• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

প্রকাশ:  ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৩৭
নিউজ ডেস্ক

প্রধান প্রজনন মৌসুমে নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে সারা দেশে। এ সময় ইলিশ পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নিয়মিত অভিযানও চালাবে সরকার। এ কদিন কর্মহীন হয়ে পড়া নিবন্ধিত জেলেদের খাদ্য সহায়তাও দেবে সরকার।

গত কয়েক বছর ধরে বছরে দুই দফায় মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণে নেওয়া সরকারি উদ্যোগের ফলে ইলিশের উৎপাদনও বিপুল বেড়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে কূলে ফেরা জেলেদের অবস্থা বদলায়নি। নামমাত্র যে সহায়তা সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয় তাও ঠিকমতো জোটে না সব জেলের কপালে। ফলে এ সময়টাতে অনেক জেলেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয় পরিবার-পরিজন নিয়ে। প্রতি বছরই নিষেধাজ্ঞার কালটা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসে। এবারও উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা আছেন সেই শঙ্কায়। তাদের দাবি, সরকারি সহায়তা যেন যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত জেলেদের দেওয়া হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার কর্মকর্তা মাসুদ আরা মমি জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতায় অভয়াশ্রমের জেলাগুলো হলো বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও লক্ষ্মীপুর। এ ছাড়াও ৩১ জেলার ১৫৫ উপজেলার অংশবিশেষ এ নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, ‘নিরাপদ প্রজনন শেষে ইলিশ যাতে সাগরে ফিরে যেতে পারে সে জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা। প্রায় সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা এর আওতা আছে।’

মৎস্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, চাঁদপুর থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চরআলেকজান্ডার ১০০ কিলোমিটার, ভোলার চরপিয়াল থেকে মেঘনার শাহবাজপুর পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর চররুস্তম ও তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরে নরিয়া ও চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় মেঘনার ২০ কিলোমিটার ও বরিশালের হিজলা মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনা, কালাবদর ও গজারিয়া নদীর ৮২ কিলোমিটার এলাকা এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত।

মাসুদ আরা মমি জানান, চলতি বছর ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ জেলেকে ২৫ কেজি করে ১৩ হাজার ৮৭২ দশমিক ১৮ টন চাল দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবারই প্রথম জনপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। ইলিশের এলাকাগুলোয় এ চাল দিতে আমরা কাজ করেছি।’

তবে জেলেদের অভিযোগ, গতকাল পর্যন্ত কোনো সহায়তা তারা পাননি। অনেক জেলে পাবেন কি না তা নিয়েও আছে সংশয়। তাদের অভিযোগ, ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময় শেষেও এ চাল হাতে পান না বেশিরভাগ জেলে। কোনো কোনো এলাকায় নিবন্ধিত জেলেদের নামে বরাদ্দ করা চাল জেলেদের ভাগ্যেই জোটে না। তা চলে যায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের পেটে। তারাই নয়-ছয় করে এসব চাল আত্মসাৎ করে।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জেলার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন জেলেদের বর্তমান অবস্থা ও দাবির কথা। তারা বলছেন, এ বছর তুলনামূলক কম ধরা পড়েছে ইলিশ। এর মধ্যে জাটকার নিষেধাজ্ঞার পরে আসে বন্যার প্রকোপ। সে সময়ও মাছ ধরা হয়নি। ফলে যারা মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জাল ও নৌকা কিনে নদীতে ইলিশ শিকার করেন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। দিনে দুই-চারটে যা পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি করে দাদনের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। সংসারের খরচ চালাতে স্থানীয় এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় চাল বিতরণে যেন কোনো অনিয়ম না হয় সে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব সহকারের দেখার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেরা।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত প্রকৃত জেলেদের চাল পাওয়া নিশ্চিত করতে গত মঙ্গলবার ৩৭ জেলা প্রশাসককে বিশেষ কিছু নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. এসএম যোবায়দুল কবির স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ছয়টি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসকরা মঞ্জুরিকৃত ভিজিএফের চাল ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ইলিশ আহরণে বিরত থাকা নিবন্ধিত ও প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মধ্যে ১ নভেম্বরের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন ও নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করবেন এবং ৬ নভেম্বরের মধ্যে মাস্টাররোল (সুবিধাভোগীদের তালিকা) পাঠাবেন। জেলা প্রশাসকরা বরাদ্দপ্রাপ্তির পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনুকূলে উপবরাদ্দ প্রদান করবেন এবং সংশ্লিষ্ট জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে অবহিত রাখবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপবরাদ্দ প্রাপ্তির পাঁচ কর্মদিবসের মধ্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুকূলে ডিও (ছাড়পত্র) প্রদান এবং বিতরণ সূচি তৈরি করা সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।

মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আতিয়ার রহমান বলেছেন, ‘এ চাল যাতে নির্দিষ্ট নিবন্ধিত জেলেরা পান তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারের অন্য কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন। যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে বা অনিয়মের খবর পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলের জন্য বরাদ্দ করা চাল যাতে জেলেরাই পান তা নিশ্চিত করতে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।’

বাংলাদেশে সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে ইলিশের উৎপাদন প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১-০২ সালে বাংলাদেশে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ২০ হাজার টন, ২০২০-২১ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টনে। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। মাছের প্রজনন যেখানে এক শতাংশেও কম ছিল, সেটা এবার বেড়ে ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

ইলিশ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close