• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

নিম্নচাপে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে সাতক্ষীরা উপকূলে আতঙ্ক

প্রকাশ:  ২৩ অক্টোবর ২০২২, ১৯:০৮
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করছেন সাতক্ষীরা উপকূলের বাসিন্দারা।

রোববার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় ৩ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠছে। আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। সকাল থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে । ফলে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে,আগের দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলবাসী। দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। ষাটের দশকে নির্মাণ করা এখানকার বেড়িবাঁধগুলো আর পুন:নির্মাণ করা হয়নি। এসব বাঁধ এখন আর সামাল দিতে পারছে না ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা। জিও ব্যাগের বালুর বস্তা আর রিং বাঁধ দিয়ে কোনোরকম টিকিয়ে রাখা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ। এছাড়া বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারও।

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। সে সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা। এরপর ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই কোমেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে মোরা, ২০১৯ সালের ৩ মে ফণী, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল আঘাত হানে। সবশেষ ২০২০ সালের ২০ মে বিকেলে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে সাতক্ষীরা উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এ সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। যার ক্ষত শুকায়নি এখনো।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের শেষ জনপদ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন। সুন্দরবনের উপকুল ঘেঁষা এই দীপ ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে খোলপেটুয়া নদীর তীরে বেড়িবাঁধে বসবাস করেন রেবেকা খাতুন,শারমিন আক্তারসহ অনেকেই।

তারা জানান, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর নদীতে বিলীন হয়ে যায় আমাদের ভিটামাটি। স্থায়ী মেরামত না হওয়ায় এখনো সেখানে জোয়ার ভাটা চলছে। তখন থেকে আমরা বেড়িবাঁধের পাশে একটি ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। এখানেও শান্তিতে নেই। গেলো কয়েক বছরে ফণী, বুলবুল, আম্পানসহ একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশ্রয়স্থলটি। শুনলাম আবার নতুন ঝড় আসবে এতে আবারও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় আছি।

তাদের মতোই অনেকেই আতঙ্কে দিন পার করছে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার। দুর্যোগ এলেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এখানকার মানুষ। দুর্বল বেড়িবাঁধ উদ্বেগের প্রধান কারণ। দুর্যোগে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই বারবার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় লোকালয়। লবণ পানি ঢুকে বিপর্যস্ত হয় জীবনযাত্রা। নষ্ট হয়ে যায় খাবার পানির উৎসসহ, সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকান্ড। তাই দুর্যোগে সবসময় বাঁধ ভেঙে প্লাবন আতঙ্কে দিন কাটান এখানকার মানুষ। এছাড়া উপকূলে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারও।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার করা হয়েছে। বাকি জায়গাগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কার হবে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন বলেন, আগের কয়েকটি দুর্যোগে অগ্রিম প্রস্তুতি থাকায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো গেছে। এবারও আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

তিনি বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১০৩টি। এছাড়া স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ অন্য পাকা ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১৮০টি। এসব কেন্দ্রে প্রায় এক লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব। তবে এ উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হুমায়ুন করিব জানান, এরই মধ্যে উপকূলীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দুর্যোগ মোকাবিলায় অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আতঙ্ক,নিম্নচাপ,দুর্বল বেড়িবাঁধ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close