• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

রয়্যাল এনফিল্ডের মডেলগুলোতে কী কী ফিচার পাবেন মোটরসাইকেলপ্রেমীরা

প্রকাশ:  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

প্রাচীনতম ব্রিটিশ টু-হুইলার ব্র্যান্ড “রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০”-এর মাধ্যমে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ক্ষমতার নতুন মাত্রায় পৌঁছতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ৩৭৫ সিসির (কিউবিক সেন্টিমিটার) মাইলফলকের দিকে এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে চলতি বছরের জুলাইতে। স্থানীয়ভাবে ইফাদ মোটরস নামক একটি মোটরসাইকেল কারখানাজাত প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে চালু করবে “রয়্যাল এনফিল্ড”।

ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে যে, বিশ্ব বাজারে এর নামকরা ক্লাসিক, বুলেট, হান্টার ও মিটিওর সিরিজগুলো দেশের ভেতরেই প্রস্তুত করা হবে। কী কী ফিচার পাওয়া যাবে রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০ মোটরসাইকেলের মডেলগুলোতে? আর কতটুকু নাগালের মধ্যে থাকতে যাচ্ছে এগুলোর দাম। চলুন জেনে নেওয়া যাক।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির এক সঙ্গত সংমিশ্রণ রয়্যাল এনফিল্ড ক্লাসিক ৩৫০। বাতাস চলাচলের মাধ্যমে শীতলীকরণ প্রক্রিয়া সমৃদ্ধ একক সিলিন্ডার ও ৩৪৯ সিসির ইঞ্জিন একটি আদর্শ মোটরসাইকেল হিসেবে মডেলটিকে ন্যায্যতা দেয়।

৬,১০০ আরপিএম (ইভোলিউশন পার মিনিট)-এর সঙ্গে রয়েছে ২০.২ বিএইচপির (ব্রেক হর্সপাওয়ার) হর্সপাওয়ার এবং চার হাজার আরপিএমের সঙ্গে প্রতি ফুট দূরত্বে ১৯ পাউন্ডের টর্ক। তাই শহুরে যানজট বা খোলা-রাস্তা উভয় ক্ষেত্রেই চালনায় ভারসাম্য নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।

এনফিল্ড ঐতিহ্যের সমগ্র নান্দনিকতার ছোঁয়া পড়েছে নকশায়। স্টিলের ফ্রেমটি চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্যই স্বাভাবিক হ্যান্ড গ্রিপ্স, হ্যান্ডেলবার ও সামঞ্জস্যপূর্ণ ফুট পেগ নিশ্চিত করে। বাইক চড়ার মুহূর্তগুলোকে আরামদায়ক করার জন্য সামনের সাসপেনশনে রয়েছে ৪১ মিলিমিটার টেলিস্কোপিক ফর্ক আর পেছনেরটাতে একটি টুইন সাইড সুইং আর্ম। যথাযথ নিরাপত্তার স্বার্থে এবিএস (অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম) হিসেবে কাজ করবে সামনে এবং পিছনে উভয় দিকের হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক। সতর্ক সংকেত দেওয়ার জন্য যন্ত্রাংশ প্যানেলে রয়েছে চিরাচরিত স্পিডোমিটার ও একটি ফুয়েল লেভেল লাইট।

এছাড়াও সঙ্গে বহন করার জন্য আছে হার্ডসাইড কেস, পেছনের র‍্যাক ও ব্যাগ লাইনারসহ আনুষঙ্গিক নানাবিধ সংযোজনের ব্যবস্থা।

বুলেট মডেলকে রয়্যাল এনফিল্ড ঐতিহ্যের প্রতীক বলা যেতে পারে। ক্লাসিকের মতো এটাতেও রয়েছে ৩৪৯ সিসির জে-সিরিজ ইঞ্জিন ও ৬,১০০ আরপিএম-এ ২০.২ বিএইচপি হর্সপাওয়ার। পাশাপাশি এটি চার হাজার আরপিএম-এ প্রতি ফুট দূরত্বে ১৯.৯ পাউন্ড টর্ক দিতে সক্ষম। অর্থাৎ উচ্চগতির জন্য নয়; এটি বরং প্রতি ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ মাইল যাত্রার জন্য উত্তম।

সিরিজটি ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মোটরসাইকেল ডিজাইন। ১৯৫৫ সালে মূল প্রতিষ্ঠান এনফিল্ড সাইকেল কোম্পানি ভারতের মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে অংশীদারিত্বে গঠন করেছিল এনফিল্ড অব ইন্ডিয়া। মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) কেন্দ্রিক এনফিল্ড সাইকেলের উত্তরসূরি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল এই রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট অ্যাসেম্বলির মাধ্যমেই। বুলেটের চিত্তাকর্ষক নকশায় এখনও সেই ঐতিহাসিক ছাপ বিদ্যমান, যা অনায়াসেই যেকোনো মোটরসাইকেল চালকের মন জয় করে নেয়। বুলেটের ভিনদেশী নকশা এবং ইউএসবি চার্জিং পোর্ট বিশেষভাবে নজর কাড়ে।

স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হ্যান্ডলিং, সাসপেনশন, এবং ডুয়্যাল সিট সেটআপ একা একা বা কাউকে সঙ্গে নিয়ে চালানো উভয় ক্ষেত্রে ন্যাভিগেশনটা চালকের জন্য সহজাত করে তোলে। সিটটি মোটা-প্যাডের হওয়ায় তা ৮০৫ মিলিমিটার উচ্চতায় চালক ও যাত্রী দুইজনের জন্যই বেশ সহজসাধ্য এবং আরামপ্রদ।

১৩ লিটার ধারণক্ষমতার জ্বালানি ট্যাঙ্ক একবার ভরে নিলে ৩০০ মাইলেরও বেশি নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করা যাবে।

উন্নত প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত হওয়ায় রয়্যাল এনফিল্ড পরিবারের সবচেয়ে আধুনিক সদস্য হচ্ছে হান্টার। অবশ্য ক্লাসিক মডেলের ধারা অব্যাহত রেখে এর একক সিলিন্ডার ও ৩৪৯ সিসির ইঞ্জিনের ক্ষমতা একই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ৬,১০০ আরপিএমে ১৪.৮৭ কিলোওয়াট এবং চার হাজার আরপিএমে ২৭ এনএম টর্ক।

সামগ্রিক নকশা অনুসারে এই সিরিজ শহুরে পরিবেশের জন্য উপযুক্ত। স্টিলের ফ্রেমটি ন্যাভিগেশন এবং চালক ও যাত্রী দুজনের ফুটপেগের সহায়ক। এখানেও আছে সামনের সাসপেনশনে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনের সাসপেনশনে টুইন সাইড সুইং আর্ম।

এর আকার ও সর্বোচ্চ ১৮১ কেজি ওজন শামাল দিতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মোটরসাইকেল চালককে হিমশিম খেতে হয় না। ৩১.১ ইঞ্চি বা ৭৯০ মিলিমিটারের উচ্চতায় বসার জায়গাটি যেকোনো চালক ও যাত্রীর জন্য স্বাভাবিক। তাছাড়া চলন্ত অবস্থায় সুরক্ষার জন্য সামনে এবং পিছনে এবিসসহ হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক তো থাকছেই।

“হান্টার-৩৫০”-এর যন্ত্রাদি ডিজিটাল হওয়ায় পাওয়ার আউটলেট, হার্ডসাইড কেস এবং স্টোরেজ কভারের সুবিধা আছে। অ্যালুমিনিয়ামের চাকাগুলোতেও লাগানো আছে টিউবলেস টায়ার।

অন্যান্য সিরিজগুলোর সঙ্গে খুব একটা তারতম্য নেই রয়্যাল এনফিল্ড মিটিওর ৩৫০-এর। ৩৪৯ সিসির একক সিলিন্ডার ইঞ্জিনে অপরিবর্তিত আছে চার হাজার আরপিএমে ২৭ এনএম (নিউটন-মিটার) টর্ক এবং ৬,১০০ আরপিএমে ২০.২ বিএইচপির ক্ষমতা।

টেকসই ও পালিশ করা সর্বাঙ্গে জেনুইন মোটরসাইকেল এক্সেসরিজের (জিএমএ) বিশাল বহর। ইঞ্জিন এবং গিয়ারের মাঝে সুষ্ঠু যোগসাজশ এক মসৃণ রাইডিং অভিজ্ঞতা দেয়। প্রতি ঘণ্টায় গতি ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেলেও কম্পন অনুভূত হবে না।

মিটিওর-৩৫০ ও সমস্বরে জানান দেয় স্টিল ফ্রেম এবং সামনের ও পেছনের সাসপেনশনে যথাক্রমে টেলিস্কোপিক ফর্ক ও টুইন সাইড সুইং আর্মের উপস্থিতি। গ্রাউন্ড থেকে ৩০.১ ইঞ্চি বা ৭৬৪.৫ মিলিমিটারের উচ্চতায় ডুয়্যাল সিট এবং সামনের-পেছনের দুই চাকাতে এবিএসের হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক পূর্ণ নিরাপত্তার পরিপূরক।

স্পিডোমিটার, ট্যাকোমিটার, ট্রিপ ওডোমিটার, কম্পাস এবং ন্যাভিগেশন সিস্টেমের ডিজিটাল যন্ত্রাংশ বিশ্বমানের সুবিধা হিসেবে আলাদা আকর্ষণ রাখে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিচিত্র রঙ ও এবিএস চ্যানেল ভেদে ক্লাসিক সিরিজের দাম চলছে এক লাখ ৯৩ হাজার ৮০ রুপি থেকে দুই লাখ ২৪ হাজার ৭৫৫ রুপি পর্যন্ত। যেটি বাংলাদেশি টাকায় আড়াই লাখ থেকে দুই লাখ ৯৭ হাজার ৩৬ টাকা (১ ভারতীয় রুপি = ১.৩২ বাংলাদেশি টাকা)। বেশকিছু নতুন রঙের ভার্সন সংযোজন হয়ে বুলেট মডেলগুলোর মূল্য দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২ থেকে এক লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৬ রুপি, যা প্রায় দুই লাখ ২৯ হাজার ৩৭৯ টাকা থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার ৯৩১ টাকার সমপরিমাণ।

এক লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৫ রুপি (প্রায় এক লাখ ৯৮ হাজার ১০৭ থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার ৮২৩ টাকা) দামে ভারতীয় গ্রাহকদের নিকট পরিবেশিত হচ্ছে বর্ণীল হান্টারগুলো। আর দুই লাখ পাঁচ হাজার ৯০০ থেকে দুই লাখ ২৯ হাজার ৯০০ রুপি (প্রায় দুই লাখ ৭২ হাজার ১১৭ টাকা থেকে তিন লাখ তিন হাজার ৮৩৫ টাকা) দামের পরিধি নিয়ে মোটরসাইকেল চালকদের নজর কেড়েছে অবকাশ রাইডিংয়ের মিটিওর-৩৫০ ক্রুজগুলো।

বাংলাদেশে মোটরসাইকেলগুলোর দাম নির্ভর করছে উদ্বোধনকালীন বাজার পরিস্থিতি এবং ডলার মূল্যের ওপর। ইফাদ মোটরসের তথ্যমতে, ডলার রেট প্রায় ১২৫ (বাংলাদেশি) টাকা হলে রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০ সিরিজগুলোর দাম হতে পারে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা।

রয়্যাল এনফিল্ড-৩৫০ এর চারটি সিরিজই প্রতিনিধিত্ব করছে বিশ্বমানের মোটরসাইকেল শিল্পকে। তবে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়ায় বৈচিত্র্য আসতে পারে মোটরসাইকেলপ্রেমীদের ভিন্ন চাহিদার ভিত্তিতে। বয়সের সীমারেখা নির্বিশেষে ঐতিহ্যবাহী মোটরসাইকেল চালকরা তাদের নস্টালজিয়া অনুশীলনে সাদরে গ্রহণ করে নিতে পারেন ক্লাসিক মডেলটিকে। সাবলীলতা ও নির্ভরযোগ্যতায় ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া শ্রেণির প্রথম পছন্দ হতে পারে বুলেট সিরিজ।

শহুরে চালকদের বিশেষ করে স্বল্প বয়সীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষস্থানটি দখল করতে পারে হান্টার ও মিটিওর। তবে এবিএস থাকলেও এগুলোর উচ্চগতি বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোতে সতর্কতার দাবি রাখে। আর খারাপ সড়ক বা গ্রাম্য পথে দূর পাল্লায় হান্টারকে পরখ করে দেখা মোটেই উচিত হবে না।

গণপরিবহন,ব্যবসা-বাণিজ্য,মোটরসাইকেল
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close