• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

কপিলমুনি কলেজে প্রধান পরীক্ষকের খাতা পরীক্ষণে ভিন্ন শিক্ষক!

প্রকাশ:  ২৩ অক্টোবর ২০২২, ২১:২৩ | আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ২১:২৬
শেখ নাদীর শাহ্, খুলনা

খুলনার পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত প্রধান পরীক্ষক মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূত ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও বিষয়ের শিক্ষককে দিয়ে খাতা নিরীক্ষণসহ বহুবিধ অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম গত ১৭ অক্টোবর কলেজ চলাকালীন সময়ে একই কলেজের ডেমোনেস্টটর শিক্ষককে তার নির্দিষ্ট কক্ষে বসিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে চলমান তৃতীয় বর্ষের খাতা পরীক্ষণপূর্বক নিরীক্ষণ করিয়েছেন। প্রথমবারের মতো ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পরীক্ষক মনোনিত হয়েই খাতা পেয়ে তা নিজে পরীক্ষণ কিংবা নির্দিষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষকদের বাইরে রেখে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও বিষয়ের শিক্ষককে দিয়ে নিরীক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি তাৎক্ষণিক অন্যান্য শিক্ষকদের দৃষ্টিগোচর হলে তারা কৌশলে তার ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলে রাখে। এরপর কলেজের পরিচালনা পরিষদের এক সদস্য কলেজে আসলে তাকে বিষয়টি ডেকে দেখানো হয়। এরপর কলেজ অধ্যক্ষকে জানালে তিনি দেখছেন বলে জানালেও কার্যত এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাবস্থা নেননি।

এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রসায়ন বিভাগের ডেমনেস্টেটর তাৎক্ষণিক খাতা নীরিক্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম তাকে নিরীক্ষণপূর্বক খাতাগুলির প্রাপ্ত নম্বর চেক করতে বলায় তিনি তা করছিলেন। তবে নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় ঘটনার জন্য তাৎক্ষণিক তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।

যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসমূহ অস্বীকার করে বলেন, তিনি তাকে দিয়ে প্রাপ্ত খাতার নম্বর চেক করছিলেন মাত্র। পরীক্ষণের কাজ তিনি নিজেই করছেন বলে দাবি করে খাতার সংখ্যা অনুযায়ী দু’জন পরীক্ষা নিরীক্ষক যুক্ত করেছেন। তবে ঘটনার দিন তিনি ভিন্ন শিক্ষককে দিয়ে শুধুমাত্র যোগফল চেক করছিলেন বলে দাবি করেন। তবে নির্দিষ্ট স্ক্রুটিনাইজার থাকতেও অন্যকে দিয়ে খাতা নিরীক্ষণের বিষয়ে কারণ তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

কপিলমুনি কলেজের উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মন্ডল সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, হেড এক্সামিনার ইচ্ছা করলে যাকে খুশি তাকে দিয়ে খাতা নিরীক্ষণের কাজ করতে পারেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কপিলমুনি কলেজে সংশ্লিষ্ট ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মাত্র একজন ছাত্র ভর্তি হয়েছে। ডিগ্রি পর্যায়ে অবস্থা একই রকম। যার বিপরীতে এমপিওভুক্ত দু’জন শিক্ষক রয়েছেন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র একজন শিক্ষার্থীর জন্য সরকারকে দু’জন শিক্ষককে মাসিক প্রায় ৮০ হাজার টাকা বেতন গুনতে হচ্ছে। আর বার্ষিক গুনতে হচ্ছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।

এবিষয়ে কপিলমুনি কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের অপর সহকারী অধ্যাপক ইয়াসিন আলী সরদার জানান, বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দেশে মোট সাতটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির উপর ভর করে ২০১২ সালে গঠিত জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ইসলাম শিক্ষাকে বহুলাংশে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শাখা থেকে ইসলামী শিক্ষাকে পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়। আর বর্তমানে মানবিক শাখায় ইসলামী শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি কলেজগুলোতে অবহেলিত অবস্থাতেই পড়ে আছে। এতে কলেজের ইসলামী শিক্ষার শিক্ষকগণ ঐচ্ছিক বিষয়ের একজন গুরুত্বহীন শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন।

অন্যদিকে এ বিষয়ের ছাত্রসংখ্যাও ক্রমশ কমতে কমতে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অথচ, ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষেও কলেজগুলোতে মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসায়-সকল শাখার শিক্ষার্থীগণ ইসলামী শিক্ষাকে আবশ্যিক সাবজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করতো। মূলত ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বাধ্য বাধ্যকতা না থাকায় ইসলামী শিক্ষার ছাত্র সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয় চালু রাখা রীতিমত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও মত দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক।

এ প্রসঙ্গে উপাধ্যক্ষ ত্রিদিব কান্তি মন্ডল বলেন, নতুন কলেজ অনুমোদনের ক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষে মূল বিভাগে মোট ৫০ জন শিক্ষার্থীর প্রয়োজন তবে অনুমোদনের পর এমপিওভুক্ত শিক্ষকের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য কিনা তা জানা নেই তার।

সূত্র জানায়, কোন প্রতিষ্ঠানে নতুন বিষয় চালু করতে কর্তৃপক্ষ শর্ত সাপেক্ষে বিষয়ভিত্তিক অনুমোদন দিলেও বিশেষ শর্ত হিসেবে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সন্তোষজনক উন্নতির কথা বলা থাকে। এমনকি কোন শর্তের ব্যাত্যয় ঘটলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেকোন সময় অনুমোদন বাতিল করতে পারেন।

এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্ল্যাহ বাহার জানান, ইসলামিক শিক্ষার সংশ্লিষ্ট শিক্ষক মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলামকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত খাতা বাড়িতে নিয়ে পরীক্ষণের কথা বলেছি। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে।

সর্বশেষ এব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

খুলনা,শিক্ষক,পরীক্ষক,কপিলমুনি কলেজ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close