• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এক বছর যাবত ভারতে অবস্থান

নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরসহ বেতন ওঠে খুলনার স্কুল শিক্ষিকা লিপিকার

প্রকাশ:  ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:১৫
শেখ নাদীর শাহ্,খুলনা প্রতিনিধি

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপিকা রাণী ভদ্র দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে ভারতে অবস্থান করলেও নিয়মিত স্বাক্ষর করা হচ্ছে তার স্কুল হাজিরা খাতায়। আর সে হিসিবে তার বেতনের টাকাও নিয়মিত উত্তোলন হচ্ছে ব্যাংক থেকে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মন্ডল ও সভাপতিসহ পরষ্পর যোগসাজশে ভাগাভাগি করে হজম করা হচ্ছে তার ঐ বেতনের টাকা। ঘটনাটি চাউর হওয়ায় বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারী থেকে শুরু করে এলাকাময় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, হরিঢালী ইউনিয়ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপিকা রাণী ভদ্র’র স্বামী দীর্ঘ দিন ধরে ভারতে বসবাস করেন। সে হিসেবে স্ত্রী লিপিকা মাঝে-মধ্যে ভারতে যেতেন। তবে সর্বশেষ তিনি প্রায় এক বছর আগে ভারতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মন্ডল বলছেন, তার স্বামী অসুস্থ্য থাকায় লিপিকা রাণী ছুটি নিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। যদিও তিনি ঠিক কত দিনের ছুটিতে রয়েছেন? কিংবা পরিচালনা পরিষদে তার কত দিনের ছুটি মঞ্জুর হয়েছে এবং তার রেজুলেশন রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও জাল বা ভুয়া স্বাক্ষরে লিপিকার বেতন উত্তরের বিষয়টি বেমালুম স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে কে তার স্থলে স্বাক্ষর করেন এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পরষ্পর পরষ্পরকে দোষারোপ করেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, লিপিকা রাণী ভদ্র তার দায়িত্ব কালিণ সময়ের আগেও এমন অপকর্ম করেছেন। সাবেক প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সু-সম্পর্কের সুবাদে তিনি স্কুলের কিছু বেঞ্চ-টেবিল প্রদান ও প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে সেবার রক্ষা পেয়েছিলেন।

এদিকে প্রায়শই ভারতে অবস্থান ও সর্বশেষ বছরাধিককাল ভারতে অবস্থান করায় চাকুরী টেকাতে লিপিকার ইচ্ছাতেই মূলত এমন কর্ম অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র। সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লিপিকা ভদ্র ভারতে অবস্থান করছেন বলেও স্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

সূত্র জানায়, লিপিকা রাণী নীতিমালা অনুযায়ী ছুটির আবেদন করলেও তা পরিচালনা পরিষদে উঠানো হয়নি। কেননা ছুটিতে থাকাকালীণ সময়ে নিয়মিত তার শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর থাকার কথা নয়, এমনকি বেতনও উত্তোলন সম্ভব নয়। অভিযোগে রয়েছে, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মন্ডল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকালীণ সময়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সম্পৃক্ত। এমনকি প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব কিংবা অভ্যন্তরীণ অডিট করার নির্দেশনা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনি কোন অভ্যন্তরিণ অডিট করাননি বলেও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে হরিঢালী ইউনিয়ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মুনছুর আলী সরদার বলেন, তিনি একজন বয়োবৃদ্ধ। তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময় ভুল বুঝিয়ে ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে বেতন-বিলে স্বাক্ষর করিয়ে উপরন্তু লিপিকা রাণীর স্বাক্ষর নিজেই জাল করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মন্ডল তার বেতনের সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি পাল্টা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়টির সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে ঘটনার তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, খুলনা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বলেও জানান তিনি।

এ ঘটনায় মোবাইল ফোনে কল করে না পাওয়ায় পাইকগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি তার অজানা। তবে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেন তিনি।

শিক্ষক,অপরাধ,বেতন

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close