• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মাদরাসার ১১ বিঘা জমির দলিল অধ্যক্ষের নামে

প্রকাশ:  ১৯ মার্চ ২০১৯, ২১:১১
রাজশাহী প্রতিনিধি

অধ্যক্ষের নামে মাদ্রাসার প্রায় ১১ বিঘা জমির দলিল ও খারিজ নোটিশ নিয়ে রাজশাহীর মোহনপুরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার সাঁকোয়া বাকশৈল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের নামে ভূয়া দলিল ও খারিজ নোটিশ পাওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।

যদিও এলাকাবাসীর অভিযোগ অধ্যক্ষ তার নামে এ দলিল তৈরী করে জমিগুলো আত্মসাত করার চেষ্টা করেছে। এনিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।

সোমবার জেলা প্রশাসককে দেয়া লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন, সাঁকোয়া গ্রামের মৃত সেফাতুল্লার ছেলে মোবারক আলী, বরিঠা গ্রামের মৃত রহমতুল্লাহ মন্ডলের ছেলে শরিফুল ইসলাম, ওমর ফারুক, ইসমাইল হোসেন, কিবরিয়া।

তারা অভিযোগ করেছেন, মোহনপুর উপজেলার সাঁকোয়া, বাকশৈল, হরিদাগাছি মৌজায় মাদরাসা জমি দান করেন, কেরামতুল্লাহ, সুন্দর বিবি, লোকমান মন্ডল, আনিস মন্ডল, কছিম উদ্দিন, তাহেরা খাতুন, আনিস মল্লিক, আমির উদ্দিন। তাদের সাঁকোয়া বাকশৈল কামিল মাদরাসা নামে দানসত্ত দলিল নং- ৩২৬৮৭, তারিখ ২৪-০৬-১৯৭৫। এর পর থেকে অদ্যবধি জমিগুলো মাদরাসা ভোগ দখল করছে।

সাঁকোয়া মৌজার খতিয়ান নং ৩৭৭, দাগ নং- ৯৩, ১১৬, ১৩০, ৭৮৯, ১৫২৯, ১৬৫৫, ১৬৭৩, রকম ধানী, ০.৮৪০০ একর, বাকশৈল খতিয়ান ৫৪৫, ৫৪০, ৫৪৩, দাগ নং- ২৫৮, ৪৯০, ১৭৬৩, ২৩৬, ২৮৯, ১৬৪৮, ৩২৫৮, ৪৬১, ৪৭৭, ২৯৩৪, ২৯৩৪, ২৯৩৮, ১৬৫৪ রকম ধানী, পরিমান ২.২৯০০ একর, হরিদাগাছি মৌজার- দাগ নং-৭০৪, ১৯৭৫ রকম ধানী ০.৪৭০০ একর। এসব জমির ১৯৯৫ সালের রেজিষ্ট্রির (দলিল নং- ৬৭২-৯-১৮৫-১৯০) একটি দলিল তৈরী করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের। তবে জেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের রেকর্ড বইয়ে এ নাম ও নম্বরের কোন দলিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

জমির ওয়ারিশ ওমর ফারুক জানান, ‘‘গত ৮ মার্চ মোহনপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে খারিজ নোটিশ (খারিজ কেস নং- ৪-৯৩৩/৯১/১৮-১৯ প্রঃ ৯৩৫/৯-১/১৭-১৮) পাঠানো হয়। জমি দাতাদের প্রতিপক্ষ করে অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের জমি খারিজের আবেদন করেন। জমির ওয়ারিশদের কাছে ভূমি অফিস থেকে নোটিশ জারি হলে তারা জানতে পরেন দলিল তৈরী করে মাদরাসায় দান করা জমি নিজের নামে করে নিচ্ছেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি তারা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও মাদ্রাসার গভনিং বর্ডির সভাপতিকে জানানো হয়।’’

গভনিং বডি সভাপতি ও কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতে পেরে গভনিং বডির বৈঠক করা হয়। বিষয়টি জানতে চাইলে মাদ্রাসার পক্ষে বলেছেন, মাদ্রাসার পক্ষ থেকে একজনের নাম দিতে হয়। সে নাম আমারটি দেয়া হয়েছে। কিন্তু নামের সঙ্গে অধ্যক্ষ ও মাদ্রসার নাম কেন নাই জানতে চাইলে ভূল হয়েছে বলে স্বীকার করেন। পরে জমির খারিজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’’

তবে এ নিয়ে ভিন্ন কথা বললেন অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য কেউ আমার নামে ভূয়া দলিল ও খারিজ নোটিশ তৈরী করেছে। এর সঙ্গে আমি জড়িত নই।’’

তিনি বলেন, ‘‘১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসার নামে প্রায় দেড়শ বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে মাদ্রাসার দখলে রয়েছে ৬৩ বিঘা। আমি অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর ৩৩ বিঘা জমি উদ্ধার করেছি। এখনো প্রায় ৯০ বিঘা জমি অন্যের দখল রয়েছে। সেগুলো উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে। এ কারণে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে এই ভূয়া দলিল ও খারিজ নোটিশ’’ বলে দাবি করেন তিনি।

মোহনপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘‘দলিলের সার্টিফাইট কপি দিয়ে জমি খারিজের আবেদন করেছিলেন আব্দুল কাদের। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জমির ওয়ারিশদের কাছে খারিজ নোটিশ পাঠানো হয়।’’

জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা) তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিবিডি/আর-এইচ

রাজশাহী

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close