‘সোর্সের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে তাকে গুলি করে পঙ্গু করে দিয়েছে আসামিরা। পরে আবার মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে তাকে কারাগারেও পাঠানো হয়েছে। এসব অভিযোগে ভুক্তভোগীর মা ছেনোয়ারা আদালতে একটি মামলা করেছেন।’

    কাজী মফিজুর জানান, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

    সাইফুলের মা ৫০ বছর বয়সী ছেনোয়ারা বলেন, ‘আমার ছেলে একজন পবিত্র কোরআনে হাফেজ ও ব্যবসায়ী। সে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ কাজে বাধা দিত। এতে কিছু সন্ত্রাসী তার শত্রু হয়ে যায়। সাইফুল ছাত্রদলের রাজনীতি করে বলে তারা পুলিশকে দিয়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কারণ তারা মনে করে যে, বিরোধী দলের লোক হিসেবে মেরে ফেললে কোনো জবাবদিহি করতে হবে না।’

    ছেনোয়ারা জানান, এতদিন ওসি কামরুজ্জান ওই থানায় দায়িত্বে থাকায় ভয়ে মামলা করেননি। ঘটনার পর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিলে ওসি পুলিশ পঠিয়ে তার স্বজনদের জানান, মামলা করলে ভুক্তভোগীর আরেকটি পা কেটে নেয়া হবে।

    তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওসি কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘একটা মামলা যেহেতু হয়েছে, আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তাই তদন্তাধীন এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

    পূর্ব পশ্চিম/ম

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close