• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ভোলা সাইক্লোন: আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর

প্রকাশ:  ১২ নভেম্বর ২০২২, ২২:৩৬
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভোলা সাইক্লোনে লণ্ড ভণ্ড হয়ে যায় উপকূল। দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার৷ সেদিন মধ্যরাতে ৩-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। ভয়াল সে দিনটির আজ ৫২ বছর পূর্ণ হয়েছে। প্রতি বছর এই দিনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকারীদের মন আঁতকে উঠে।

এদিকে দিনটিকে উপকূল দিবস দাবির লক্ষ্যে উপকূল বন্ধু নামে পরিচিত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৭ সাল থেকে উপকূলের অর্ধশতাধিক স্থানে উপকূল দিবস পালন করা হচ্ছে। তবে এটি সরকারিভাবে পালন করার দাবি জানাচ্ছেন ভোলা সাইক্লোনের প্রত্যক্ষদর্শীরা।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের হাজিরহাটে ও রামগতিতে পৃথক দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূল দিবসের দাবিতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া কয়েক বছর ধরে দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় উপকূল দিবসের দাবিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।

স্বজন হারাদের তথ্যমতে, ৭০ সালে উপকূলীয় চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত রেডিও ছিলো না। তবে ঘটনার দিন রেডিওতে উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা হয়েছিলো। কিন্তু কেউ তা জানতে পারেনি। যে কয়েকজনের কাছে রেডিও ছিলো তারা শুনতে পেরেও বিশ্বাস করেনি। আবার ওইদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছিলো। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় হালকা বাতাস। গভীর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছিলো তখনই ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। ঝড় আর পাড়াহসম স্রোতে লণ্ড ভণ্ড হয়ে যায় উপকূল।

সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দিবাগত রাতে ভোলা জেলায় ২৪০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসেছিলো ভোলা সাইক্লোন। সেদিন লক্ষ্মীপুরের মেঘনা ও ভুলুয়া নদী উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি ১৮৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছে। প্রায় ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে হাজার হাজার মানুষ ও গবাধি পশু। সেদিনের জলোচ্ছ্বাসে মেঘনা উপকূলীয় এ অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যায়। সরকার হিসেব অনুযায়ি সাইক্লোনটিতে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে ওইদিন প্রায় ১০ লাখ মানুষ মারা গিয়েছে।

জানা গেছে, দেশের ইতিহাসে ভোলা সাইক্লোনটি সবচেয়ে বড় প্রলয়ংকারী ঘটনা। ওইদিন লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চরআবদুল্লাহ, কমলনগরের ভুলুয়ানদী উপকূলীয় চরকাদিরাসহ নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় এটি হানা দেয়। দিনের আলোয় চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ দেখা যায়। লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। ৩-১০ ফুটের জলোচ্ছ্বাসের কারণে মাটি দেয়া যায়নি মৃত মানুষগুলোকে। প্রায় ২৩ দিন লেগেছে রামগতি-কমলনগরে মারা যাওয়া মানুষের লাশ দাফন করতে। তাও একই গর্তে ১৫-২০ জনকে কবর দেওয়া হয়েছিল। লাশ পঁচে খসে খসে পড়েছে মাংশ। উদ্ধারকারীরা অনেক কস্টে লাশগুলো উদ্ধার করে কবর দিয়েছে।

ভোলা সাইক্লোনের প্রত্যক্ষদর্শী বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উল্লাহ মাস্টার জানান, সেইদিন রাত ১০ টা থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ শুরু হয়। মধ্যরাতেই বৃহত্তর নোয়াখালী উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। ওইরাত কেউই ঘুমাতে পারেনি। খুব ভোরে ফজরের নামাজ শেষে তিনিসহ কয়েকজন কমলনগরের চরঠিকা, চরকাদিরা, চরপাগলা ও চরবসুতে গিয়ে শুধু লাশ আর লাশ দেখতে পান। গাছের নিচে চাপা পড়া, গাছের ডালে ঝুলে থাকা ও বিভিন্ন স্থানে পড়ে ছিলো লাশ আর লাশ। আজও মাঝে মাঝে দৃশ্যটি তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। টানা ২৩ দিন ধরে এসব লাশ দাফন করেছেন তিনিসহ উদ্ধারকারীরা। সেদিন জলোচ্ছ্বাস আর প্রচন্ড শীতেই হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।

তিনি জানান, ভোলা সাইক্লোনের পরদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোলা জেলা থেকে লক্ষ্মীপুর আসেন। তিনি রামগতির একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। বিকেলে তিনি এসে পৌঁছান বর্তমান কমলনগরের চরলরেন্স বাজারে। মুহুর্তেই তিন থেকে চার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে পড়ে। সেদিন তিনি চরলরেন্সে অবস্থান করার কথা ছিলো না। তবুও তিনি জনতার আবদারে সেখানে ৩ মিনিটের বক্তব্য দিয়েছিলেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

লক্ষ্মীপুর,ভোলা,সাইক্লোন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close