• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হাড়ভাঙার চিকিৎসা নিতে গিয়ে 

কিডনি খোয়ানোর অভিযোগে চিকিৎসকেরা জানালেন ‘বোন-গ্রাফট’

প্রকাশ:  ০৩ মার্চ ২০২৩, ১৯:৫৭
সিলেট প্রতিনিধি

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাড়ভাঙার চিকিৎসা নিতে গিয়ে কিডনি খোয়ানোর অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেছেন এক ব্যক্তি। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, হাড় জোড়া দিতে ওই ব্যক্তির শরীরের অন্য জায়গা থেকে হাড় সংগ্রহ করে লাগানো হয়েছিল। চিকিৎসাশাস্ত্রে সেটিকে ‘বোন-গ্রাফট’ বলা হয়। অর্থোপেডিকস বিভাগের অস্ত্রোপচারে কিডনি অপসারণের সুযোগ নেই।

বুধবার সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন কানাইঘাটের ফতেহগঞ্জের বাসিন্দা খছরু মিয়া। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানা-পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান শংকর কুমার রায় বলেন, ওই রোগীর ‘বোন-গ্রাফট’ করা হয়েছিল। এটি কমন প্রসিডিউর। এ ছাড়া অর্থোপেডিকস বিভাগের অস্ত্রোপচারে কিডনি অপসারণের সুযোগ নেই। এর বাইরে ওসমানী হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় না, এটিও বড় বিষয়।

খছরু মিয়ার অভিযোগ ছিল, প্রায় এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে বাঁ হাতের অস্ত্রোপচারের সময় তার বাঁ দিকের কিডনি অপসারণ করে নেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর থেকে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কোনো কাজ করতে পারছেন না। পাশাপাশি প্রস্রাব ও মলত্যাগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। অসুস্থতার ব্যাপারে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে বিস্তারিত জানালে তারা চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতেন। পরে গত ১৫ জানুয়ারি জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করে নিশ্চিত হন, তার বাঁ দিকের কিডনি নেই। আর্থিক সুবিধার জন্য চিকিৎসকেরা তাঁর কিডনি অপসারণ করে নিতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন খছরু মিয়া।

জৈন্তা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাম করা চিকিৎসক কাউসার আহমদ বলেন, খছরু মিয়া নামের ওই রোগীর আলট্রাসনোগ্রামের প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাঁ দিকের কিডনি ‘নট সিন’। প্রতিবেদনে তিনি কিডনি নেই উল্লেখ করেননি। লিখেছেন দেখা যায়নি। আলট্রাসনোগ্রামে অনেক সময় কিডনি দেখা না–ও যেতে পারে। গ্যাস বা ভরা পেটের কারণেও এমনটি হতে পারে। কিডনি না থাকলেও সেটি হতে পারে।

খছরু মিয়া বলেন, হাতের হাড় ভাঙার অস্ত্রোপচারের আগে তার শারীরিক কোনো সমস্যা হয়নি। প্রস্রাব ও মলত্যাগ স্বাভাবিক ছিল। তিনি হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে হাঁটাচলা করতে পেরেছেন। তবে অস্ত্রোপচারের পর শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কাজ করা দূরের কথা, ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারছেন না।

খছরু মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, স্বামী দিনমজুর। গাছের ডাল কাটতে গিয়ে পড়ে হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ফতেহগঞ্জে স্বামীর বাড়ি হলেও তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাবার বাড়ি জকিগঞ্জে থাকেন। স্বামী খছরু মিয়া মাঝেমধ্যে জকিগঞ্জে যাওয়া-আসা করেন।

নাজমা আরও বলেন, স্বামীর অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। হাতের অস্ত্রোপচারের পর পেটের অস্ত্রোপচারের বিষয়টি নজরে এলে চিকিৎসকদের কাছে কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তখন চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, সেখান থেকে একটি হাড় নেওয়া হয়েছে। মামলায় ‘শিরা’ উল্লেখ করার বিষয়ে তিনি বলেন, একজন বলছিলেন শিরা নেওয়া হয়েছে।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোন-গ্রাফট’–এর মাধ্যমে এক জায়গা থেকে হাড় নিয়ে ভাঙা জায়গা জোড়া লাগানো হতে পারে। অস্ত্রোপচারে এমনটি করা হয়। এর আগে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। কিডনি অপসারণ করা হলে প্রস্রাব ও মলত্যাগে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অনেকের জন্মগতভাবে একটি কিডনি থাকতে পারে বা একটি কিডনি ছোট হতে পারে। তিনি বলেন, যিনি কিডনি অপসারণের অভিযোগ তুলেছেন, তিনি ভালো যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করালে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে জানা যাবে।

ওসমানী হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান শংকর কুমার রায় বলেন, ওই রোগী তার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে অস্ত্রোপচারে তিনি ছিলেন না। বোন-গ্রাফটিংয়ের ক্ষেত্রে ২১ দিন বা ১ মাস হলে সাধারণত অস্ত্রোপচার করা হতে পারে। ওই রোগীর ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছিল বলে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন।

বিষয়টি রোগীর স্বজনদের জানানো হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে শংকর কুমার রায় বলেন, হাসপাতালের কাগজপত্রে ‘বোন-গ্রাফটের’ বিষয়টি উল্লেখ আছে। অনেক সময় অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুততার সঙ্গে নিতে হয়। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে দেখা যায়, হাড়গুলো গুঁড়া গুঁড়া হয়ে গেছে। সেটি জোড়া লাগানোর জন্য ‘বোন-গ্রাফটিং’ করে অন্য স্থান থেকে হাড় নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের টেবিলেই রোগীর স্বজনদের সেটি জানানো হয়। খছরু মিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়ে থাকতে পারে।

শংকর কুমার রায় আরও বলেন, অস্ত্রোপচারের আগে ‘জিএ ফিটনেস’ নামের একটি পরীক্ষা করা হয়। এতে হৃদ্‌যন্ত্র থেকে শুরু করে ফুসফুস, কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, দেখা হয়। ‘বোন-গ্রাফটিং’ অনেক বড় অস্ত্রোপচার। এরপর শারীরিকভাবে যে কারও দুর্বল লাগতে পারে।

সিলেট

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close