• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ফিল্মের চেয়ে শক্তিশালী শিল্প হয় না

প্রকাশ:  ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

তিনি ঠাকুর বাড়ির মেয়ে, পতৌদির নবাব পরিবারের বধূকিন্তু তার সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি শর্মিলা ঠাকুর। এ সু-অভিনেত্রীর পর্দায় আবির্ভাব দর্শকচিত্তকে উদ্বেলিত করেসম্প্রতি ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এশিয়ান কম্পিটিশন সেকশনের জুরি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে তিনি এখন ঢাকায়

চিরসবুজ অভিনেত্রীর নানা অজানা রহস্য এবংউৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনে তার বলা কথা তুলে ধরেছেন - পান্থ আফজাল

এই সুন্দর শহরে এসে আমি মুগ্ধ

‘আমি এই সুন্দর শহর ঢাকায় এসে খুবই খুশি এবং মুগ্ধ। তবে এই সুন্দর শহরে আসা প্রায় বাতিল হতে বসেছিল। গতকাল যখন আমি দিল্লি বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম, আমাকে বলা হলো কুয়াশার কারণে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বাইরে তখন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা।

পরবর্তী ফ্লাইট ছিল আজকে; যদি পরের এই ফ্লাইট ধরতাম, তাহলে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারতাম না। পরে বাংলাদেশ বিমানের সহযোগিতায় ঢাকায় আসতে পেরেছি। আর আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। একটা অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে জার্নিটা শুরু হয়েছিল।

এটা একরকম অ্যাডভেঞ্চারই ছিল

‘উৎসবের পরিচালক বলেছেন, হোটেল থেকে ভেন্যু হেঁটে গেলে মাত্র ২ মিনিট, আর গাড়িতে ৫ মিনিট। কিন্তু কোনো কারণে আমরা একটা ভুল মোড় নিয়ে ফেলি। যার কারণে আমরা প্রায় ৩৫ মিনিট দেরিতে পৌঁছলাম। এটা একরকম অ্যাডভেঞ্চারই ছিল। ঢাকার কিছু রূপও দেখা হয়ে গেল। আমি বাংলায় কেন বলব!

উৎসবটি আন্তর্জাতিক বলে রসিকতা করে বাংলায় কথা বলার অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে তিনি হাসিমুখে বলেন, ‘আমি বাংলায় কেন বলব, এটা তো আন্তর্জাতিক উৎসব। আর সবাই জানে যে, আমি বাংলা বলতে জানি। ইংরেজি তো আন্তর্জাতিক ভাষা, সবাই বোঝে। প্লিজ মাফ করবেন। ’ এরপর ইংরেজি-বাংলার মিশেলেই বাকি বক্তব্য সারেন শর্মিলা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুগ্ধ করেছে

‘উৎসবের শুরুর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমাকে মুগ্ধ করেছে। পুরনো চলচ্চিত্রের গানগুলো দিয়ে এ আয়োজন খুব ভালো লেগেছে। ’

চলচ্চিত্রের কোনো ভাষা নেই

‘একটি সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য নিজের সংস্কৃতি তুলে ধরার চলচ্চিত্র ছাড়া আর কোনো ভালো মাধ্যম হতে পারে না। কারণ একমাত্র চলচ্চিত্রের কোনো ভাষা নেই। সেটা বাংলা, ইংরেজি, চাইনিজ, হিন্দি যাই হোক না কেন, দর্শক চলচ্চিত্র খুব সহজেই বুঝতে পারে। ’

ফিল্মের চেয়ে শক্তিশালী শিল্প হয় না

‘যোগাযোগের জন্য ফিল্মের চেয়ে শক্তিশালী শিল্প হয় না। আমি ইরানি চলচ্চিত্র ও ইরানের সংস্কৃতি দারুণ পছন্দ করি। ফিল্ম নিয়ে আয়োজিত এ উৎসবে অনেক কথা হবে, বোঝাপড়া হবে। ’

একঝলকে শর্মিলা

ঠাকুর বংশের হয়েও প্রথা ভেঙেছিলেন অপুর সংসারের অপর্ণা দেবী নয়, রোমান্টিকতার প্রতীক হয়ে আছে। যে কারণে শর্মিলা ঠাকুরের নাম বললেই অপর্ণার মুখ ভেসে ওঠে। তবে এরপরেই আমরা শর্মিলাকেও দেখি দেবী হয়ে উঠতে। এক ধর্মান্ধ সামন্ততান্ত্রিক জমিদার তার পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী বানিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। ১৯৫৯-এ ‘অপুর সংসার’, ৬০-এ ‘দেবী’, সত্যজিৎ রায়ের দুটি ছবিতেই শর্মিলা ঠাকুর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এরপর ৬৩-তে শর্মিলার তিনটি ছবি মুক্তি পায়- উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘শেষ অঙ্ক’, তপন সিংহের সঙ্গে ‘নির্জন সৈকতে’ এবং পার্থপ্রতিম চৌধুরীর সঙ্গে ‘ছায়া সূর্য’। এ তিনটি ছবিতেও শর্মিলা ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। এরপর বোম্বে থেকে তার ডাক আসে শক্তি সামন্তের ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’ ছবিতে। ১৯৬০ সালে শাম্মি কাপুরের সঙ্গে বিকিনি পরে দৃশ্য শুট করেছিলেন। এ বোল্ড লুকে সবাইকে তাক লাগিয়েছিলেন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। ১৯৬৭ সালে ওই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর রীতিমতো বিতর্ক তৈরি করেছিল। বিকিনি পরে নীল সমুদ্রের ওপর দিয়ে স্কি করছেন নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর। বলা যায়, প্রথমবার ট্যাবু ভেঙে বিকিনি পরে রুপালি পর্দায় ভেসে ওঠেন নায়িকা শর্মিলা ঠাকুর। আজ এ ধরনের দৃশ্য ছাড়া ছবির কথা ভাবাই যায় না। কিন্তু পাঁচ দশক আগে ওই দৃশ্য দেখে চারদিকে গেল গেল রব পড়ে গিয়েছিল। সেই সময় বিকিনি পরা ভারতীয় নারীর পক্ষে, বিশেষ করে সিনেমায় খুবই কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু শর্মিলা ঠাকুর সেই কাজটি করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। একটা সময় জড়তার ভিত, গাথুনি ভাঙার কাজ তো শুরু হয়েই যায়। কিন্তু সেই শুরুটা যে কেউ করে উঠতে পারেন না। সিনেমা ছাড়াও শর্মিলা ম্যাগাজিনের কভার গার্ল হওয়ার জন্য বিকিনি শুট করিয়েছিলেন। বিখ্যাত ঠাকুর বংশের মেয়ে হয়েও শর্মিলা গেল শতাব্দীর সত্তর দশক শুরুর আগে ছক ভাঙা শুরু করেছিলেন। যার দিদিমা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাতনি, অন্যদিকে প্রিন্স দ্বারকানাথের ভাই গিরীন্দ্রনাথের ছেলে গুণেন্দ্রনাথ; তার ছেলে গগনেন্দ্রনাথের পুত্র কণকেন্দ্রনাথের দৌহিত্রী হলেন শর্মিলা ঠাকুর। কেবল সিনেমায় অভিনয় ক্ষেত্রেই নয়, শর্মিলা প্রথা ভেঙেছিলেন ব্যক্তিজীবনেও। সনাতন বাঙালি হিন্দু পরিবারের মেয়ে হয়ে অবাঙালি মুসলমান পরিবারে বিয়ে করেছিলেন। শর্মিলা তার রূপকে উন্মুক্ত করেছিলেন ‘আরাধনা’ ছবিতে; ‘রূপ-তেরা মস্তানা’ গানে, টু-পিসে ফটোশুট করে। সেই ফটোশুট সে সময় এমন হইচই ফেলেছিল যে, দেশজুড়ে মৌলবাদীরা হুঙ্কার দিয়েছিলেন। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাদের প্রচ্ছদে শর্মিলার সেই ছবিকে জায়গা দিয়েছিল। আমেরিকান সেই পত্রিকা শর্মিলাকে নিয়ে কভার স্টোরিও করেছিল। বোম্বের সেই ‘আরাধনা’ ছবির সময়ই তাকে ফের ডেকে নিলেন সত্যজিৎ রায় তার ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’তে। এবার শর্মিলা অপুর সংসারের অপর্ণা কিংবা দেবীর দয়াময়ী এমনকি নায়কের অদিতি নয়। অপর্ণা আধুনিক, শহুরে, শিক্ষিত মেয়ে। অপর্ণার যুক্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়েই প্রধান পুরুষ চরিত্র খুঁজে পায় তার মানবিকতা।

পতৌদি ঐতিহ্য বজায়

‘পরবর্তী প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেই না। পরিবারকে একত্রে রাখার একটি প্রচেষ্টা সবসময় থাকে। সংসার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমি অনেক সিনেমা ছেড়ে দিয়েছি। আমি তখন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে ছিলাম। অনেক সিনেমার প্রস্তাব আমি ফিরিয়ে দিয়েছি, যেগুলো হিট হতো। বর্তমানে খাবার টেবিলেও সবাইকে একত্র করা বেশ দুরূহ। কিন্তু এটি অসম্ভব নয়। এ ঐতিহ্য বজায় রাখতে চাই। ’

১৩ বছর পর গুলমোহর নিয়ে

গত বছর পর ‘গুলমোহর’ সিনেমার মাধ্যমে ১৩ বছর পর পর্দায় ফিরেন এ অভিনেত্রী। ডিজনিপ্লাসহটস্টারে মুক্তি পায় এ সিনেমা। পারিবারিক জীবনেও সফল শর্মিলা ঠাকুর।

ফের বাংলা ছবিতে

‘কাবুলিওয়ালা’ পরিচালক সুমন ঘোষের ছবি দিয়ে এক বছর পর বাংলা ছবিতে প্রত্যাবর্তন করছেন শর্মিলা। সিনেমার নাম ‘পুরাতন’। এ ছবিতে শর্মিলার সঙ্গে স্ক্রিনস্পেস শেয়ার করতে দেখা যাবে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকেও। ‘পুরাতন’-এর প্রযোজকও অভিনেত্রী। গত বছর ৮ ডিসেম্বর শর্মিলার জন্মদিনেই শুরু হয়েছে ছবিটির শুটিং। মায়ের ভূমিকায় শর্মিলা এবং মেয়ের চরিত্রে ঋতুপর্ণাকে দেখা যাবে। আর মেয়ের স্বামীর ভূমিকায় থাকছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।

ক্যান্সারজয়ী শর্মিলা

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। কবে তার শরীরে এ মারণ রোগ বাসা বেঁধেছিল তা অবশ্য জানাননি। তবে ক্যান্সারজয়ী এ বর্ষীয়ান অভিনেত্রী যে এখন পুরোপুরি সুস্থ, সে কথা নিজেই স্বীকার করেছেন করণ জোহরের একটি ‘কফি উইথ করণ’ শোতে এসে।

শর্মিলা ঠাকুর,বিনোদন,বলিউড
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close