• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

সততাই কাল হলো চন্দ্রবান বিবির!

প্রকাশ:  ২৫ অক্টোবর ২০২২, ২২:৫৪ | আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ২২:৫৬
শংকর দত্ত, সুনামগঞ্জ

সততাই যেনো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সুনামগঞ্জ ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্যা চন্দ্রবান বিবির। প্রায় দুই যুগ ধরে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিত্ব করে আসছেন তিনি তবে নেই বসতভিটে। থাকেন অন্যের ঘরে।

চন্দ্রবান বিবি ইউনিয়নের রাঁধানগর গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের স্ত্রী।

জানা গেছে, বয়সের ভারে আগের মতো হাঁটতে-চলতে পারেন না চন্দ্রবান বিবি। রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন। যেকোনো বিপদ-আপদে ভ্যানেটি ব্যাগ কাঁদে ফেলে পায়ে হেটে দিন-রাত মানুষের সেবায় চলা ওই সংগ্রামী নারীর দুঃখের অন্ত নেই। আত্মসম্মানের ভয়ে কারো কাছে নিজের দুঃখের কথা ভাগ করেন না তিনি। দুঃখ-কষ্টকে চাঁপা দিয়ে অদম্য সাহস নিয়ে চলছে তার জীবন। বেঁচে থাকার জন্য তিনি তার পরিবারের হাল ধরেছেন অনেক আগ থেকে। স্বামী ও পুত্রহীন সাত কন্যা নিয়ে চলছে জীবন নামের সংগ্রাম।

একই ইউনিয়নের বাসিন্দা সৈয়দ মাওলানা আক্তার আহমদ জানান, আমাদের ইউনিয়নের সংগ্রামী নারী সদস্যা চন্দ্রবানের সততা যেন কাল হয়ে দাড়িয়েছে। মাথা গুজার ঠাই নেই। জায়গা নেই। নেই নিজের ব্যাংক ব্যালেন্স। উনার ভাগ্যে জুটেছে শুধু উপহাস। তিনি প্রায় ২৫ বছর যাবৎ জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন চাইলেই কিছু সহায়সম্পত্তি নিজের জন্য করতে পারতেন। করেননি। কেননা সততা নিয়ে আজও চলাফেরা করেন। নিজেই উদ্যোগী হয়ে জায়গা কেনার জন্য টাকা সংগ্রহ করেছি। আরো সংগ্রহ চেষ্টা চলমান রয়েছে। তিনি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রথমবার সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে (তারা প্রতীক) প্রায় ২৯০০ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরো চার নারী। এরপর থেকে তিনি একাধারে চারবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় লাভ করেছেন।

গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ছাতক উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এবারে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি পঞ্চমবারের মতো সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। উপজেলায় টানা পঞ্চমবার জয়ের দ্বিতীয় কেউ নেই বলে অনেকের ধারণা। সুখে দুঃখে, যে কোনো বিপদে-আপদে সহযোগিতা পান বলে তাকে বারবার নির্বাচিত করে আসছেন স্থানীয় ভোটাররা। ভোটারদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ছাতক-দোয়ারাবাজার এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো চন্দ্রবান বিবির ঘর তৈরিতে সহায়তা করবো।

আলাপকালে চন্দ্রমালা বিবি জানান, তিনি ১৯৯৭-২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। প্রথম চারবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী করে জিতলেও এবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। সরকারি বেতনের টাকা দিয়ে চলে তার সংসার।

তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তার স্বামী মারা যান। সাত কন্যা ছাড়া তার কোনো ছেলে সন্তান নেই। অভাবের সংসার তার। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থা। স্বামী থাকাকালীন সময়ে একমাত্র বাড়ি-ভিটে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন নেই তার ভিটেমাটি। তিন বছর ধরে গ্রামের মরহুম ইস্কার লন্ডনীর পরিত্যক্ত রাইসমিলে আশ্রয় নিয়ে থাকছেন তিনি। মানুষের সাহায্যে কন্যাদের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে পাঁচ বছর ধরে তিন সন্তান নিয়ে ফের মায়ের কাছে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবন্ধী কন্যা রাহিমা।

শেষ বয়সে এসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদে বসবাসের জন্য গ্রামে এক টুকরো জমিসহ একটি বসতঘরের পাশাপাশি ডিগ্রি পরীক্ষার্থী তার ছোট কন্যা ফাতেমা বেগমকে সরকারি চাকরি দিয়ে সহযোগিতা করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি জোর দাবি জানান।

চন্দ্রবান বিবির বিয়ষে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি আপনার মাধ্যমে জানলাম ধন্যবাদ। আমি ইউএনও সাহেবকে বলবো এবং সর্বাত্তক সহযোগিতা করবো।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরের জামান চৌধুরী জানান, আমার সাধ্যমত সহায়তার চেষ্টা করবো।

তিনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়াতে চাইলেই কিছু করা যায়। সরকারি নানান বিধি নিষেধ রয়েছে। তবে তিনি যে ভালো জনপ্রতিনিধি তা জানতে পেরেছি। তবুও দেখবো বিষয়টা নিয়ে কি করা যায়।

এ ব্যাপারে ছাতক উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শাহ মো. শফিউর রহমান জানান, টানা পাঁচবারের নির্বাচিত সংরক্ষিত এ নারী সদস্যের গুণের কথা ইতিমধ্যে জেনেছেন। সংগ্রামী এ নারী জনসেবায় অনন্য ভূমিকা রাখছেন। এলাকার মানুষ বারবার তাকে নির্বাচিত করে প্রমাণ করছেন তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নির্লোভ এ ত্যাগী নারী দীর্ঘ দুই যোগ ধরে প্রতিনিধিত্ব করে আসলেও নেই ভিটেমাটি। অন্যায় পথে টাকা কামাই না করে বেতনের অল্প টাকা দিয়েই তিনি তার সংসার পরিচালনা করছেন।সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ পুরস্কার হিসেবে তাকে জমিসহ একটি ঘর উপহার দেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করবো।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সুনামগঞ্জ,চন্দ্রবান বিবি,সততা

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close