• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

ছাত্রলীগের কেন্দ্রে জাহাঙ্গীরনগরের একমাত্র নেতা অন্তর

প্রকাশ:  ১৫ জুলাই ২০২৩, ১৯:১২ | আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৩, ২০:২৯
জাবি প্রতিনিধি

ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের ঘোষিত কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উপ-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন হামজা রহমান অন্তর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একমাত্র নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বে উঠে এসেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাতে ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সর্বশেষ ২০২২ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম দিন থেকে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে যোগদান করা হামজা রহমান অন্তর ২০১৭-২০২১ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০১৩-২০১৬ সালে ছিলেন জাবি ছাত্রলীগের ১নং কার্যকরী সদস্য।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আগে হামজা রহমান অন্তর ভোলার দৌলতখান উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও দৌলতখান আবু আবদুল্লা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।

ছাত্রলীগের এই নেতা জানান, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। এরপর থেকে তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রেখেছেন।

ভোলার দৌলতখানে বাবা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মা সেলিনা পারভীনের ঘরে ১৯৯৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জন্ম তার। অন্তরের বাবা মাকসুদুর রহমান ছাত্রজীবনে ছিলেন বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (১৯৮২-৮৪)। অন্তরের ছোটবোন হাফসা বিনতে রহমান মীম ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক (২০১৭-১৯)। এছাড়াও অন্তরের পুরো পরিবার মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণসহ স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে।

দৌলতখান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, দৌলতখান আবু আব্দুল্লা কলেজ থেকে ২০১১ সালে এইচএসসি পাশের পর ২০১১-১২ সেশনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্বে ভর্তি হন হামজা রহমান অন্তর। সেখানে স্নাতক(সম্মান) ও স্নাতকোত্তরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা করেছেন। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইনে স্নাতক(পাশ) কোর্স পড়ছেন।

ছাত্রলীগের সূত্রে জানা যায়, মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি বর্তমান ছাত্রলীগের অন্যতম অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অন্তর। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মোড়কে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে সশস্ত্র হামলার সময় প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে আলোচনায় আসেন অন্তর। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের নামফলক পরিবর্তনের চেষ্টা, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের অবমাননা করায় এক শিক্ষার্থীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা, জাবির দেয়ালে বিতর্কিত ফটোগ্রাফার শহীদুল হকের ছবি মুছে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী নির্দেশের ছবি একে দেন তিনি।

এছাড়াও বাংলাদেশ সফরকারী পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন জানিয়ে কতিপয় বাংলাদেশি পাকিস্তানের জার্সি পড়ে ও পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন জানালে হামজা রহমান অন্তর স্টেডিয়ামজুড়ে সিরিজব্যাপী পাকিস্তানবিরোধী অভিযান চালিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন। এ বিষয়টি জাতীয় অঙ্গন পেরিয়ে ভারত পাকিস্তানের গণমাধ্যম সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোচিত হয়।

২০১৪ সালে বাড়ি ফেরার পথে কুমিল্লার চান্দিনায় বাস ডাকাতি প্রতিহত করতে গিয়ে ডাকাতদের আঘাতের পরেও যাত্রীদের রক্ষা করে পত্রিকার শিরোনামে এসেছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা। ২০০৬ সালের আলোচিত ২৮ অক্টোবরে বিএনপি-জামাতের হামলায় সপরিবারে আক্রান্ত ও নির্যাতিত হন অন্তর।

২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও সংগঠক ছিলেন তিনি। ২০২১ সালে মোদীবিরোধী আন্দোলনে ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে হেফাজতে ইসলামসহ মৌলবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে অন্তরের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশও করেছে হেফাজতে ইসলাম।

জাতীয় রাজনীতি ছাড়াও ভোলার দৌলতখান উপজেলাকে মেঘনার ভাঙন থেকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গণ আবেদন ও গণস্বাক্ষর পাঠিয়ে নদী ভাঙন প্রতিরোধে সরাসরি ভূমিকা রাখেন তিনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দৌলতখান উপজেলা মেঘনা নদীর ভাঙনমুক্ত হয়। এতে নিজের জন্মভূমিতে নন্দিত হন তিনি।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে নিজ এলাকার একজন অসহায় পত্রিকা হকারের চিকিৎসার অনুদান এনে দিয়েও নিজ এলাকা দৌলতখান উপজেলা তথা সমগ্র ভোলা জেলায় প্রশংসিত হন এই ছাত্রলীগ নেতা।

পদপ্রাপ্তিতে হামজা রহমান অন্তর বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদে আসা সৌভাগ্যের কিন্তু কর্মী থাকা আরও বেশি গর্বের। বিগত ১৫ বছর ধরে ছাত্রলীগ করি। আমি সবসময় মনে করি আমি বাংলাদেশের ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম, কর্মীই আছি এবং কর্মীই থাকবো। যেখানে যখন যে অবস্থায় থাকি না কেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবো।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে অন্তরের পদ প্রাপ্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন তার বহু অনুসারী। অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন আরও দায়িত্বশীল জায়গায় অন্তরকে না রাখায়।

জাবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সম্রাট দেব চৌধুরী লিখেছেন, অভিনন্দন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুঃখী রাজপুত্র হামজা রহমান অন্তর ভাই। রাজপথ থেকে এখনো অনেক পাওনা ভাই।

জাফর ইকবাল নামে এক সংবাদকর্মী লিখেছেন, কেউ সংগঠন বেচে করে নিজের ব্রান্ডিং করে আবার কেউ ব্যক্তি হিসেবে সংগঠনের পদ-পদবীর ঊর্ধ্বে নিজেকে ছাপিয়ে নিয়ে যায়। ব্যক্তি হামজা রহমান অন্তরকে সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ একজন অকুতোভয় মুজিব আদর্শের সিপাহশালা হিসেবে চেনে। এসব পদ-পদবী চক্রে অন্তরদের আটকে রাখা যায় না। সামনের জাতীয় নির্বাচন, খুবই কঠিন সময়। অন্তর ভাইকে পার্টির প্রয়োজনে আরও ভালো যায়গায় রাখা যেতো। অন্তর ভাই ডিসার্ভ বেটার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close