• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পরিবহনকালে শত শত কোটি টাকার পোশাকপণ্য চুরি হয়েছে: বিজিএমইএ

প্রকাশ:  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহনকালে পোশাক শিল্পের শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য পণ্য চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পোশাক শিল্পে আইন-শৃঙ্খলা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

ফারুক হাসান বলেন, পোশাকপণ্য চুরির বিষয়টি নিয়ে আমরা দফায়-দফায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন আইন প্রয়াগকারী সংস্থার প্রধান এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সর্বশেষ র‍্যাব ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক শিল্পের পণ্য চুরির একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা শাহেদসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এজন্য বিজিএমইএ পরিবারের পক্ষ থেকে র‍্যাবসহ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি, অনতিবিলম্বে এই চক্রের অন্যান্য অপরাধীদেরও গ্রেপ্তার করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তিনি বলেন, পোশাক শিল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বব্যাপী নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে পোশাক শিল্প। বিগত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকের কল্যাণ এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প নির্মাণে পরিশ্রম করেছি, বিনিয়োগ করেছি এবং সফলতা পেয়েছি, তা সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করেছে। এখন আমাদের পোশাক কারখানাগুলো কেবল নিরাপদই নয়, বরং আরো গতিশীল, আধুনিক, জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠেছে।

‘ইউএসজিবিসি কর্তৃক প্রকাশিত সর্বাধিক সংখ্যক সবুজ কারখানার আবাসস্থল, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ। পাশাপাশি সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। ২০২২ সালে আমাদের ৩০টি কারখানা গ্রিন হয়েছে। কোন একক বছরে এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক গ্রিন কারখানার সংখ্যা। বর্তমানে বৈশ্বিক ক্রেতারা পোশাক সোর্সিং করার জন্য বাংলাদেশেকে তাদের পছন্দের শীর্ষে রেখেছেন। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ডেনিমের ক্ষেত্রে চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন প্রথম অবস্থানে। সরকারের নীতিগত সহযোগিতায় ইউরোপের বাজারে আমরা শিগগিরই এক নম্বর অবস্থান নিতে সমর্থ হবো, সে বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’

তিনি বলেন, আমরা ব্র্যান্ডিং এবং অ্যাপারেল ডিপ্লোমেনির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পোশাক শিল্পকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছি। বেলজিয়ামের রানি, ম্যাখিন্ডে গতকাল নারায়ণগঞ্জে আমাদের একটি গ্রিন পোশাক কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এ পরিদর্শনের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সামাজিক, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জিত গতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের কল্যাণে পোশাক শিল্পের অবদান প্রত্যক্ষ করেছেন। আরও সপ্তাহখানেক আগে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় চার দিনের সফরে এসেছিলেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ।

তিনি পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন এবং শিল্পকে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একটি গ্রিন কারখানা পরিদর্শন করেছেন এবং অভিভূত হয়েছেন। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২ হাজারেরও বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত কোটির পোশাক পণ্য চুরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আমি অত্যন্ত সাম্প্রতিক একটি ঘটনার প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তিনি বলেন, জানুয়ারির শুরুতে ব্রাজিল থেকে ক্রেতা ভিডিওয়ের মাধ্যমে রপ্তানিকারককে জানায় যে প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পোশাক তারা বুঝে পায়নি। এমনকি কিছু কার্টন খালি ছিলো। ওই শিপমেন্টে ২০ হাজারের বেশি পোশাক ছিলো। প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়। এ ঘটনা জানানো হলে র‍্যাব এই চক্রের হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার এবং যে কাভার্ডভ্যানে করে তারা ব্রাজিলের পণ্য চুরি করেছিলো, সেই কাভার্ডভ্যান জব্দ এবং সঙ্গে চালানও সংগ্রহ করেছে। চক্রের প্রধান হোতা, গডফাদার শাহেদের নামে ১৭-১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছে যে, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজার দর যাচাই করে। যদি পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবেই তারা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে।

‘আমরা অবাক হয়ে যাই, যখন দেখি যে, শাহেদের মতো একজন চোর কোটি-কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়েছে এবং বছরের পর বছর বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। প্রায় বিরামহীনভাবে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শাহেদ এই অপরাধ করতে পেরেছে। দুই বছর আগে বন্দর নগরীতে দায়ের করা ছয়টি মামলায় আট মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই জামিন পাওয়ার পর তিনি পুরানো পেশায় ফিরে এসেছে।’

তিনি বলেন, এই ধরনের অপরাধীরা কীভাবে এতো সহজে জামিন পায় সেটি আমাদের প্রশ্ন। এতে করে তারা পরে আরো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করেন না। শুধু শাহেদ নয়, গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতে আরো মাস্টারমাইন্ড, আরো চক্র রয়েছে, যারা একই কাজ করছে- ধরা পড়লেও শাস্তি ভোগ না করে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এই অপরাধীদের কারণে আমাদের পোশাক শিল্প বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম

বিজিএমইএ,চুরি,পণ্য,পোশাক,টাকা,পরিবহন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close