• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নারীকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশ:  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:২৫
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পাওনা টাকা চাওয়ায় তিন নারীকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত (১৬ ফেব্রুয়ারী) শনিবার বিকেলে উপজেলার কলাবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্য তদন্ত কমিটি নারায়ণগঞ্জ এসে এর সত্যতা পায়। পরে চাপের মুখে বন্দর থানা পুলিশ মামলা নেয়। তবে ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলে পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। নির্যাতিতা নারীরা হলেন- ফাতেমা বেগম, তার দুই আত্মীয় আসমা বেগম ও বানু বেগম।

আহত ফাতেমা বেগম জানান, পঞ্চান্ন বছর বয়সী এই নারী দীর্ঘদিন ধরে তিনি সুদের টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়ে আসছেন। গত কয়েক মাস আগে স্থানীয় বাসিন্দা জীবন ও উম্মে হানীকে তিনি দুই দফায় এক লাখ সাঁইত্রিশ হাজার টাকা ধার নেন। সপ্রতি পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফকে জানিয়ে তার কাছে সহযোগিতা চাইলে উল্টো ফাতেমাকে তিনি শাসিয়ে দেন। গত ১৬ ফ্রেবুয়ারী শনিবার বিকেলে জীবন ও তার লোকজন ফাতেমার বাড়ীতে গিয়ে ফাতেমাসহ তার দুই আত্মীয় আসমা বেগম ও বানু বেগমকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটায়। এসময় তিন নারীর চুল কেটে দেয়া হয় এবং এক পর্যায়ে তাদের গায়ের কাপড় খুলে নেয়ারও চেষ্টা করা হয়। এসময় ফাতেমার বাড়ীতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনার দিন থানায় গেলে পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন ফাতেমা।

তিনি বলেন, আমাদের মারধর করে গাছের সাথে বেধেঁ রাখার পর তারা আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়। বলে আমাদের ব্যাবের কাছে দিয়ে দিবে। কিন্তু র‌্যাব আসেনি। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে আমাদের অবস্থা খারপ না নিয়ে চলে আসার চেষ্টা করে। পরে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে এসে বন্দর থানায় ভর্তি করায় পুলিশ। কিন্তু কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি। উল্টো পুলিশ বলে ইউসুফ মেম্বারের কথা ছাড়া থানায় মামলা হবেনা।

এদিকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকে গঠিত তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে আসেন। তারা নির্যাতিতা তিন নারীর জবানবন্দি গ্রহন করেন এবং পুলিশ প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার দাবী করেন। পুরো ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাথে তুলনা করেছেন কমিশনের সদস্যরা। পাশাপাশি ঘটনার পর পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এ ব্যাপারে দু:খপ্রকাশ করে মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি গণমাধ্যমকে জানান, আগামীকালই তারা কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে সুপারিশ করবেন।

এ ব্যপারে জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান দীপু বলেন, সোমবার সকালে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি এবং আদালতে এসেই শুনতে পাই ফাতেমার পরিবার আমার খোঁজ করছে এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন থেকেও ফোন পেয়ে আমি ফাতেমার কাছে ছুটে এসেছি। এডভোকেট দীপু জানান, বিষয়টি সভ্য সমাজের ঘটনা বলে মনে হয়না। ঘটনার পরপরই অভিযোগ পেয়ে বন্দর থানা পুলিশের ঘটনাস্থলে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা সেটি করেনি। থানা মামলাটি গ্রহন করলে আমি ফাতেমার পরিবারের পক্ষে স্বেচ্ছায় এই মামলা আদালতে পরিচালনা করবো এবং সহকর্মীদের আহবান জানাবো যেন এই নির্যাতিত পরিবারের পাশে এসে দাড়াঁন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পরিচালক ও জেলা দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর জানান, তিনজন নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমরা কথা বলেছি। তারা অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার করবেন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।তবে পুলিশ নিজে উদ্দ্যোগি হয়েও মামলা করে আসামীদের গ্রেফতার করতে পারতো বলে তিনি দাবী করেন।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আল মাহমুদ ফায়জুল কবীর, কমিশনের উপ-পরিচালক গাজী সালাহ উদ্দিন এবং সদস্য বাতা চাকমা।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, বিষটি জানার সাথে সাথে বন্দর থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিদেশ দেয়া হয়েছে। শুনেছি এই ঘটনার সাথে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ইউসুফ হোসেন নামে একজন জড়িত রয়েছে। ওই মেম্বারসহ যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চত করা হবে। নির্যাতিতা নারীদের পক্ষ থেকে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বন্দর থানা (ওসি ) রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় নির্যার্তিত ফাতেমা বেগম বাদি হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের কয়েকটি টিম অভিযান শুরু করেছে।

পিবিডি/এআইএস

নারায়ণগঞ্জ

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close