• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ, বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার

প্রকাশ:  ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৪৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তায় চার স্তরে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবারও পূর্বের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়া ময়দানে। মোতায়েন থাকবে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার।

শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল ১০টায় শুরু হবে। ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।

ঈদের নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন। তবে আবহাওয়া যদি খারাপ থাকে কিংবা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ছাতা নিয়ে ময়দানে প্রবেশের কথা আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।

রোববার (৭ এপ্রিল) শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, র‌্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবারের ঈদের জামাতে টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা। মাঠের অভ্যন্তরে সুপেয় পানি, অজুখানা ও ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডাক্তার থাকবে। নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এখানে দায়িত্ব পালন করবেন।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ থেকে সকাল ৬টায় ট্রেন ছেড়ে আসবে এবং ভৈরব থেকে পৌঁনে ৬টায় ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে পুনরায় ১২টার সময় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, প্রথমত শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ১৯৭তম ঈদ জামাতের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। ২০১৬ সালের ঘটনাটা মাথায় রেখে আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি ও করছি। এবারও পূর্বের চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়া মাঠে। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি।

তিনি বলেন, ময়দানকে চার স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হবে। প্রতিটি মানুষ ঈদগাহ পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। মাঠের প্রতিটি গেটে আর্চওয়ে থাকবে। আর্চওয়ের মধ্যদিয়ে আপনাকে চেকিংয়ের মাধ্যমে মাঠে প্রবেশ করতে হবে।

এসপি বলেন, মাঠে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র‌্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে মাইনো কোলারসহ ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। পুলিশের গোয়েন্দারা কাজ করছে। আশপাশের হোটেলগুলোতে বাড়তি নজরদারি কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তায় কোনোরকম ঘাটতি থাকবে না। এ ছাড়া পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠে প্রবেশ ও বাহির পথ নামাজের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে তাই আমাদের এই আয়োজন। এখানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে।

পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সুইপিং করা হবে। বোম ডিসপোজাল টিম ঢাকা থেকে আসবে। এ ছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। আমরা কোনো হুমকি মনে করছি না।

ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, স্নাইপার, ড্রোন ক্যামেরা, দুটি ওয়াচ টাওয়ারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে শতাধিক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। দুই থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করবেন তারা। জঙ্গি হামলার কোনো আশঙ্কা নেই।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মাঠের রং করা, দাগ কাটা থেকে শুরু করে মুসল্লিদের অজু ও গোসলের সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তরে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের চেয়েও বড় বড় ঈদগাহ ময়দান প্রতিষ্ঠিত হলেও মুসল্লির উপস্থিতির দিক থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাত উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হয়েছিলেন।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ২৬৫টি কাতার রয়েছে। প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।

শোলাকিয়া ঈদগাহ,জামাতের সময়,নিরাপত্তা,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,কিশোরগঞ্জ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close