অভিভাবকদের পা ধরানো সেই বিচারকের অডিও ফাঁস
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (ভিএম স্কুল) প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নিয়ে দুই অভিভাবককে বিচারকের পা ধরতে বাধ্য করার ঘটনার একটি অডিওক্লিপ ফাঁস হয়েছে; যা এখন সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল।
যেখানে রুবাইয়া ইয়াসমিন নামের ওই বিচারককে বলতে শোনা গেছে- ‘জজ মানে জানিস তুই, জজ শব্দ বানান করতে পারবি তুই?’
সম্পর্কিত খবর
গত ২১ মার্চ ভিএম স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনের কক্ষে দুই ছাত্রীর অভিভাবককে পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপরই বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়।
তার কয়েকদিন পর বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন একটি লিখিত বক্তব্যে নিজের দোষ অস্বীকার করেন। সেই বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, এই বিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে জজের মেয়ে বলে নানাভাবে অপদস্থ করছিল সহপাঠীরা। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, তার মেয়ে সহপাঠীদের বুলিংয়ের শিকার হয়েছে এবং ওইদিন অভিভাবকদের কাউকে পা ধরতে বাধ্য করা হয়নি।
তবে ভাইরাল অডিওক্লিপ বলছে একেবারে ভিন্ন কথা। ওই অডিওতে স্পষ্ট উঠে এসেছে সেদিনের পরিস্থিতির চিত্র। সেদিনের কথোপকথনে রুবাইয়ার আচরণ ছিল আক্রমণাত্মক। অডিও ক্লিপটিতে রুবাইয়া ইয়াসমিনকে উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শাসাতে শোনা যায়। এক শিক্ষার্থীকে থাপড়ে সব দাঁত ফেলে দেবেন বলেও হুমকি দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘জজ মানে জানিস তুই, জজ শব্দ বানান করতে পারবি তুই? বানান করে লিখে দেখা!’
তার এমন ব্যবহারে ভড়কে যান শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। এ সময় এক অভিভাবক বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করলে শিশুদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন জজ রুবাইয়া ইয়াসমিন।
সরকারি স্কুল সম্পর্কেও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায় বিচারককে। সে সময় তার সঙ্গে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা এ বিষয়টির পরিণাম সম্পর্কে উপস্থিত ছাত্রী ও অভিভাবকদের সতর্ক করতে থাকেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্য কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর কথা শোনা যায় অডিওতে। জজের মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার বদলে এমন ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধান শিক্ষিকা।
এদিকে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের দেওয়া লিখিত বিবৃতির সঙ্গে ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডের কোনো মিল না থাকায় নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এরই মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এ বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়া নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের তর্ক হয়। এ নিয়ে ওই রাতে সহপাঠীদের ‘বস্তির মেয়ে’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয় বিচারকের মেয়ে। ওই পোস্টে চারজন সহপাঠী পাল্টা জবাব দেয়। এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াছমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে ওই চার শিক্ষর্থীর অভিভাবকদের ডাকতে বলেন।
পরদিন ২১ মার্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াছমিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গালাগাল করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে ভরার হুমকি দেন। এ সময় দুজন অভিভাবক ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন।