• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সংস্কার হচ্ছে পেনশন আদেশ পদ্ধতি

সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন পাওয়া সহজ করতেই এ উদ্যোগ

প্রকাশ:  ২৫ জুন ২০১৮, ১২:৪৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

অবসর গ্রহণের পর কোনো সরকারি চাকরজীবী অফিস অডিটে দায়ী হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করা হবে। তবে অডিট আপত্তি না থাকলে যত দ্রুত সম্ভব সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পেনশনের টাকা দেয়া হবে অবসরপ্রাপ্তদের।

এছাড়া পেনশনের যাওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত হওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এ সময়সীমা পাঁচ মাস।

পূর্বপশ্চিম বিশ্বকাপ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পেনশন সহজীকরণের লক্ষ্যে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী রোববার বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে সহজীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেশ অগ্রগতি হয়েছে। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকের কার্যবিবরণীতে থেকে জানা গেছে, পেনশন সহজীকরণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম ওই বৈঠকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন মঞ্জুরি ও পরিশোধ সংক্রান্ত পদ্ধতি সহজ করতে ২০০৯ সালে একটি আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এ আদেশ সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যমান আদেশে অনেক বিষয় অস্পষ্ট আছে, যা স্পষ্টকরণ দরকার। যে কারণে পেনশন সহজীকরণ পদ্ধতি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পেনশন সহজীকরণের লক্ষ্যে সরকারের গঠিত কমিটি এরই মধ্যে দুটি বৈঠক করেছে। সর্বশেষ বৈঠকে একটি পূর্ণাঙ্গ পেনশন সহজীকরণ আদেশের খসড়া তৈরি করে আগামী সভায় পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি বেশকিছু সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওই বৈঠকে।

সূত্রমতে, বিদ্যমান পেনশন সহজীকরণ আদেশে ৪.১১ ধারার একটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ধারায় ‘প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ’ শব্দটি নিয়ে অস্পষ্ট দেখা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চাকরিজীবীদের অবসরে যাওয়ার সময় অনিস্পত্তিকৃত অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সি এন্ড এজি অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি সেল গঠন করে ৩ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। কোনো কারণে তা নিষ্পত্তি না হলে এর কারণ জানাতে হবে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীকে।

সেখানে আরও বলা হয়, অডিট আপত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যদি কোনো চাকরিজীবীকে দায়ী না করা হয়, সেক্ষেত্রে অনিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তির জন্য পেনশন আটকানো যাবে না। এছাড়া প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তিগুলো পর্যালোচনা করে অডিট অধিদফতরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে উল্লিখিত বিধানগুলোয় প্রকৃত পক্ষে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। এ নিয়ে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

পেনশন সহজীকরণ কমিটির বৈঠকে বলা হয়, ‘প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ’ হবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অবসরে যাওয়ার পর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরে বিরুদ্ধে অফিস অডিট হয়। সেখানে যদি ব্যক্তিগতভাবে পেনশনারকে দায়ী করে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়, সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পেনশনারের কাছ থেকে অডিট আপত্তির উল্লিখিত অর্থ আদায়যোগ্য হবে। এ বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে নতুন আদেশে।

সূত্রে জানা গেছে, আরও একটি পরিবর্তন আসছে বিদ্যমান বিধিমালার ২.০৬ ধারার (ক) উপধারায়। সেখানে বলা আছে, ইএলপিসি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর প্রাপ্যতা সাপেক্ষে অবসর প্রস্তুতি, ছুটি, ছুটি নগদায়ন, ভবিষ্যৎ তহবিল স্থিতি ও পেনশন মঞ্জুরির আবেদন নির্ধারিত ফরমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। এ আবেদন পাওয়ার ৫ মাসের মধ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় ও পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর সার্ভিস বুক ও চাকরির বৃত্তান্ত হালনাগাদ করবেন। তবে নতুন সংস্কারের ক্ষেত্রে ৫ মাসের স্থলে কমিয়ে ২ মাস নির্ধারণ করা হচ্ছে।

এছাড়া চাকরিজীবীদের ডকুমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অর্থাৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ডকুমেন্ট (দলিলাদি) নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অফিসে বা অন্য কোনো অফিসে থাকলে তা দ্বিতীয়বার পেনশনারের কাছে চাওয়া যাবে না। এ মর্মে নতুন এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে পেনশনসহজীকরণ পদ্ধতিতে। পাশাপাশি পেনশন কেস নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধাপ সমন্বয় করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এছাড়া আগামী দিনে পেনশনের ফরম সংখ্যা ও ফরমের আকারও কমানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়েল ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান পেনশন সহজীকরণ আদেশে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি সম্পর্কিত বেশকিছু নির্দেশনা আছে। সেগুলো যেন প্রতিপালন হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি ইতঃপূর্বে যেসব সংশোধন হয়েছে নতুন সংশোধনীতে সেগুলোও যেন অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতে উপকৃত হবেন পেনশনগামী চাকরিজীবীরা।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ অবসরভোগী সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী পেনশন পাচ্ছেন। প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ১৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। সূত্র: যুগান্তর

/এসএম

পেনশন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close