• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মাহির সঙ্গে ‘ছবি তোলায়’ চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকি এমপির

প্রকাশ:  ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ২১:২৮
রাজশাহী প্রতিনিধি

রাজশাহীতে এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে আলোচনায় আসা রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী এবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক অনুষ্ঠানে অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সামনে এ হুমকি দেন তিনি।

ভুক্তভোগী চেয়ারম্যানের নাম সোহেল রানা। তিনি গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সোহেল রানা জানান, তিনি ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ সম্প্রতি ঢাকায় ছিলেন। সেখানে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এ সময় তারা ছবিও তোলেন। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখেই তার ওপর চটেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী।

চেয়ারম্যান সোহেল রানা আরও জানান, মঙ্গলবার উপজেলা কৃষি অফিসের একটি অনুষ্ঠান ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রও মঞ্চে ছিলেন। অনুষ্ঠানে যান গোদাগাড়ীর ৯টি ইউপির চেয়ারম্যানও। তবে এমপির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় বলে তিনি মঞ্চে ওঠেননি। দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে এমপি তার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি এমপিকে সালাম দেন। সালামের উত্তর না দিয়ে এমপি বলে ওঠেন, ‘এই ব্যাটা এই দিকে আয়’।

সোহেল রানা বলেন, ‘‘এমপি মহোদয়কে আমি আগে থেকেই কাকা বলে ডাকি। তিনি ডাকলে আমি এগিয়ে গিয়ে হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত বাড়াই। কিন্তু তিনি আমাকে গালি দিয়ে বলেন, ‘নায়িকা মাহি কে? তার সঙ্গে ছবি তুলিস? আমি তোকে দেখেই ছাড়ব’।”

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মঙ্গলবার দুপুরে মাতৃত্বকালীন ভাতাবিষয়ক উপজেলা পরিষদের একটি সভায় অংশগ্রহণ শেষে অন্য কয়েকজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে মাটিকাটার চেয়ারম্যান সোহেল রানাও ভবনের নিচে নামছিলেন। ওই সময় উপজেলা পরিষদ ভবনের নিচে কৃষকদের মাঝে সার বীজ বিতরণ সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন এমপি ফারুক।

চেয়ারম্যানরা তাকে সালাম দিতে গেলে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে চেয়ারম্যান সোহেল রানাকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। এমপি ফারুক বলেন, ‘তোকে আমি ফিনিশ করে ছাড়ব। তোর পেটে পা চাপিয়ে খতম করে দেব। তুই খুব বেড়ে গেছিস। তুই তোর কোন কোন বাপের সঙ্গে চলিস আমি সব জানি। তোকে আমি ছাড়ব না।’ একপর্যায়ে সোহেল রানাকে মারতেও তেড়ে যান তিনি। এ সময় অন্য চেয়ারম্যানরা তাকে রক্ষা করেন।

ভুক্তভোগী চেয়ারম্যানের অভিযোগ, এমপি ফারুকের মালিকানাধীন থিম ওমর প্লাজায় তার (চেয়ারম্যান) রেজিস্ট্রি করা একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি সেখানে ভয়ে যেতে পারেন না। থিম ওমর প্লাজায় তিনি একটি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন। সেই দোকান ছেড়ে দিলেও জামানতের সাড়ে ৩ লাখ টাকা ফেরত পাননি। ছাত্রলীগের ছেলেদের দিয়ে এমপি কিছুদিন আগে তাকে হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি পরিষদে যেতে পারছিলেন না। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এখন অফিসে যেতে পারছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে। তবে তার জন্ম রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালায় তার নানা বাড়িতে। রাজশাহী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে সম্প্রতি তিনি মাঠে নেমেছিলেন।

তবে মঙ্গলবার থেকে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর) আসন থেকে আসন্ন উপনির্বাচনে অংশ নিতে গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপির এমপি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়েছে।

তবে সোহেল রানার সঙ্গে আগে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পর্ক ভালোই ছিল। রাজশাহী নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপির মালিকানাধীন ‘থিম ওমর প্লাজা’ থেকে তিনি ফ্ল্যাটও কেনেন। কিন্তু সোহেল রানা এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়ান। তখন থেকেই এমপির সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

সোহেল রানাকে হুমকি ও গালির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘ও (সোহেল) একটা মাদকব্যবসায়ী। সে আমার কাছে আসছিল। আমি তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু ঘটনা আসলে সেখানে ঘটেনি।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাইয়ে নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেধড়ক মারধর করেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এ নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি করে। তদন্তে অধ্যক্ষকে মারধরের সত্যতা পায় কমিটি।

রাজশাহী,মাহিয়া মাহি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close