• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

দখলে-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে কমলনগরের চরঠিকা খাল

প্রকাশ:  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

লক্ষ্মীপুর কমলনগরের ফজুমিয়ারহাট বাজারের চরঠিকা খালটি বেদখল প্রক্রিয়ায় পড়ে আপন অস্তিত্বই হারাতে বসেছে। খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। বাজারের ময়লা আর্বজনা ফেলে খালটি ব্যবহার অযোগ্য করে তোলা হয়েছে। এতে বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

সম্পর্কিত খবর

    খোদ প্রশাসনেরই হিসেব মতে, শতাধিক দখলদারের কব্জায় রয়েছে খালটি। কিন্তু খালটি উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতাই নেই। ফলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অনেক অভিযোগ। অবশ্য উপজেলা প্রশাসন বলছে, খালটি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে।

    খালপাড়ের বসত বাড়িতে যাতায়াতের জন্য খালভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এভাবে খালটিকে পরিণত হয়েছে নালায়। এক সময়ের স্বচ্ছ পানির খালটি এখন প্রায় মৃত। এতে বর্ষা মৌসুমেও জলাবদ্ধতার দেখা দেয়। ব্যাহত হচ্ছে ফসলি জমির চাষাবাদ।

    স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীরা খালটি দখল করে সেটিকে মৃত বানিয়ে ফেলেছে। স্থানীয়দের দাবি, খালের উপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পুনঃখনন করলে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে। সেই সাথে উপকৃত হবেন কৃষকরা।

    জানা যায়, আশির দশকে এই খালটি খনন করেছিলো সরকার। পরবর্তীতে এটি চরঠিকা খাল নামে পরিচিত লাভ করে। তখন এ খালের পানি দিয়ে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে কৃষির আবাদ হতো। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশন হতো এ খাল দিয়ে। কিন্তু গেলো ৪০ বছরের ব্যবধানে খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

    ফজুমিয়ারহাট বাজার অংশে থাকা খালের উপর তৈরি হয়েছে অবৈধ স্থাপনা, আর উত্তর অংশে গড়ে উঠেছে বসতি। এতে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে খালটি।

    স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদ, নবী উল্যা, মিজান ও সিরাজ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমলনগরের একটি গ্রামকে শহর ঘোষণা করেছে সরকার। সেটি চরকাদিরা ইউনিয়নের চারঠিকা গ্রাম। কিন্তু এ গ্রামের নামে চরঠিকা খালটি এখন দখলবাজদের কবলে। ফজুমিয়ারহাট বাজারের যাবতীয় ময়লা আর্বজনা এ খালে ফেলা হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে গোটা পরিবেশ। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাজারের মধ্যে থাকা খালের উপর দোকানপাট নির্মাণ করে খালের জমি দখল করে নিয়েছে। বাজারের উত্তর-পূর্ব অংশে দখলদাররা ঘর বাড়ি তৈরি করে ফেলছে। এতে বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটসহ মানুষের বাড়িতে পানি উঠে যায়। এ গ্রামকে শহরের রূপান্তর করতে হলে খালটি অবশ্যই দখলমুক্ত করতে হবে।

    চরঠিকা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, খালের মধ্যে থাকা বাজারের ময়লা-আর্বজনা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালের পাড় দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটাই যায় না। নাক বন্ধ করে হাঁটতে হয়।

    সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক নুরনবীসহ অনেকে বলেন, এক সময় খালের পানি দিয়ে আমরা বোরো ধানের আবাদ করতে পারতাম। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে এখন এ খালে পানি ঢুকতে পারে না। খালের উপর বসত বাড়ির চলাচলের পথ তৈরি করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই বোরো আবাদ হয় না। আবার বর্ষাতে খালের দু'পাড়ে থাকা ফসলি জমির পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। এতে আমন চাষাবাদও ব্যাহত হচ্ছে। তাই খালটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।

    কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল্লাহ মুরাদ বলেন, খাল দখল ও দূষণের কারণে প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দখল ও দূষণমুক্ত হলে অন্তত এক হাজার হেক্টরের বেশি জমি বোরো ধানের চাষাবাদের আওতায় আসবে।

    কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, খালের উপর থাকা শতাধিক অবৈধ দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন তারা।

    খাল পুনঃখননের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close