• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

একান্ত সাক্ষাৎকারে নাট্যকার মেজবাহ উদ্দিন সুমন

মেজবাহ উদ্দিন সুমন: একজন গল্পের ফেরিওয়ালা

প্রকাশ:  ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৫
হাসনাত কাদীর

সময়ের জনপ্রিয় নাট্যকার মেজবাহ উদ্দিন সুমন। তার রচিত নাটক ‘ধাঙর’-এর জন্য সম্প্রতি ৮ম আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ডে সেরা নাট্য রচয়িতা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন হাসনাত কাদীর

পূর্বপশ্চিম: সময়ের জনপ্রিয়তম নাট্যকার আপনি। দু’ হাতে লিখছেন টিভি নাটক। আপনার লেখালেখির শুরুটা জানতে চাই।

সুমন: একজন লেখক তার লেখক সত্তার আগে কিন্তু একজন পাঠক। আমি খুব পড়ি। যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন আমার এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বই ভাড়া নিয়ে পড়তে শুরু করি। কিশোর ক্ল্যাসিক, দস্যু বনহুর সিরিজের বই দুই টাকায় ভাড়া নিয়ে আমার সাহিত্য পড়া শুরু। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় আমার পড়ার আগ্রহ দেখে মোতাহার নামের এক ভদ্রলোক তার ওয়ারড্রবের তালা খুলে দিলেন। ওয়ার্ড্রব ভর্তি বই- ক্লাসিক থ্রিলার, বন্ড, আগাথা ক্রিস্টি। আরও কত বই। আমার সামেন একটা বিশাল জগত খুলে গেলা।

পূর্বপশ্চিম: আপনার প্রিয় লেখক কে?

সুমন: প্রিয় লেখক? এই প্রশ্নের উত্তর বেশ দীর্ঘ।নির্দিষ্ট কারো নাম বলতে পারবো না।

পুর্বপশ্চিম: প্রিয় লেখা?

সুমন: প্রিয় লেখা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘দূরবীন’। আমি ‘দূরবীন’ পরী ক্লাস সেভেনে। আমার খৎনা একটু দেরিতে হয়েছে। দেরিতে মানে তখন আমি সেভেনে পড়ি। সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকি। সময় কাটাতে দূরবীন পরা শুরু করি। দুরবীন আমাকে ‘ধরে’ ফেললো। ধ্রুবকান্তকে আমার খুব পছন্দ হয়ে গেলো। ধ্রুবকান্ত হলো এমন একতা ক্যারেক্টার যাকে সবাই খুব ভালোবাসে। ভালোবাসার জন্য কোন নারীর দিকে তার হাত বাড়াতে হয় না। নারিরাই তাকে ভালোবাসার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। ধ্রুবকান্ত দীর্ঘ দিন আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখলো। ইউনিভার্সিটিতে উঠে পড়লাম তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’। মনে হলো এমন লেখাও হতে পারে! এর আগে যখন নটরডেম কলেজে পড়ি তখন হুমায়ুন আজাদ পরা শুরু করেছি। তার ‘সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে’ অন্যরকম লেগেছিলো তখন।

পূর্বপশ্চিম: হুমায়ুন আজাদের লেখা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?

সুমন: (স্মিত হাসি) কোন মন্তব্য করতে চাই না।

পূর্বপশ্চিম: হুমায়ূন আহমেদ পড়েছেন?

সুমন: আমি তো সর্বভূক পাঠক। যা পাই তাই পড়ি। ফুটপাত থেকে রাম-শ্যামের লেখা বইও কিনি। দেখি তো কী লেখে- কৌতুহল থেকে পরা শুরু করি। হুমায়ূন আহমেদ পড়া শুরু করি ক্লাস সেভেন এইট থেকে।

পূর্বপশ্চিম: তার লেখা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?

সুমন: তিনি কিছু ভালো বই লিখেছেন। বাকিগুলো না পড়লেও চলে।

পূর্বপশ্চিম: এখন কী পড়েছন?

সুমন: এখন ‘মানিক’ পড়িছ আবার।

পুর্বপশ্চিম: লেখালেখির শুরু কীভাবে?

সুমন: আমার আসলে লেখক হওয়ার কথা ছিলো না। আমার লেখক হুয়া এই এ মিরাকল। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করলাম। কী করবো, কী করবো? তখন এনটিভির জুয়েল ভাই বললো- নাটক প্রোডিউস কর।দীপঙ্কর দীপনকে ‘কাঁচের মেয়ে’ প্রোডিউস করলাম। দীপন দেখে বললো- এটা তো সিনেমার স্ক্রিপ্ট হয়েছে রে! স্ক্রিপ্ট লেখার অনেক টেকনিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার দীপন আমাকে শিখিয়েছে।

পূর্বপশ্চিম: আপনার স্ক্রিপ্টে প্রথম অনএয়ার প্রোডাকশন কোনটা?

সুমন: ‘কক্ষ পথের যুদ্ধ’। ‘চারুনীড়ম কাহিনীচিত্র উৎসব-২০০৮ এ এটার জন্য আমি ‘শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার’ নমিনেশন পাই।

পূর্বপশ্চিম: বাংলা নাটক ক্রমশ দর্শক হারাচ্ছে। ভালো গল্পের সংকট এক্ষেত্রে কতখানি দায়ী?

সুমন: ঠিক হয়ে যাবে। সমস্যা শুধুই গল্প না। বিজ্ঞাপন একতা বড় সমস্যা। বিজ্ঞাপন কমালে টিভিতে দর্শক ফিরে আসবে।

পূর্বপশ্চিম: বাংলা নাটকে গল্পের ধারার যে পরিবর্তন এটাকে কীভাবে দেখেন? হুমায়ূন আহমেদ পূর্ববর্তী একতা ধারা, তারপর হুমায়ূন আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, আপনাদের একটা ধারা-

সুমন: এটা সময়ের দাবী। পরিবর্তনই নিয়ম। হুমায়ূন আহমেদ যেটা করেছেন- নাটককে ‘আসছি’, ‘যাচ্ছি’, ‘খাচ্ছি’ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। ফারুকীর নাটকেও ব্যাপারটা মোটামুটি ঠিক ছিলো। কিন্তু ফারুকীর ভাই বেরাদরের নাটকে এসে যেটা হলো- ডায়লগ থ্রোয়িং-এ ভেরিয়েশন হারিয়ে গেলো। মনে করেন, রহিম করিমকে বলেছে- ঐ ব্যাটা তুই এইটা করছস ক্যান? করিম বলছে- ভুল করে করে ফেলেছি রে।দুই জনের ডায়লগ থ্রোয়িংয়ে কোন পার্থক্য পাবেন না।

পূর্বপশ্চিম: কেউ কেউ আছেন জাস্ট লাইনআপ লিখে শুটিংয়ে যান। এটা আপনি কীভাবে দেখেন?

সুমন: (হেসে) পজেটিভ্লি দেখি। তবে এ ক্ষেত্রে যেটা করা উচিত, সংলাপ রচয়িতা হিসেবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম দেয়া উচিত।

পূর্বপশ্চিম: ঢাকা শহরে শুধু স্ক্রিপ্ত লিখে জীবনযাপন সম্ভব?

সুমন: কেন সম্ভব নয়? এখন প্রচুর কাজ হচ্ছে। অনেকেই শুধু স্ক্রিপ্ট লিখছে। মাসুম ভাই (মাসুম রেজা) লিখছেন না? আমি লিখছি না? তবে এখানে প্রফেশনালিজমের অভাব আছে। অনেক ডিরেক্টর, প্রোডিউসারই সম্মানী দিতে লেট করে, গড়িমসি করে। তখন সমস্যায় পড়তে হয়।

পূর্বপশ্চিম: অভিযোগ আছে নতুন ডিরেক্টররা আপনার কাছ থেকে স্ক্রিপ্ট পান না।

সুমন: (হেসে) সত্যি! কেউ এসে বললো, একটা স্ক্রিপ্ট দেন ভাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম- কী ধরনের স্ক্রিপ্ট চান? সে বললো- একটা দিলেই হলো। বোঝেন অবস্থা! আমি তাকে কী দেবো?

পূর্বপশ্চিম: নাট্যকার হিসেবে একজন ডিরেক্টরকে কীভাবে মেজার করেন?

সুমন: মেজার করা যায় না। এক দিরেক্টর থেকে আরেক ডিরেক্টরের পার্থক্যতা হয় রুচির কারণে। আমি যেমন পজেটিভ গল্প বলি। চেষ্টা করি- গল্প যা-ই হোক দর্শক যেন একটা পজেটিভ ম্যাসেজ পায়।

পূর্বপশ্চিম: স্ক্রিপ্টের কোন দৃশ্যে যখন আপনার সাথে পরিচালকের চিন্তার অমিল দেখা দেয় তখন কীভাবে মতানৈক্যে পৌঁছান?

সুমন: লজিকের মাধ্যমে। আমি আমার লজিক দেয়ার চেষ্টা করি। ডিরেক্টর তার লজিক ব্যাখ্যা করেন। ফাইনালি যে লজিকটা বেশি জোরালো সেটি রাখা হয়।

পূর্বপশ্চিম: আমরা আমাদের আলোচনার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। কেন লেখেন? সুমন: ভালোলাগে। টাকা পাই।

পূর্বপশ্চিম: যদি লিখতে আর ভালো না লাগে?

সুমন: ছেড়ে দেবো।

পূর্বপশ্চিম: ভালোলাগে কিন্তু লিখে টাকা পাচ্ছেন না, তাহলে?

সুমন: তাহলেও ছেড়ে দেবো।

পূর্বপশ্চিম: নতুন লেখকদের কিছু বলতে হলে-

সুমন: বলবো- পড়তে হবে। প্রচুর পড়তে হবে। স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ের কোন থিয়োরি নেই। মনের আনন্দে লিখতে হবে। আমি কীভাবে লিখি আমি কিন্তু জানি না। আমি মনে করি এটা একটা ইমোশনাল সায়েন্স।

পূর্বপশ্চিম: নতুন ডিরেক্টরদের জন্য কিছু বলবেন?

সুমন: হাল না ছাড়লেই হবে। করতে করতে শিখবে। প্রচুর ইয়াং ছেলে-মেয়ে এখন কাজ করছে- ভালো। ইন্ড্রাস্ট্রি বর হচ্ছে। বেনিফিট আসবে।

পূর্বপশ্চিম: আপনার প্রিয় ডিরেক্টর কে?

সুমন: কোয়ান্টিনো টারান্টিনো। পূর্বপশ্চিম: প্রিয় ফিল্ম?

সুমন: অনেক তো। তারমধ্যে ‘কিলবিল’, ‘ব্যালদ অফ এ সোলজার’ অন্যতম। আমি একশন থ্রিলার ফিল্ম দেখতে ভালোবাসি।

পূর্বপশ্চিম: শেষ প্রশ্ন- সাক্ষাৎকার দিতে কেমন লাগে?

সুমন: হা হা হা। মজা লাগে। নিজের অনেক কথা বলা যায়। যা বুঝি, যা ভাবি তা শেয়ার করা যায়।

পূর্বপশ্চিম: পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

সুমন: আপনাকে এবং পূর্বপশ্চিমকেও ধন্যবাদ।

পিবিডি/ এইচকে

মেজবাহ উদ্দিন সুমন,হাসনাত কাদীর,সাক্ষাৎকার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close