• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

৩ বছরেও হয়নি ভবন, প্রতিকূল পরিবেশে ভোগান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ:  ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:০৮
জামাল উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রায় ৩ বছর আগে ভেঙে ফেলা হয় স্কুল ভবন। তখন থেকে 'রোদ হলে ঝরে ঘাম, বৃষ্টি হলে ঢুকে পানি' এমন অবস্থায় টিনশেড ঘরে চলছে পাঠদান। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। যার ফলে দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ছোট-ছোট শ্রেণি কক্ষে পাঠদান দিতে চরম হিমশিম খেতে হয় শিক্ষকদের।

অন্যদিকে স্কুলটি একটি পাকা রাস্তার পাশে অবস্থিত। সীমানা প্রাচীর না থাকায় সুপারি গাছ ও বাঁশ দিয়ে কোন রকম সীমানা প্রাচীর দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবুও যেকোনো সময় সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এমন স্কুলটি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। স্কুলের নাম দক্ষিণ হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়ের জমি ৩৫ শতাংশ। কিন্তু খতিয়ানভূক্ত মাত্র ১৫ শতাংশ। বিদ্যালয়টি ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয়েছে। ২০১৩ সালে এসে জাতীয় করণ করা হয়। পরে ২০২০ সালে এসে উপজেলা শিক্ষা অফিস বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই সালেই ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলটি ভেঙে ফেলা হয়। বিদ্যালয়ে মাত্র ৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জন বালক ও ৪৯ জন বালিকা। নতুন একটি ভবনের আশ্বাসে এভাবে দীর্ঘ ৩টি বছর ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ৪ কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড ঘরে পাঠদান দেওয়া হয়। বৃষ্টি আসলে পাঠদান নিয়ে কষ্ট হয়। রোদ-গরমে ঘাম ঝরে। এমন অবস্থায় ক্লাস করতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। গরমের কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসতেও চান না। দ্রুত একটি নতুন ভবন হলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সুবিধা হতো।

স্কুলের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ও আয়েশা আক্তারসহ কয়েকজন জানায়, রোদে-গরমে ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পানি ঢুকে। তাদের একটি খেলার মাঠ নেই। অন্যান্য স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। আমাদের স্কুলে কম। তাই খেলার সাথিও তেমন নেই।

স্থানীয়রা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, নিয়ম হচ্ছে নতুন একটি ভবন আগে বরাদ্দ দেওয়া। তারা সেটা না করে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ঘোষণা করে ভবন ভেঙে নিয়ে গেছে। এ ৩ বছর ধরে শুনে আসলাম প্রতি বছর জুন মাসে নতুন বিদ্যালয় হবে। এভাবে ৩টি বছর শেষ। ভবন না থাকায় স্থানীয় ছেলে-মেয়ে গুলো অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক প্রীতু সাহা এ্যানি জানান, ৩ বছর ধরে ভোগান্তির শেষ নেই। পড়ন্ত রোদে ক্লাস নিতে বিরক্তিকর লাগে। ঝড়-বৃষ্টিতে তেমনি ক্লাস নিতে আরো, দুর্ভোগে পড়তে হয়। এছাড়াও দিনদিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা একেবারে কমে যাচ্ছে। নতুন একটি ভবনের আশায় আমরা আছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন মোবাইলফোনে বলেন, প্রায় ১ বছর হলো বোর্ড কর্তৃক আমাকে বিদ্যালয়টিতে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আমার বাড়ি রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে। এ জন্য সবসময় আমার যাওয়া সম্ভব হয় না। স্কুলটি অনেক সমস্যায় জর্জরিত। একটি ভবনের জন্য প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার আবেদন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ভবন দেওয়া হয়নি।

প্রধান শিক্ষক গৌরী রায় চৌধুরী বলেন, পুরনো বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ভেঙে ফেলা হয়। নতুন একটি ভবনের অপেক্ষায় রইলাম দীর্ঘ ৩ বছর ধরে। তবে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ হয়নি কোনো ভবন। তাই বাধ্য হয়ে টিনশেড ঘরে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে আবার প্রায় প্রতিদিনই কমছে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ১টি নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এমনটাই দাবি সকল শিক্ষকদের।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল লতিফ মজুমদার জানান, আমি নতুন। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে বিদ্যালয়ের নাম তালিকাভুক্ত করে নতুন ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

দুর্ভোগ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close