• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সুনামগঞ্জ আ. লীগের শীর্ষ পদে সাহসী নেতৃত্ব চায় তৃণমূল

প্রকাশ:  ৩০ নভেম্বর ২০২২, ২১:৫৫ | আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ২২:০১
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ও রাজপথের বিরোধী দলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুনামগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই পদে সৎ ও সাহসী নেতৃত্বের দাবি উঠেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। আগামী ১১ ডিসেম্বরের সম্মেলনে যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে দল পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, অতীতে যারা ওয়ান ইলেভেনসহ রাজপথের বিরোধীদের মোকাবেলায় কার্যকর ও সাহসী ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে দীর্ঘদিন দলের শীর্ষ পদের বাইরে রাখায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আগামী ১১ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের শীর্ষ পদে ত্যাগী ও সাহসী নেতৃত্বের বিকল্প নেই।

জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সুয়েব চৌধুরী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির মোকাবেলায় যাদের শক্তি-সামর্থ্য ও সততা রয়েছে, তাদেরকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আনতে হবে।

জেলা ছাত্রলীগের ৮০-৯০ দশকের কয়েকজন ত্যাগী নেতা বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত মোকাবেলায় রাজপথে বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট এবং সুনামগঞ্জের বখত পরিবারের প্রয়াত পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুলসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তারা দলের দুঃসময়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। আওয়ামী লীগকে তৃণমূলে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সৎ এবং সাহসী নেতাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বাইরে রাখা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। নড়বড়ে নেতৃত্ব রেখে বিএনপি-জামায়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কিছুতেই সম্ভব নয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছি। ১৯৯৭ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমার মরহুম পিতা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষাসৈনিক হোসেন বখত। তিনি ভাষা আন্দোলনের জন্য কারাভোগ করেছেন। আমার তিন সহোদর মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এছাড়াও আমার অগ্রজ প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার বখত নেক, টানা দুইবারের প্রয়াত পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল দলকে তৃণমূলে শক্তিশালী করতে অনেক ত্যাগ ও শ্রম দিয়েছেন। আমার আরেক অগ্রজ নাদের বখত টানা দুই মেয়াদে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি করোনা ও বন্যায় মানুষের পাশে ছিলেন।

তিনি বলেন, আমি নিজেও দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সকল দুর্যোগের সময় আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের পাশে থেকেছি। ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসসহ দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তৃণমূলের বিপুল মানুষের সমাগম ঘটিয়ে কর্মসূচি পালন করেছি। আমি আশাবাদী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন এবং নেত্রী যে সিদ্ধান্তই দেবেন সেটাই মেনে নেবো।

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সুনামগঞ্জের রাজপথে সক্রিয় থেকে লড়াই করেছি। দলকে আগলে রেখেছি। তখন কোন অতিথি পাখিকে সুনামগঞ্জের রাজপথে দেখা যায় নি।

তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি ৬ বছরে সুনামগঞ্জে দু’তিনটি মিটিং করেছে। এছাড়া তাদের আর কোনো অর্জন নেই।

নূরুল হুদা মুকুট বলেন, সামনে আমাদের জন্য দুঃসময় আসছে। তাই জেলা আ.লীগকে আরো শক্তিশালী ও বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবেলা করতে দলের শীর্ষ দুই পদে পরিবর্তন আনতে হবে। তৃণমূলের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে ও যারা দলের জন্য নিবেদিত ও সাহসী নেতৃত্ব আগামীতে তাদের মূল্যায়ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাদেরকে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বে আনবেন সেটা আমরা মেনে নেবো।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, আগামী ১১ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব যাকেই দিবেন সেটাই মেনে নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মতিউর রহমানকে সভাপতি ও ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। প্রায় ছয় বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি মতিউর রহমান, সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সহ-সভাপতি নোমান বখত পলিন, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন, বর্তমান সাধারণ স¤পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত।

এছাড়াও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপির নামও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় উঠে এসেছে।

মন্ত্রীর বরাত দিয়ে তার রাজনৈতিক সচিব ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি মন্ত্রী মহোদয়কে দায়িত্ব দেন, তাহলে তিনি আনন্দের সাথে কাজ করতে রাজি আছেন।

আগামী ১১ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অতিথি থাকবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি, সহ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য মুশফিক হোসেন ও আজিজুস সামাদ ডন।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

সুনামগঞ্জ,তৃণমূল,নেতৃত্ব,শীর্ষ,আওয়ামী লীগ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close