• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

বগুড়ার তৈরি রাজকীয় ‘বেস্ত’ বিশ্বজয়ী মেসির গায়ে!

প্রকাশ:  ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৪৫
বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়া সদরের প্রত্যন্ত গ্রাম হাপুনিয়া। সেই গ্রামের ‘বেস্ত আল নূর’ কারখানায় তৈরি হয় মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের রাজা-বাদশাহ, শেখদের পরিহিত রাজকীয় পোশাক বিস্ত ও আভায়া। এবার সেই ‘বেস্ত’ বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ এর বিশ্বকাপ জয়ী দল আর্জেন্টিনার দলপতি লিওনেল মেসির গায়ে। কাতারের দোহায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তার গায়ে এই রাজকীয় পোশাকটি পরিয়ে দেন শেখ তামিম।

মূলত বিস্ত ও আভায়া পরেন শেখ’রা। তারা এটিকে রাজকীয় পোশাক ও নিজেদের বর্হিপ্রকাশে ব্যবহার করে থাকেন। বেস্ত আল নূর এর তৈরি পোশাক মেসির গায়ে পরানো হয়েছে এমন একটি পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করেছেন ওই পোশাক কোম্পানির পরিচালক রবিউল ইসলাম। তিনি বর্তমানে কাতারের দোহায় অবস্থান করছেন। চাহিদা মাফিক বেস্ত তৈরি হয় এই কারখানায়। একেকটি বেস্তর দাম ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ পর্যন্ত।

জানা যায়, বগুড়ায় তৈরি হওয়া ‘বেস্ত’ মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর রাজা-বাদশাদের ঐহিত্যবাহী পোশাক। প্রায় ১৩ বছর আগে বগুড়া সদরের এরুলিয়া হাপুনিয়া এলাকায় নিজ বাড়িতে ‘বেস্ত আল নূর’ নামে একটি কারখানা গড়ে তোলেন নূর আলম নামের একজন প্রবাসী। এবার কাতার বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়তে থাকে বেস্ত’র। সেই অনুযায়ী কারখানায় চাহিদা মাফিক বেস্ত তৈরিতে কাজ শুরু করে কর্মীরা। বিদেশি কাপড়ে হাতের কাজের নকশায় ‘বেস্ত’ তৈরি হচ্ছে।

‘বেস্ত আল নূর’ নামে কারখানায় নারী-পুরুষ মিলে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কাঁচামাল হিসেবে কাপড় থেকে পূর্ণ একটি ‘বেস্ত’ তৈরি হতে ছয়টি ধাপ পার করতে হয়। ধাপগুলো হলো বাতানা, হেলা, তোঘরোক, বুরুজ, মাসকারে, বরদাদ ও সিলালা। তারপর প্যাকেজিং করে ‘বেস্ত’ এর পূর্ণাঙ্গ রূপ হয়। এই কারখানা থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি করা হয়। এই হিসাবে এই কারখানা থেকে প্রতি বছর গড়ে ২৪ কোটি টাকার পোশাক বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ‘বেস্ত’ নকশাভেদে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বেস্ত আল নূর কারখানার দায়িত্বে থাকা লিটনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, এটা আমাদের অনেক গর্বের বিষয়। আমাদের কারখানার তৈরি বেস্ত পরেছেন বিশ্বজয়ী মেসি। মেসির গায়ে বেস্তটি পরিয়েছেন কাতারের শেখ তামিম। যা আমাদের কোম্পানির পরিচালক রবিউল ইসলাম রবিউল জানিয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দে অভিভূত।

কারখানায় কর্মরত সাকিব জানান, সৌদি, কাতারের ঐতিহ্যবাহী ‘বেস্ত’ নামক পোশাক তৈরি করেই তার পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। পুঁজি হলে তিনি নিজেই এমন পোশাক কারখানা করবেন বলে জানান।

কারখানার মালিক নূর আলম জানান, প্রায় ২০ বছর আগে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে ছিলেন। সেখানে বিশেষ ধরনের এই পোশাক তৈরি কারখানায় কাজ করেন তিনি। এক পর্যায়ে ‘বেস্ত’ তৈরিতে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। সৌদিতে থাকার কয়েক বছর পর নূর আলম কাতারে যান। সেখানেও নূর আলম এই বিশেষ ধরনের পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ শুরু করেন। পরে দেশে এসে নূর আলমসহ ১০ জন শ্রমিক মিলে বেস্ত তৈরির কাজ শুরু করেন।

নূর আলম প্রায় সময়ই এখন কাতার কিংবা সৌদি আরবে থাকেন। কাতারে তার ‘বেস্ত’ বিক্রির শোরুম রয়েছে। আর সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা দোকানে তিনি ‘বেস্ত’ বিক্রি করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বর্তমানে কাতারের দোহাতে ‘বেস্ত আল সালেহ’ নামের আরেক একটি কারখানা তৈরি করেছেন তিনি। বেস্ত আল নূর এন্টারপ্রাইজের কাতারের ব্যবসা দেখাশোনা করেন রবিউল ইসলাম রনি (সম্পর্কে নূর আলমের জামাই)।

কাতারের দোহায় অবস্থানরত রবিউল ইসলাম রনি মুঠোফোনে জানান, আমাদের কারখানায় তৈরি বেস্ত মেসির গায়ে উঠেছে এটা আমাদের জন্য অনেক গর্বের, অনেক বড় প্রাপ্তি। আমরা কখনও ভাবিনি শেখ তামিম এভাবে আমাদের তৈরি পোশাক মেসিকে পরিয়ে দেবেন।

তিনি আরও বলেন, বেস্ত তৈরির কাঁচামাল, স্বর্ণের সুতা ইত্যাদি কাতার থেকে আমদানি করতে হয়। কারণ এই মানের সুতা বাংলাদেশে বা তার আশপাশে নেই। সুতা ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক রকমের ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো সহজ করা গেলে আমাদের জন্য ভালো হতো।

বগুড়া বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুর রহমান জানান, বেস্ত বগুড়ায় তৈরি হয়। যা কাতার, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যায়। এটি অবশ্যই বগুড়ার তৈরি একটি পোশাক যা রাজা-বাদশাহরা পরিধান করেন।

তিনি আরও বলেন, ওই পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এর পাশাপাশি অন্য কোনো সহযোগিতা লাগলে বিসিকের পক্ষ থেকে করা হবে।

মেসি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close