• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

শয্যা সংকটে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল, চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

প্রকাশ:  ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৫১
জামাল উদ্দিন , লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ১০০ শয্যা বিশিষ্ট। এ হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন প্রায় ৪ শতাধিক। শয্যা সংকটে প্রতিটি ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও র‍্যাম্প সিঁড়িতে বিছানা পেতে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন রোগীরা। আবার মশারি ছাড়াই ডেঙ্গু আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে রোগীর চাপে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরজমিনে সদর হাসপাতাল গেলে এসব চিত্র চোখে পড়ে।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, শয্যা বাড়ানোর আগে জনবল নিয়োগ প্রয়োজন। কারণ ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও জনবল রয়েছে প্রায় ৫০ শয্যার। এখানে ৩ জন সিনিয়র কনসালটেন্টসহ ৯ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। নার্সও রয়েছেন ১৮ জন কম। টিকেট কাউন্টারে ৮ জন কাজ করলেও কেউই সরকারি কর্মচারী নয়। বিশাল এ হাসপাতালে দুইজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকলেও একজন অসুস্থ। অন্ততপক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদে লোক নিয়োগ খুবই জরুরি। যদি কর্মচারীদের নিয়োগ সম্পন্ন হয় তাহলে হাসপাতালে যে চিকিৎসক রয়েছেন তাদের দিয়েই আপাতত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জনবল কম থাকলেও রোগীদের সেবা নিশ্চিত করে গত ৫ বছর ধরে দেশের শীর্ষ স্থানে রয়েছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য ২৩ জন চিকিৎসক, ৮৪ জন নার্স ও বিভিন্ন পদে ৪১ জন মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, মেডিসিন ও ইএনটিসহ ৯ জন চিকিৎসক, ১৮ জন নার্স ও বিভিন্ন পদে ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের ১৪৮ পদের মধ্যে ৪৩টি শূন্য থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা। সোমবার হাসপাতালটিতে ৪৩৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭৩ জন রোগীও রয়েছেন।

সরেজমিনে হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা, গাইনি, শিশু ও ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে বিপুলসংখ্যক রোগী দেখা যায়। প্রতিটি ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দার মেঝে ও র‍্যাম্প সিঁড়ির মেঝেতে বিছানা করে রোগীদেরকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এরমধ্যে অনেক স্থানেই বৈদ্যুতিক পাখা নেই। গরমে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। মানুষের হাটাচলা আর ধুলাবালিতে রোগীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পুরুষ ওয়ার্ডে একটি স্ট্রেচারে বসিয়ে ফজল হক নামে এক রোগীকে সেবা দিতে দেখা যায়। পুরুষ ওয়ার্ডের সামনের মেঝেতে বিছানায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আলী হোসেনকে মশারি ছাড়াই শুয়ে থাকতে দেখা যায়। দুই দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গত ৮ দিন ধরে মোশরা বেগম নামে এক বৃদ্ধা তার অসুস্থ স্বামী নুরুল ইসলামকে নিয়ে পুরুষ ওয়ার্ডের সামনে মেঝেতে রয়েছেন। কিন্তু একটি বেড মেলেনি তাদের ভাগ্যে। এভাবে বিপুলসংখ্যক রোগী হাসপাতাল ভবনের বিভিন্নস্থানে মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মোশরা বেগম বলেন, আমার স্বামী স্ট্রোকের রোগী। ৮ দিন ধরে মেঝেতেই রয়েছি। সিট দেয়নি। চিকিৎসক ও নার্সরাও সময়মতো আসে না।

আলী হোসেন বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ব্যবহারের জন্য মশারি দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আবুল বাশার নামে এক রোগী বলেন, ফ্লোরে বিছানা করে আমাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মানুষজন যখন হেঁটে যায়, মনে হয় যেন, আমাদের গায়ের ওপর দিয়ে যায়।

ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের সেবিকা (নার্স) ময়না বেগম বলেন, শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। এরপরও আমরা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। সেবা দিয়ে রোগীদের সুস্থ্য করে তুলতে চেষ্টা করে আসছি।

মহিলা ওয়ার্ডের সেবিকা (নার্স) শাহিদা বেগম বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে ৩০ জন রোগীর শয্যা রয়েছে। কিন্তু ভর্তি রয়েছে দেড়শ রোগী। আমাদের নার্স কম। এতো বেশি রোগীকে ৩-৪ জন নার্সের পক্ষে পূর্ণ সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। রোগীদের কাছে সবসময় যাওয়া সম্ভব হয় না। এতে আমাদের ওপর তারা রাগান্বিত হয়ে থাকে।

মেডিকেল অফিসার (জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু পদের বিপরীতে) মুহাম্মদ ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমি রোগীদের পূর্ণাঙ্গ সেবা নিশ্চিত করে আসছি। অনেক বছর থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে না। দুইজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মধ্যে একজন অসুস্থ। এতে একজনকে দিয়ে বিশাল হাসপাতালে কাজ করা সম্ভব না। প্রতিদিন আমাকে প্রায় সাড়ে ৩০০ রোগী দেখতে হয়। রোগীদেরকেও লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে অনেক কষ্ট ও হয়রানির শিকার হতে হয়। ১০০ শয্যার জনবলই নেই, সেখানে ২৫০ শয্যার জন্য ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থাপনা করার দিকেই সবার নজর, কিন্তু উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য যে লোকবল দরকার সেদিকে কারো নজর নেই। এখন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল নিয়োগ মূল প্রয়োজন। যে কয়জন চিকিৎসক রয়েছে আপাতত কষ্ট হলেও তাদেরকে দিয়েই সেবা দেওয়া সম্ভব।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ৪৩৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। নতুন একটি ভবন হচ্ছে। ভবনটি বুঝে পেলেই ২৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হবে। তখন রোগীদের ভোগান্তি কমবে। তবে ২৫০ শয্যার জনবলও নিয়োগ দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ভোগান্তি কমবে। কারণ শয্যা সংকটের চেয়েও জনবল সংকট মারাত্মকভাবে আমাদের ভোগাচ্ছে। এখন ১৪৮ জনের মধ্যে আমাদের জনবল রয়েছে ১০৫ জন। তবুও চিকিৎসক-নার্সসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মশারি দিলেও কেউ ব্যবহার করেন না। মূলত তাদের মধ্যে সচেতনতা নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. আহাম্মদ কবীর পূর্বপশ্চিমবে বলেন, শূন্যপদগুলোতে জনবল নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য দেওয়া আছে। প্রায়ই আমরা হালনাগাদ তথ্য প্রদান করি। এছাড়া নতুন ভবনটি ২০২৩ সালের জুনে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। পরে সংশ্লিষ্টরা মেয়াদ বাড়িয়েছেন। আগামি জুনের মধ্যে ভবনটি আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতাল

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close