• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ধান ক্ষেতের পোকা দমনে পরিবেশ বান্ধব আলোক ফাঁদের ব্যবহার

প্রকাশ:  ১২ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:১৪
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি

নওগাঁর কৃষকদের কাছে আমনধানের ক্ষতিকর পোকা-মাকড় চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জনপ্রিয় একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতির নাম হচ্ছে আলোক ফাঁদ। দিন দিন উপজেলার কৃষকরা এই কৃষিবান্ধব পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ব্যবহার।

ধানে ক্ষতিকর পোকার অধিকতর আক্রমনের আগেই চিহ্নিত করে কম খরচে অল্প পরিমাণে বালাইনাশক প্রয়োগ করার পাশাপাশি কমছে কীটনাশকের ব্যবহার। এতে করে কম খরচে ফলন বেশি হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।

বর্তমানে জেলার ১১টি উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে ও উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় এই আলোক ফাঁদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা মোতাবেক একযোগে সারা দেশের সঙ্গে প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমন ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি যাচাইয়ের জন্য এই আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রয়োজনের তাগিদে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এই আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় জেলার রাণীনগর উপজেলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কুজাইল মাঠে আলোক ফাঁদ স্থাপন এবং কৃষক উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. ফারজানা হক, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবীব রতন, আতিকুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য জাকিয়া সুলতানা বর্না, কৃষক রফিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

সরেজমিনে রাণীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেতের আইলে কোথাও পানি ভর্তি পাত্রে, কোথাও কাগজের উপড় আলো জ্বেলে ধানে আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কৃষকরা নিজেই জমিতে এই পোকাগুলোর উপস্থিতি দেখে ধান ক্ষেতে পোকার অধিকতর আক্রমণের আগেই কোন ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে তা খুব সহজেই নিরূপন করে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে পরিমাণ মতো সেই বালাইনাশক জমিতে প্রয়োগ করতে পারছেন। এতে করে পোকার আক্রমনের আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছেন উপজেলার কৃষকরা। এই আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে উপজেলার কৃষকরা বর্তমানে আমন ক্ষেতে খুব কম ঔষধ ব্যবহার করছেন। এতে কৃষকদের খরচ অনেকটাই কমে আসছে এবং ধানের উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এবার আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১লাখ ৯০হাজার হেক্টর জমিতে আমনধানের চাষ হয়েছে। জেলার প্রতিটি কৃষি অফিসের অনুপ্রেরনায় কৃষকরা বর্তমানে এই পরিবেশ বান্ধব “আলোক ফাঁদ” পদ্ধতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা সহজেই আমন ধানের শত্রু বিভিন্ন পোকা চিহ্নিত করে স্ব স্ব এলাকার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তা নিধন করতে পারছেন। এতে করে আমন ক্ষেত পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলার কুজাইল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম, বাবু বলেন, আমরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে অনেক উপকৃত হচ্ছি। খুব সহজেই ধানের শত্রু কারেন্ট পোকা, বাদামী গাছ ফড়িংসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকাগুলোর উপস্থিতি টের পেয়ে খুব সহজেই সেই পোকা নিধনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি। এতে করে হুটহাট ভাবে বালাইনাশক প্রয়োগ না করার কারণে খরচও অনেকটাই কমে এসেছে। এটা পরিবেশ বান্ধব একটি পদ্ধতি। আমরা অনেক উপকৃত হতে পারছি।

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন বর্তমানে এই পদ্ধতিটি উপজেলার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু আলোক ফাঁদই নয় আমন ধান রক্ষায় এলাকায় এলাকায় চলছে কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকার আক্রমন থেকে কিভাবে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায় এবং কিভাবে দমন করা সম্ভব সেই বিষয়গুলো সম্বলিত সচেতনতামূলক লিফলেটও বিতরন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. ফারজানা হক জানান, এটি একটি সহজলভ্য জৈব পদ্ধতি। কৃষকরা যদি এই পদ্ধতিটি আমন মৌসুমে অব্যাহত রাখেন তাহলে একদিকে তাদের ধান উৎপাদনে খরচ কম হবে এবং অপরদিকে ধানের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে এই পদ্ধতি ব্যবহারে কীটনাশকের ব্যবহার কম হওয়ায় পরিবেশও ক্ষতির হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাচ্ছে। এমন পদ্ধতি ব্যবহারে সব সময় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আসছি।

এছাড়াও আমরা কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক অব্যাহত রেখেছি। আমরা প্রতিনিয়তই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। কৃষকরা ভালো ভাবে আমন ধান ঘরে না তোলা পর্যন্ত কৃষি বিভাগের এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।

কৃষি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close