• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মাহিয়া মাহিকে নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগে ক্ষোভ

প্রকাশ:  ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:৫৭
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

মাস দুয়েক আগেও রাজশাহী-১ (তানোর, গোদাগাড়ী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে সেই এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ ও গণসংযোগ শুরু করেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। কিন্তু হঠাৎ করে গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামের পদত্যাগের পর শূন্য হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপনির্বাচনে গণসংযোগ ও পথসভা শুরু করেন মাহি। এসময় নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা ও ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

মাহির এমন কাণ্ডে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট উপজেলায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সক্রিয় হওয়ায় তা ভালোভাবে দেখছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, আসন্ন ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকেই দেওয়া হোক নৌকার মনোনয়ন।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গোমস্তাপুর উপজেলা ও রহনপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেছেন মাহিয়া মাহি। এসময় মাহির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার স্বামী ও আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য রাকিব সরকার। গণসংযোগে তিনি নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।

হঠাৎ করেই মাহিয়া মাহির মনোনয়ন প্রত্যাশায় সক্রিয় হওয়া নিয়ে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তাই এ দলের পক্ষে যে কেউই মনোনয়ন চাইতে পারেন। আমরা আশা করি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিশ্চয় রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা বিচার বিশ্লেষণ করেই নৌকার মনোনয়ন দেবেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই দুর্দিনে যেসব ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, দলকে সংগঠিত করেছেন, এমন একজন নেতাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক। মাহিয়া মাহির সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যেমন আমাদের কাউকে চেনেন না, তেমনি আমরাও তাকে কখনো রাজনীতির মাঠে দেখিনি। নির্বাচনের এক মাস আগে হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়েছেন তিনি।

রহনপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, মাহিয়া মাহির সঙ্গে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী কোনো সংগঠনের সম্পর্ক নেই। পৌর বা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে তিনি চেনেন না। কর্মীবান্ধব আওয়ামী লীগ নেতার হাতে আমরা নৌকার মনোনয়ন দেখতে চাই। আমরা মাহির সঙ্গে নেই। যেসব নেতা আমাদের পাশে ছিলেন, আমরাও তাদের সঙ্গে আছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক সদস্য বলেন, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া আওয়ামী লীগের জন্য বিপদ সংকেত হিসেবেই আমরা মনে করি। এখানে অনেকেই রয়েছেন, যারা নিজ নিজ কর্মগুণে দলে সক্রিয় অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আশা করি, তাদের মধ্যেই কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, মানুষ রাজনীতিকে আলু-পটলের মতো পণ্য মনে করছে। যেটা ইচ্ছে হলে বাজারে গিয়ে কিনে নেওয়া যায়। রাজনীতিকে এমনটা মনে করা উচিত নয়। এমনটা হলে রাজনীতিবিদদের রাজনীতি করার দরকার নেই। রাজনীতি করার একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া রয়েছে। তা অনুসরণ করে মাহিয়া মাহি আওয়ামী লীগে আসার পর এসব কর্মকাণ্ড করলে তা মানানসই ছিল। যেসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় তাদের নৌকার মনোনয়ন দিলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।

গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে যে কারো নৌকার মনোনয়ন চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। মাহির গণসংযোগ ও পথসভা শুরুর পর থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমাদের তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

এ নিয়ে কথা বলতে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহা. জিয়াউর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ রুহুল আমিন মুঠোফোনে বলেন, নৌকার মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করে। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন, আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।

এ নিয়ে মাহিয়া মাহির স্বামী রাকিব সরকার মুঠোফোনে বলেন, এই মুহূর্তে কথা বলা সম্ভব নয়। একটি গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত এক ডজনের অধিক নেতা। মাহিয়া মাহি ছাড়াও এদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল আলম সৈকত জোয়ার্দার, ভোলাহাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ, আওয়ামী লীগ নেতা খুরশিদ আলম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান লিংকন, নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা বেগম, গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ন রেজা, ভোলাহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাব্বুল হোসেন, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শওকত আরা।

মাহিয়া মাহি কিছুদিন আগেই ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী বিভাগের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল,গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট) আসন শূন্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ১১ ডিসেম্বর সংসদের স্পিকারের নিকট বিএনপি দলীয় ৬ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরের দিন জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। ফলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থেকেই নির্বাচন কমিশন দেশের ছয়টি আসনে ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন ঘোষণা করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জিয়াউর রহমান নৌকা প্রতীকে এক লাখ ৩৯ হাজার ৯৫২ ভোট পেয়ে হেরে যান। এবার আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করায় উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন মাহিয়া মাহি। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন মাহি।

মাহিয়া মাহি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close