• রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বাড়ছে সর্দি-কাশি-জ্বর, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা

প্রকাশ:  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০০ | আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

দেশে গত কয়েক দিন ধরে মানুষের মধ্যে হাঁচি, কাশি, সর্দি-জ্বরের উপসর্গ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার। এই অবস্থায় আগামী কয়েক মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসেরও কম সময়ে কোভিড সংক্রমিত হয়ে দেশে ১১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে মারা গেছেন ছয়জন, আর জানুয়ারি মাসে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।

অন্যদিকে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ কোভিড আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হওয়ার পর থেকে এ বছরের জানুয়ারির ১১ তারিখ পর্যন্ত চার মাসে কারো মৃত্যু হয়নি।

গত বছরের ডিসেম্বরে যেখানে পুরো মাসে কোভিড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২১০ জনের, সেখানে চলমান ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত এক সপ্তাহেই শনাক্তের সংখ্যা ৩৫৭ জন।

সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে মানুষের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতা, ভ্যাকসিন না নেওয়া ও নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ

করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট “জেএন ডট ওয়ান” বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে এ বছরের শুরুতেই সতর্ক করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশেও এই নতুন সাব ভ্যারিয়ান্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে কিছুদিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য শারফু্দ্দিন আহমেদ।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কোভিড আক্রান্ত ৪৮ জন রোগীর জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে করা এক গবেষণা চালায় বিএসএমএমইউ। সেখানে ৪৮ জনের মধ্যে তিনজন নতুন ভ্যারিয়েন্ট জেএন ডট ওয়ানে আক্রান্ত বলে জানা যায়।

জেএন ডট ওয়ান আক্রান্ত রোগীদের প্রত্যেকেরই দুই ডোজ টিকা দেওয়া ছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “এমন রোগীও দেখা গেছে যিনি তৃতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন – অর্থাৎ এর আগে দুইবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এবং তৃতীয়বার যখন আক্রান্ত হয়েছেন, তখন জেএন ডট ওয়ান সাব ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ হয়েছে তার।”

আরও বাড়ার আশঙ্কা

কোভিডের নতুন সাব ভ্যারিয়ান্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি ঠেকাতে হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক সহ সব ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সরকারি নির্দেশনা মানার বিষয়ে জোর দিতে হবে এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে বলে মনে করেন আইইডিসিআরের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন।

তার ভাষ্য, “অসুস্থ হলে মানুষ স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই আগে যায়। কাজেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে কোভিড ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এসব জায়গায় দরজায় মাস্ক সরবরাহ করা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখার ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।”

এছাড়া যাদের দুই ডোজ টিকা দেওয়া আছে তাদের পরবর্তী ডোজ টিকা নিতে উৎসাহিত করা, যারা দুই ডোজ টিকা দেয়নি তাদের শনাক্ত করে তাদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া, বয়স্কদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার মতো কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়েও তাগিদ দেন তিনি।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এ বছরে জুন-জুলাই পর্যন্ত কোভিড সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে।

বর্তমানে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে মানুষ টেস্ট করাচ্ছে না। আর টেস্ট না করানোর ফলে প্রয়োজনীয় সতর্কতাও মানছেন না অনেকে, ফলশ্রুতিতে কোভিড সংক্রমণ আরও বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টেস্ট করার আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ করে যেসব ব্যক্তি ঝুঁকিপূর্ণ বয়সে আছেন বা যাদের ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপের মত শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক হওয়া বেশি জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে বর্তমানে শীত শেষে বসন্ত এসেছে। এই মৌসুমে মানুষের মধ্যে সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। কোভিডের পাশাপাশি বসন্ত মৌসুমে এবং আসন্ন গ্রীষ্মে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাবও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কার কথা জানান ডা. মোশতাক হোসেন।

করোনাভাইরাস,কোভিডে মৃত্যু,স্বাস্থ্য
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close