• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

কেনা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির তালিকায় খুলনা মেডিকেলের ২০ শিক্ষার্থী!

প্রকাশ:  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪২ | আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৭
শেখ নাদীর শাহ্,খুলনা প্রতিনিধি

২০০৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বছরে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে নামিদামি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত শিক্ষার্থী। নগদ টাকায় কেনা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম সারীর মেডিকেল কলেজগুলোর সঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজেও ভর্তির সুযোগ মিলে যায় বহু শিক্ষার্থীর। চিকিৎসা শিক্ষার এমনসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির তদন্তে।

এমনকি সিআইডির অপরাধ তদন্ত বিভাগ এরই মধ্যে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে মেডিকেলে ভর্তি হওয়া দু' শতাধিক শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করেছেন। ওই সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজের ২০ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন কলেজে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ফলও সংগ্রহ করছেন সংস্থাটি। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি খুলনা মেডিকেল কলেজের সাবেক তিন শিক্ষার্থীকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া কে বলেন, তদন্তে বহু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জোগাড়ে কাজ চলছে। এমনকি বিভিন্ন মেডিকেলে চিঠি পাঠানোও সেই কাজেরই অংশ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে আর সেগুলো সঠিকভাবে যাচাই করা হচ্ছে।

মেডিকেল কলেজে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, তালিকায় থাকা সেই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এবং খুলনা মেডিকেল কলেজে পাঠানো পৃথক দুটি চিঠিতে ২২ শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে খুলনা মেডিকেলের তিন শিক্ষার্থীকে ইতোমধ্যে মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। অন্যরাও সিআইডির নজরদারিতে রয়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, তালিকায় থাকা খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুলনার আশিকুজ্জামান সানি ভর্তি হয়েছিলেন ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে। মেধা তালিকায় ৬০১তম হলেও তিনি ২০২২ সালের মে মাসে চূড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফেল করেন। এরপর আর পরীক্ষায় অংশ নেননি। অপরজন পিরোজপুরের মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেধা তালিকায় ১১তম হয়ে ভর্তি হলেও প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় ২০১৭ সালে অ্যানাটমি ও ফিজিওলজিতে ফেল করেন। দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষা ২০১৮ সালে মেডিসিনে ফেল করেন। যদিও ২০২১ সালের চূড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস করেন তিনি।

খুলনার আনিকা তাহসিন জেসি ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মেধা তালিকায় ১৮২৩তম হয়ে ভর্তি হন। ২০২০ সালের নভেম্বরে পাস করেন তিনি। খুলনার শর্মিষ্ঠা মণ্ডল ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ১৮২৩তম হয়ে ভর্তি হন। পাস করেছেন ২০২২ সালে। খুলনার আসমাউল হুসনা নিহা ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২২৪১তম হয়ে ভর্তি হন। পাস করেছেন ২০২২ সালে। খুলনার নূরে মার্জিয়া ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২১১০তম হয়ে ভর্তি হন। ২০২০ সালে তিনি চূড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস করেন। যশোর সদরের ফারিহা ইসলাম ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। পাস করেছেন ২০২১ সালে।

অপরজন খুলনার রেমী মণ্ডল ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে পাস করেছেন ২০২১ সালের নভেম্বরে। খুলনার নাজিয়া মেহজাবীন ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ১৩৫৬তম হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। পাস করেছেন ২০২১ সালের মে মাসে। খুলনার মো. সোহানুর রহমান বিশ্বাস ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। মেধা তালিকায় তিনি ছিলেন ২১৯৫তম। ২০২২ সালের মে মাসে চূড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করলে গত নভেম্বরে আবার পরীক্ষা দিয়েছেন। যার ফল এখনো প্রকাশ হয়নি। রাজশাহীর আরাফাত হোসেন ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ২০৯২তম হয়ে ভর্তি হন। ২০২২ সালের চূড়ান্ত প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফেল করেন। নভেম্বরে আবার পরীক্ষা দিয়েছেন। তারও পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২০ আগস্ট প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত খুলনার পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তাদের মধ্যে উপরোক্ত শিক্ষার্থীদের তালিকার তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন, নাজিয়া মেহজাবীন, শর্মিষ্ঠা মণ্ডল ও মুসতাহিন হাসান লামিয়া।

তারআগে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ছাত্রদের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিকবনে যাওয়ার অভিযোগে খুলনার বিতর্কিত থ্রি ডক্টরসের মালিক ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খান তারিমকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এমনকি তার কোচিং সেন্টারের এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হলেও পড়েননি বলে দাবি করেছেন খুলনা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের তালিকায় থাকা আসমাউল হুসনা নিহা।

আর কেনা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে আসমাউল হুসনা নিহা নামের ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানান, ‘তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। খুলনার থ্রি ডক্টরসের ডা. তারিম স্যারের কাছে পড়েননি বলে দাবি করেন তিনি। তার দাবি, তারিম স্যারের থ্রি ডক্টরসের এক্সাম ব্যাচে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তবে সেখানে যাননি। তিনি তাদের কলেজের সিনিয়রদের কাছে পড়েছেন, এমনকি তারা প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় কখনো জড়িত নয় দাবি করে বলেন, এসব কথা যাদেরকে বলার তাদের বলে দিয়েছেন তিন।

এব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. দীন-উল ইসলাম বলেন, ‘১১ শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে তাদের একাডেমিক বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল সিআইডি। কলেজ সঙ্গে সঙ্গে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে পাঠিয়েছে। আর তারা যখন সিআইডিকে তথ্য পাঠিয়েছিলেন ওই সময় আটজন পাস করে বের হয়েছিল। বাকি তিনজনের ফল প্রকাশ তখনো বাকি ছিল। তারা সময়মতো পাস করতে পারেননি বলেও জানান তিনি।

তিনিসহ মেডিকেলের কেউই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে সমর্থন করেননা দাবি করে বলেন, যেখানে একটা ছেলেমেয়ের সারা জীবনের স্বপ্ন থাকে যে, সে মেডিকেলে পড়বে। ছোটবেলা থেকেই সেভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। অনেক পরিশ্রম করতে হয় তাদের। আর এসব না করে কেউ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিনে তাকে বাইপাস করে এগিয়ে যাবে, ভর্তি হবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর এভাবে যদি বিতর্কিত ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় তাহলে ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়। আর তাদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া উচিত। তবে যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ওইসকল শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে, তাদের আরও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

প্রশ্নফাস

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close