• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

৭ পুলিশের নামে করা মামলার প্রতিবেদনে বাদীর নারাজি, তদন্তে পিবিআই

প্রকাশ:  ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৭
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আটকের পর আসামি আবদুর রহিম রনিকে মারধরের ঘটনায় ৭ পুলিশের নামে করা মামলায় আদালতে এসপির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন বাদী। এতে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী অঞ্চল রায়পুর আদালতের বিচারক মো. বেলায়েত হোসেন এ আদেশ দেন।

সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আদালতের পেশকার নুরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তের জন্য ২৭ ডিসেম্বর আদালত লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দেন। তখন ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বলা হয়েছিল। এসপির দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলে বাদী এর বিরুদ্ধে নারাজি দেন। এতে আদালত পুনরায় মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী রনির স্ত্রী রিনা আক্তার বাদী হয়ে ২৭ ডিসেম্বর আদালতে ৭ পুলিশের নামে মামলা দায়ের করেন। এতে রায়পুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু হানিফ, নুরুল ইসলাম, মো. আবু হানিফ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সফিক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কনস্টেবল আতিক উল্যা ও ইউসুফ ঢালিকে অভিযুক্ত করা হয়। ভুক্তভোগী রনি রায়পুর উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের পূর্ব চরপাড়া গ্রামের মো. শহিদুল্লাহর ছেলে।

২ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা স্বপন জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটওয়ারী জানান, আদালত পুলিশ সুপারকে ৩ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। নির্দেশ পাওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জব্দ করতে বলা হয়। ২৮ ডিসেম্বর তদন্তের নির্দেশ পেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফুটেজ জব্দ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। কালক্ষেপণ করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নষ্ট-ডিলিট দেখানোসহ যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা করা হয়েছে। মামলার সাক্ষিদের থানায় ডেকে এনে জোরপূর্বকভাবে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি দাখিল করিয়েছেন। আসামিদের মোবাইল সিডিআর সংগ্রহ করার জন্য বলা হলেও তা করেননি কর্মকর্তা। উল্টো ভুক্তভোগী রনির মোবাইলের সিডিআর সংগ্রহ করে মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মামলাটি সম্পূর্ণ তদন্ত হয়েছে রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে। তারা অভিযুক্তদের বাঁচানোর জন্য সব ধরনের বিষয় এনে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এজন্যই পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে নারাজি দেওয়া হয়েছে।

এজাহার সূত্র জানায়, ১৭ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের বর্ডার বাজার রায়পুর-চাঁদপুর সড়ক থেকে অভিযুক্তরা রনিকে আটক করে। তখন তার সঙ্গে গরু বিক্রির ৯০ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা অভিযুক্তরা নিয়ে গেছে। পরে তাকে নিয়ে এসে মারধর করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দিয়েছে। পরে সেখানে পানি খেতে চাইলে টিউবওয়েলের সঙ্গে তার মাথায় আঘাত করে। আটকের খবর পেয়ে রনির স্ত্রী রায়পুর থানায় বারবার গেলেও স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে তিনি সদর থানা, গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় ও জেলা কারাগারেও খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পাননি। ফের রায়পুর থানায় গেলে সেখানে রনির মোটরসাইকেল দেখতে পান তিনি। এতে স্বামীর সন্ধান চাইলে বিভিন্ন কথা শুনতে হয় তাকে। পরে তিনি এসআই হানিফকে কল দিয়ে স্বামীর সন্ধান চান। হানিফ তার স্বামীকে ছাড়তে ২ লাখ টাকা দাবি করেছেন। এতো টাকা নেই বললে রনিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ১৮ ডিসেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে রনিসহ দুইজনকে একনলা বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ, দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র, ১৮০ পিস ইয়াবা ও ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

বাদী রিনা আক্তার বলেন, দিনে দুপুরে আমার স্বামীকে আটক করা হয়। পরে সাজানো ঘটনায় আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অভিযুক্তরা আোর স্বামীকে মারধরও করেছে। এতে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনেও নারাজি দিয়েছি।

রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা না। এসপি স্যার তদন্তের দায়িত্ব ছিলেন। এ নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। পিবিআইকে তদন্ত দিয়েছে কি না তাও আমার জানা নেই।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা স্বপন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এখন অভিযোগটি পুনঃ তদন্তের জন্য পিবিআইকে দিয়েছেন বলে কোর্ট পরিদর্শকের মাধ্যমে আমি শুনেছি।

মামলা,অপরাধ,পিআইবি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close