‘চার বছরে ৫০ লাখ পোল্ট্রি খামারি দেওলিয়া হয়ে গেছে’
দেশে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ পোল্ট্রি খামারি ছিল। কিন্তু গত চার বছরে প্রায় ৫০ লাখ খামারি দেওলিয়া হয়ে গেছে। এতে কর্পোরেট কোম্পানী ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদন করে লাগামহীন দামবৃদ্ধি করে বিক্রি করছে। যদি খামারিরা থাকতো তাহলে আমিষের চাহিদা পূরণে অধিক দামে ডিম ও মুরগি কিনতে হতো না। কর্পোরেট কোম্পানী দৌরাত্মে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের পথে। খাদ্য ও মুরগির বাচার দাম কর্পোরেট কোম্পানীর লাগামহীন বৃদ্ধির কারণেই খামারিরা ঝরে পড়ছে।
সম্পর্কিত খবর
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রি শিল্প রক্ষা সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম মল্লিক এসব কথা বলেন। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টাকারী লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌর শহরের সোনাপুর এলাকায় পোল্ট্রি খামারি এমরান হোসেনকে দেখতে এসে তিনি এসব জানিয়েছেন। এসময় মল্লিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এমরানের হাতে ২০ হাজার টাকা ও ঈদ উপহার তুলে দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী শরিফ উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন, সদস্য ইমরান হোসেন ও লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম।
জানা গেছে, রামগঞ্জ উপজেলার ভাদুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাদুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে এমরান হোসেন একজন পোল্ট্রি খামারি। ১৩ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার ৪টি খামার ছিল। গত দুই বছর ধরে তিনি উপজেলা শহরে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। এরমধ্যে তিনটি খামার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। রামগঞ্জ পৌর শহরের মাঝিরগাঁও এলাকায় নিজের নামে খামার গড়ে তোলেন। এরজন্য তিনি বিভিন্ন এনজিওসহ আত্মীয়-স্বজনদের স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এরমধ্যে খামার থেকে কোন আয় নেই। কর্পোরেট কোম্পানি বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে। এতে এমরানের খামারে বাচ্চা নেই। পরিবেশকরা স্বল্পসংখ্যক কিছু বাচ্চা দেয়। বিভিন্ন সময় বাচ্চাও দেয় না। এজন্য তাকে ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। একটি নসিমন চালিয়ে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা উপার্জন হলেও তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আর নসিমন চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনায় তার ডান পা ভেঙে যায়। এখন ভারি কোন কাজ করার সুযোগও তার নেই। সবমিলিয়ে ৩০ লাখ ঋণের বোঝা সহ্য করতে না পেরে ২ এপ্রিল তিনি ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে অন্যান্য খামারিরা এসে তাকে বাঁচিয়ে নেন।
ভূক্তভোগী খামারী এমরান হোসেন বলেন, মনে করেছি খামারে মুরগি পালন করে ঋণ পরিশোধ করবো। কিন্তু আমার খামারে এখন একটি মুরগিও নেই। মুরগির বাচ্চা পাচ্ছি না। বাচ্চা পেলেও প্রায় ৮-১০ গুণ দামে কিনতে হয়। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। এসব কারণেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এ টাকা পরিশোধ করার কোন উপায় পাচ্ছি না।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, খামারির আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাটি আমাদের জানা নেই। কেউ আমাদেরকে জানায়নি।