• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ফের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা

প্রকাশ:  ৩১ অক্টোবর ২০২২, ১৩:২৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিজয়ের পর লুলা তার স্ত্রী রোজাঞ্জেলাকে জড়িয়ে ধরেন। ছবি: রয়টার্স

আবারও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন ৭৭ বছর বয়সী বামপন্থি নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ৫০.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে বর্তমান ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোকে হারিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির।

রোববার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট নেয়া হয়।

এর আগে কারাগারে থাকায় ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি লুলা। রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাসের সঙ্গে চুক্তির বিনিময়ে ব্রাজিলের একটি নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার দায়ে তাকে জেলে যেতে হয়। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ব্রাজিলের এ নির্বাচনের আগে বলা হচ্ছিল, এবারের ব্যালট পেপারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বনের ভাগ্যও যেন নির্ধারিত হবে।

সুবিশাল আমাজন অরণ্যের ৬০ শতাংশ ব্রাজিলের মধ্যে পড়েছে। দেশটির রাজনীতি ও জনজীবনে আমাজন বনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন কারণে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী নেতার ওপর আমাজন বনের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভর করবে। অতুলনীয় প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বনটি বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বড় ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেনের উৎস আমাজন। তাই বিশ্বে জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় আমাজন বন রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

২০১৯ সালে বলসোনারো প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন। তার গত চার বছরের শাসনকালে ব্যাপকহারে আমাজন বন উজাড় করা হয়েছে। তিনি আমাজনে খনির সন্ধান এবং বনাঞ্চল কেটে বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজের ওপর জোর দেন। তিনি দাবি করেছিলেন, তার গৃহীত এসব পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ এবং দারিদ্র্য ঘোচাতে সহায়তা করবে। তিনি পরিবেশবাদী আইনবিষয়ক সংস্থাগুলোর ক্ষমতা হ্রাস করেন। বলসোনারো এসব সংস্থার বাজেট এবং কর্মী কাটছাঁট করেন। এতে বনাঞ্চল বিনাশকারী, জীবজন্তু হত্যাকারী অপরাধীদের শাস্তির হারও কমে যায়।

বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, বলসোনারোর কর্মকাণ্ড অপরাধীদের বেপরোয়া করে তোলে। শাস্তির ভয়ভীতি না থাকায় তারা অধিক মাত্রায় আমাজনের ক্ষতি করেছে। ব্রাজিল সরকারের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএনপিইর তথ্যানুসারে ২০০৬ সালের পর গত বছর সবচেয়ে বেশি আমাজনের অংশ উজাড় করা হয়েছে। বলসোনারোর ক্ষমতার প্রথম তিন বছরে আমাজন অরণ্যের যে পরিমাণ জায়গার বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে তার আকার যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের চেয়েও বড়।

সরকারি প্রাথমিক তথ্যে ইঙ্গিত মিলেছে যে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বন উজাড় আরও ২৩ শতাংশ বেড়েছে। বলসোনারোর সরকার মনে করে, ব্রাজিলবাসীদের আমাজনে প্রাকৃতিক সম্পদে অধিকার রয়েছে। বলসোনারোর আমলেও পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য সংস্থা যে একেবারেই কিছু করেনি তা বলা হয়তো সঠিক হবে না। তবে বন উজাড় এবং দাবানল রুখতে বলসোনারোর পদক্ষেপ যথেষ্ট ছিল না। কারণ তার সরকার আমাজনের ধ্বংসযজ্ঞ হ্রাসে ব্যর্থ হয়।

অন্যদিকে ২০০৩ সালে লুলা যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তখনও আমাজনের অনেক বেশি বন উজাড় হচ্ছিল। লুলার প্রশাসন আমাজন রক্ষায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা পরিবেশবিষয়ক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ইবামাকে শক্তিশালী করে এবং পার্ক সার্ভিস এজেন্সি আইসিএমবিও প্রতিষ্ঠা করে। ২০১০ সালে লুলার ক্ষমতার শেষ বছরে বনাঞ্চল বিনাশের মাত্রা ৭২ শতাংশ হ্রাস পায়। কিন্তু লুলা আমাজনে বিশাল বেলো মন্টে জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগে সমর্থন দেন। এতে আমাজন নদীর অসংখ্য জলজ প্রাণী বিলুপ্ত হয়। আমাজনের গহিনে থাকা বহু আদিবাসী বাস্তুচ্যুত হন। পরবর্তীকালে লুলার আশীর্বাদপুষ্ট উত্তরসূরি সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের সরকার ক্ষমতায় এলেও আমাজন বন উজাড় করার প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়। উন্নয়নের নামে তার সরকারও কিছু দুর্বল নীতি গ্রহণ করে। সেগুলো বনখেকোদের আরও শক্তিশালী করে তোলে।

এবার তৃতীয়বারের মতো লুলা ব্রাজিলের ক্ষমতায় আসছেন, যিনি আমাজন বনাঞ্চল বিনাশের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে পরিবেশবিষয়ক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আবারও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। লুলা মনে করেন, মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারলেই পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। ব্রাজিলে বর্তমান আর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকেই রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ব্রাজিল সরকারের বাজেটেও প্রভাব ফেলছে। তাই লুলা ক্ষমতায় এলে কীভাবে তিনি অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটিয়ে মানুষকে আমাজন বন ধ্বংস করা থেকে বিরত রাখবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।

লুলা,প্রেসিডেন্ট
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close