• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

১৪ ডাক্তারের মধ্যে উপস্থিত ৩

গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ বছর ধরে জরুরি প্রসূতি সেবা বন্ধ

প্রকাশ:  ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:৫৮
গফরগাঁও প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলায় যন্ত্রপাতি, লোকবল সংকট এবং ডাক্তার-নার্সদের দাম্ভিক আচরণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা গফরগাঁও উপজেলা ও পাশ্ববর্তী দুই থানার প্রায় কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করে ১৪ জন ডাক্তারের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ তিন ডাক্তারকে পাওয়া যায়। ডাক্তারদের জন্য নির্ধারিত কক্ষগুলো অধিকাংশই তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কয়েকটি কক্ষ খোলা থাকলেও কামরাগুলোতে কর্মরত ডাক্তার পাওয়া যায়নি। দেখা যায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত রোগী হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

সম্পর্কিত খবর

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইর্মাজেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. ফ্লোরা আফরোজ, ডা. তপন কুমার দাশ, ডা. আমেন খাতুন মিতা, ডা. নুসরাত জাহান, ডা. নিয়ামুল হাছান, অর্থোপেডিক্স এর কনসালটেন্ট ডা. মিজানুর রহমানসহ ১১ জন ডাক্তারই কর্মস্থলে অবস্থান না করে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করে ট্রেনে কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করেন।

    মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ডা. তপন কুমার দাম জানান, তিনি শনিবারে আসবেন। অর্থোপেডিক্স এর কনসালটেন্ট ডা. মিজানুর রহমান সপ্তাহে দুইদিন রবিবার ও বুধবার এই হাসপাতালে রোগী দেখে থাকেন।

    নিচ তলার জরুরি বিভাগে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মত। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের রুম ও জরুরি বিভাগ দু’জায়গাতেই তাদের অবাধ যাতায়াত লক্ষ্য করা যায়।

    স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি (গাইনি) চিকিৎসক না থাকায় প্রায় ৮ বছরের বেশি সময় ধরে জরুরি প্রসূতি সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, ২০০৫সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কার্যক্রম চালু হয়। ২০১১ সালে হাসপাতালের ডা. হালিমা সুলতানা ও জুনিয়র গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. হামিদা আক্তার বদলি হয়ে যায়। পরবর্তীতে কোনো গাইনি ডাক্তার যোগদান না করায় গর্ভবতীদের অস্ত্রোপচারসহ গর্ভকালীন নানা সমস্যামূলক সেবা বন্ধ রয়েছে।

    প্রসূতি বিভাগ চালু হওয়ার পর গর্ভবতী নারীরা বিনামূল্যে ওষুধসহ অস্ত্রোপচার সুবিধা পেয়ে আসছিল। কিন্তু গত ৮ বছর ধরে জরুরি প্রসূতি বিভাগে কোনো গাইনি চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ হয়ে আছে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অপরাশেন থিয়েটার।দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম।

    গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহ সদরের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আধুনিক মাতৃসেবা নিতে হয় এতে করে প্রসূতি মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই চরম ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়।প্রায়ই দেখা যায় দূর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে।

    উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর ভিড় থাকলেও ডাক্তারদের দিনের পর দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

    এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নাসিমা খাতুন বলেন (২৩), গায়নি ডাক্তার না থাকায় এই হাসপাতাল থেকে প্রায় দিনই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

    উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলম আরা বেগম বলেন, অনুপস্থিতির কারণে এই হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ডাক্তারকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে এবং গাইনি চিকিৎসক না থাকায় আপাতত প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপচারসহ সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধ রয়েছে। গাইনি চিকিৎসকের শূন্য পদ পূরনের জন্য একাধিকবার উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।

    পিবিডি/ওএফ

    সারাদেশ

    অনুসন্ধান করুন
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close