• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

লোককবি বিজয় সরকারের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী বুধবার

প্রকাশ:  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৬:২৯
শরিফুল ইসলাম, নড়াইল

একুশে পদকপ্রাপ্ত উপমহাদেশের প্রখ্যাত লোককবি কবিয়াল বিজয় সরকারের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী আগামী বুধবার। তাঁর (বিজয় সরকারের) বিদেহী আত্বার শান্তি কামনা করে জন্মভূমি ডুমদী গ্রামের নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। ভক্তবৃন্দ কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। চারণ কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৪ দিনব্যাপী জন্মজয়ন্তী উৎসব পালিত হবে।

জন্মজয়ন্তী উদযাপন পর্ষদ সূত্রে জানা যায়, ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সকালে কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, নগরকীর্তন, প্রসাদ বিতরণ, বিজয়গীতি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা, দুপুর ১২টায় কবি বিজয় সরকারের জীবনী নিয়ে আলোচনা, বিজয়গীতি, ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় বিজয়গীতি, ২৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) কবির জন্মভিটা সদর উপজেলার ডুমদীতে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী লোকউৎসব, বিজয়গীতি, জারিগান ও বিজয় ভক্তদের মিলন মেলা । বিজয় সরকার ফাউন্ডেশন ও উদযাপন কমিটির আয়োজনে দিন ব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান, উদযাপন পর্ষদের প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক সুলতান মাহমুদ।উৎসব সফল করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও লোকজ সংষ্কৃতির পুরোধাগণ অংশগ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে লোককবি বিজয় সরকারের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা সভা, সাড়া জাগানো বিজয় গীতি পরিবেশন, কবিগানের আসর। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক, চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মার নাম হিমালয়া দেবী। তার প্রথম স্ত্রী বীণাপাণি দেবীর মৃত্যুর পর প্রমদা দেবীকে বিয়ে করেন তিনি।

পরবর্তীতে প্রমদারও মৃত্যু হয়। দু’ছেলে কাজল অধিকারী ও বাদল অধিকারী এবং মেয়ে বুলবুলি ভারতে বসবাস করেন। তার শৈশবকাল এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে প্রিয় জন্মভূমি ডুমদিসহ নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায়।ছেলেবেলা থেকেই তিনি (বিজয় সরকার) কবিতা, গান রচনা ও সূরের মধ্যে ডুবে থাকতেন।তাই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় তিনি আর বেশিদূর এগুতে পারেননি।মাত্র নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তার লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটে।মতান্তরে তিনি ম্যাট্রিক পাশ।এরপর তিনি গানের দল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে।তিনি একাধারে গানের রচয়িতা ও সুরকার।পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/ একদিন ভাবি নাই মনে...। এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনি ঠিক রবে/ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে/ একদিন চলে যেতে হবে...। তুমি জানো নারে প্রিয়/ তুমি মোর জীবনের সাধনা’...এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি।তিনি প্রায় এক হাজার ৮০০ গান রচনা করেছেন।

তিনি অনেক ইসলামী গান ও কবিতা রচনা করেন। কবিগানের আসরেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। মাতিয়ে তুলতেন দর্শক-শ্রোতাদের ।কোন কোন মঞ্চে তৎক্ষনাৎ নিজের রচিত আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন।প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য তিনি চারণকবি ও ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন।১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ার তার মৃত্যু হয়।সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৩ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত হন উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই চারণ কবি।

অজপাঁড়াগায়ে জন্মগ্রহণ করেও তিনি (বিজয় সরকার) লোকসঙ্গীত ও কবিগান রচনা করে ও গেয়ে সবার মাঝে আলো ছড়িয়েছিলেন।তাঁর রচিত আধ্যাত্মিক গান আজও সবার মনে-প্রাণে নাড়া দেয়।

/পিবিডি/পি.এস

নড়াইল,লোককবি বিজয় সরকার,জন্মবার্ষিকী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close