• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ইটভাটায় মাটি বিক্রি, ভেক্যুর আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ফসলি জমি

প্রকাশ:  ০৪ মে ২০২৪, ২১:৫৬
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে আইন না মেনেই ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলুসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বসতবাড়ির-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। এসব ইটভাটায় মাটির যোগান হয় আশপাশের ফসলি জমি থেকে। কৃষক বা মালিকের কাছ থেকে এক কোদাল মাটি কিনলেও ভেক্যু দিয়ে জমিটি পুকুর বানিয়ে ফেলে ভাটা মালিকরা। অসহায় কৃষক-মালিকরা এনিয়ে কিছু বলতেও পারে না। পরবর্তী মৌসুমে চাষাবাদ বন্ধ জেনেও ভাটা মালিকদের ভয়ে নীরব থাকতে হয় কৃষকদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সোনাপুর চৌরাস্তা-পানিওয়ালা সড়কের পাশে ভোলাকোট ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলু ও তার ভাই বিল্লাল হোসেন আল মদিনা ব্রিকস ম্যানুফেকচ্যারিং নামে একটি ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। ওই ভাটার বালুতে আশপাশের গাছপালা বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে। দেলোয়ার নিজেদের ভাটাসহ অন্যান্য ভাটায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিভিন্ন ভাটায় বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ওই ভাটার সামনে দিয়েই একটি সরকারি খাল রয়েছে। ভাটার পূর্ব পাশে খালের দখল করে শোচাগার নির্মাণ করেছে কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলাকোটের চেয়ারম্যান দেলোয়ার ও তার ভাইসহ স্বজনরা আরো একাধিক ইটভাটা পরিচালনা করছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের প্রভাবে জমির মালিক ও কৃষকরা মুখ খুলতে পারছেন না। এছাড়া উপজেলার ভোলাকোট, ভাদুর, নোয়াগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৯টি ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। ভোলাকোটের নাগরাজারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫০ গজের মধ্যেই ইটভাটা, দেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি একসঙ্গে তিনটি ইটভাটা পরিচালনা করছেন।

কৃষক জয়নাল আবেদিন ও সৈয়দ আহমেদসহ কয়েকজন জানায়, ইটভাটার মাঝিরা এসে কৃষকদেরকে ভুল বুঝিয়ে এক কোদাল মাটি কিনে নেয়। কিন্তু তারা কোদাল দিয়ে মাটি না কেটে ভেক্যু দিয়ে কাটে। এতে প্রায় ২ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি নিয়ে যায় ভাটা কর্তৃপক্ষ।

শামছুদ্দিন বলেন, আমি এক কোদাল মাটি বিক্রি করেছি। তাও বর্ষায় নেওয়ার কথা। এখন এসে দেখি ভেক্যু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এক কোদালের স্থলে ২-৩ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হয়েছে। এতে আগামি মৌসুমে এ জমিতে চাষাবাদ করা যাবে না।

ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার একটি ইটভাটা রয়েছে। আমার লোকজন এটি পরিচালনা করছেন। অনেকে পুকুরের মতো করে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে গেলে আমি এক কোদালের বেশি নিই না। আমি ভাটা মালিকদেরকে নিয়ম অনুযায়ী চলতে বললেও কেউ শুনে না।

লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, রামগঞ্জে ১৯টি ইটভাটা ছিল। লাইসেন্স না থাকায় দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি ডিসি-ইউএনওরা দেখবেন। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন ইসলাম বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি অবৈধ। মাটি কাটার ঘটনায় বৃহস্পতিবারও (২ মে) দুপুরে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থল গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা পরিচালনার বিষয়টি আমার জানা নেই।

ইটভাটা,মাটি বিক্রি,ফসলি জমি

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close