• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

পাইকগাছায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশ:  ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৪৮
খুলনা প্রতিনিধি

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ইউ আর এইচ এস উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে একাধিক প্রার্থীর নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাসের নামে পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কাম নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগ পেতে নগদ ৭ লক্ষ টাকা প্রদান করেও চাকুরি পেতে ব্যর্থ হয়ে মোঃ মোক্তার হোসেন নামের ভুক্তভোগী এক প্রার্থী ওই মামলাটি দায়ের করেছেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই’কে (খুলনা) তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন।

যদিও সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ড উৎকোচ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক ও কর্মচারী পদে সর্বোমোট ৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

সূত্র জানায়, উপজেলার ইউ আর এইচ এস উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীসহ মোট ৫টি শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহকারি প্রধান শিক্ষক, নৈশ প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদের জন্য গত ১৩ জুলাই ২০২২ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এরপর নির্ধারিত ৫ নভেম্বর চাকরি প্রার্থীদের লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ডাকযোগে এ্যাডমিড কার্ড পাঠানো হয়। এরআগে মামলার বাদি ভুক্তভোগী মোঃ মোক্তার হোসেন নৈশ প্রহরী পদে আবেদনপূর্বক চাকুরি পেতে অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে ৭ লক্ষ টাকা প্রদানের চুক্তি করেন। সে অনুযায়ী ৩ কিস্তিতে উল্লেখিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সমুদয় ৭ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন।

এরপর পরীক্ষার আগে গত ৩ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক মোক্তারকে ডেকে চাকুরি পেতে আরো ৩ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত দাবি করেন। তবে তিনি দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে অস্বীকার করে পূর্বের প্রদেয় টাকা ফেরৎ চান। এসময় অভিযুক্ত ঐ শিক্ষক ফের তাকে চাকুরি প্রদানে পূর্ণ আশ্বাস দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন।

সর্বশেষ গত ৫ নভেম্বর পাইকগাছা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় মোক্তার হোসেনের কাঙ্খিত নৈশ প্রহরী পদে তাকে বাদ দিয়ে প্রশান্ত সরকার নামে অপর এক প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করেন।

মামলার বাদি জানতে পারেন যে, ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশান্তর চাকুরি নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর তিনি তার প্রদেয় টাকা ফেরৎ পেতে স্বাক্ষীদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট হাজির হলে তিনি তাকে ১লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করে বাকি ৬ লক্ষ টাকা পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে পরিশোধের কথা জানান।

এরপর বুধবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে বাকি টাকা নিতে পুনরায় সাক্ষীদেরসহ তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে হাজির হলে তিনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করে উল্টো তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এমনকি এ ঘটনায় বেশি বাড়াবাড়ি করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি প্রদান করেন।

মামলার বাদি ও ভুক্তভোগী মোঃ মোক্তার হোসেন জানান, চাকরি নিশ্চিত করতে তিনি চাহিদানুযায়ী সমিতিসহ পৈত্রিক জমি বিক্রি করতে বায়না পত্র ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে টাকা সংগ্রহ করে প্রধান শিক্ষককে প্রদান করেছিলেন। যদিও উৎকোচের বিনিময়ে চাকুরির প্রত্যাশা করাটা তার ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো।

বাকি টাকা ফেরৎ ও তদন্তপূর্বক শিক্ষক উত্তম দাসের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

নিযোগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও ইউ আর এইচ এস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস জানান, নিশ্চিত চাকুরির শর্তে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য মোক্তার নামের এক নৈশ প্রহরী পদে চাকরির প্রার্থীর নিকট থেকে ম্যানেজিং কমিটির সম্মতিক্রমে ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন।

তবে স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বিষটি অবগত হয়ে তার টাকা ফেরত দিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বলায় ৫ নভেম্বর পরীক্ষার আগেই তার সমুদয় টাকা ফেরত দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

নৈশ প্রহরি পদের অন্য দু’ প্রার্থী মোঃ আরিফ হোসেন ও মোঃ আতাউর রহমানকে দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে প্রক্সি দিয়ে পরীক্ষায় কোরাম পূরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে প্রার্থীদ্বয় জানান, নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা কেন্দ্র প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার দাস সুকৌশলে আমাদেরকে দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে উপস্থিতি স্বাক্ষর করান।

পাইকগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান আলী শেখ জানান, নীতিমালা অনুসরনপূর্বক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে নিয়োগ বোর্ড ও স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে সার্বিক বিষয়ে দায়িত্বে ছিলেন ডিজির প্রতিনিধি পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খালেকুজ্জামান।

নিয়োগ কমিটির ডিজির প্রতিনিধি পাইকগাছা সরকরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খালেকুজ্জামান প্রার্থীদের কাউকে চেনেন না দাবি করে বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রার্থীদের ভালো চেনেন। কোরাম পূরনে প্রক্সির বিষয়টিও মূলত তিনিই ভালো জানেন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

নিয়োগ বাণিজ্য,অভিযোগ,খুলনা,নির্দেশ,তদন্ত,মামলা,পাইকগাছা,প্রধান শিক্ষক

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close