শিক্ষার্থীদের ‘প্রতিনিয়ত যৌন নির্যাতন চালাতেন’ প্রভাষক
পেশায় তিনি শিক্ষক হলেও শিক্ষার্থীদের যৌন নির্যাতন করতেন। সমকামিতার মতো নোংরা কাজে বাধ্য করতেন শিক্ষার্থীদের। রাজি না হলে শিক্ষার্থীদের মারধর ও পরীক্ষায় কম নম্বর পাইয়ে দেয়ার ভীতি প্রদর্শন করতেন। আবার শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ আলাপচারিতা ও মেসেঞ্জারে নগ্ন ছবি চাইতেন ওই শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে চলা ওই শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের শিকার প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী অবশেষে মুখ খুলেছেন। প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।
এ ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তবে এক মাস অতিবাহিত হলেও অদৃশ্য কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগির ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
ঢাকার ধামরাইয়ে ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে মঙ্গলবার এই প্রভাষকের বিরুদ্ধে যৌন ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন প্রায় ৩০ শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এর আগে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বক্তব্য গ্রহণ শেষে ৩ অক্টোবর কলেজের আরেক প্রভাষক তদন্ত কমিটির প্রধান হাবিবুর রহমান হাবিব প্রতিবেদন জমা দেন। তবে প্রতিবেদন জমা দেয়ার এক মাস অতিবাহিত হলেও অদৃশ্য কারণে অভিযুক্ত প্রভাষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওই স্যার শিক্ষার্থীদের হয়রানি করে। মেয়েদের করে না, শুধু ছেলেদের। সে অনেক আগে থেকেই এটা করে আসতেছে। পড়ালেখার কথা চিন্তা করে কেউ মুখ খোলেনি। আর আমরা যারা অভিযোগ করছি তারা পড়ালেখার কথা চিন্তা করে করিনি। কারণ আমরা কলেজ শেষ করার পর সেখান থেকে চলে আসলে তো আবার ওই শিক্ষক আমাদের ছোট ভাইদের সাথেও একই কাজ করবে। এই কথা চিন্তা করেই আমরা অভিযোগ দিছি। প্রায় এক মাস আগে আমরা অভিযোগ দিছি। কিন্তু এখনও কোনও বিচার হয় নাই। আমরাতো কিছু বুঝতেছি না।’
মানবিক বিভাগের আরেক ছেলে শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমিনুল স্যার আমাকে কন্ট্রোল রুমে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জোরপূর্বক আমার কাপড় খুলে যৌন নির্যাতন করে। একথা কাউকে বললে আমাকে পরীক্ষা দিতে দিবে না এমন ভয়ভীতি দেখায়।’
বিএম বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্যার বিভিন্ন সময় সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কৌশলে ছেলেদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কথা বলে। নগ্ন ছবি চায়। সে মূলত একজন সমকামী। তার এমন নোংরা কাজে কলেজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক ছাত্র তার যৌন নির্যাতনের শিকার। অবিলম্বে আমরা তার প্রত্যাহার ও কঠিন শাস্তি দাবি করছি।’
তদন্ত কমিটির প্রধান ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘তদন্তে যা পেয়েছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করা করা যায় না। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাতে কথা বলে ১৫-২০ দিন আগে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ওই প্রভাষকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা প্রিন্সিপাল দেখবেন। কলেজের পরিচালনা কমিটি এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক এখন কলেজে আসেন না।’
অভিযুক্ত ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এমএমএস করেও কোন সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ধামরাইয়ে ভালুম আতাউর রহমান খান ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাইন উদ্দিন বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ জন শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ করেছে ইউএনও’র কাছে। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে।’
এতদিন পরেও কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করছে। তিনি এটার সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার কাছে অভিযোগ নাই। ইউএনও স্যার ব্যবস্থা নেবেই। এক সপ্তাহের মধ্যে এটার সিদ্ধান্ত দেবে।’
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজটির গভর্নিং বডির সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। শিগগির আপনারা ফলাফল জানতে পারবেন।’
তবে ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘসূত্রিতা কেন এমন প্রশ্নে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ইউএনও।