• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান বাম জোটের

প্রকাশ:  ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৫৯
নিজস্ব প্রতিবেদক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ। ভুয়া ভোটের ভুয়া নির্বাচন হয়েছে মন্তব্য করে জোটের সমন্বয়ক মো. শাহ আলম বলেছেন, সরকার নির্বাচনের ফলাফল আগেই তৈরি করে রেখেছে। শুধুমাত্র সাজানো ছক বাস্তবায়ন করেছে। তাদেরকে এ প্রহসনের নির্বাচনের জন্য খেসারত দিতে হবে।

রোববার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে পল্টনের মণি সিংহ সড়ক মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্পর্কিত খবর

    বাম জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কানুযায়ী নির্বাচনে সরকারের ছকের বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভোর থেকেই দেশব্যাপী ভোট কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্য জালিয়াতি, ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কার সিল মারতে বাধ্য করা, বিরোধী দলীয় ভোটারদের জোর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, কোথাও সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি অসংখ্য ঘটনার মধ্যে দিয়ে সমগ্র নির্বাচনকে পুরোপুরি অর্থহীন ও হাস্যকর করে তোলা হয়েছে।

    তারা বলেন, গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে কোটি কোটি ভোটারদের ভোটাধিকার হরণ করে আরও একবার যে জবরদস্তিমূলক প্রহসনের নির্বাচন মঞ্চস্থ করা হলো বাম গণতান্ত্রিক জোট এই নির্বাচন ও নির্বাচনের ফলাফরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ভর্তি করে রাখা নিরাপত্তার নামে নজিরবিহীন ভয়ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও ন্যাক্কারজনক ভূমিকা, বাম জোটের একাধিক প্রার্থীসহ বিরোধী দলের প্রার্থী ও এজেন্টদের আটক, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেওয়ায় দেশবাসীও এই নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

    হুমকি-ধমকি দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ভোটের মাধ্যমে জেতার আয়োজন করেছে মন্তব্য করে জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সমুদয় তৎপরতার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে যেটুকু আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাম জোটের নেতৃবৃন্দ মনে করেন- দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোন অবকাশ নেই- তা আরেকবার প্রমাণ করল এই নির্বাচন ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে না। এই নির্বাচনে জনগণের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

    তারা জানান, নওগাঁয় সিপিবি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাঃ ফজলুর রহমানের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে ও দলীয় লোকজন ভোট কেন্দ্রে যেতে চাইলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। চারজন নেতাকর্মীকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুর-১৪ আসনের প্রার্থী ডাঃ সাজেদুল হক রুবেলের এজেন্টের ওপর হামলা ও দলীয় কর্মীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোও সরকারী দলের লোকজন ভেঙ্গে ফেলে। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এছাড়াও নেত্রকোনা, রংপুর, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, বরিশালসহ প্রভৃতি স্থানে সিপিবি’র প্রার্থী ও এজেন্টদের ওপর হুমকি প্রদর্শন এবং নির্বাচন কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, কেন্দ্র দখল করে নেয়া হয়।

    বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারী দলের পক্ষ থেকে আগে থেকেই আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছিল। অনেক জায়গায় গত রাতেই নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা, ভোট কেন্দ্রে না যেতে বিভিন্ন এলাকায় হুমকি দেয়া, এজেন্টদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি প্রদান ও যারা গিয়েছিল তাদের বের করে দেয়া, অসংখ্য কেন্দ্র দখল করে নেয়া, এজেন্টের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকার নির্বাচনকে হাস্যকর নির্বাচনে পরিণত করেছে।

    তারা বলেন, নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা যায়নি। অনেক ভোট কেন্দ্রে ‘ভোটার আছে, ব্যালট নেই’- এমন ঘটনাও ঘটেছে। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের আঙ্গুলে কালি লাগিয়ে দেয়ার পর ব্যালট না দিয়ে বলা হয়েছে আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি ভোটারদের ওপর পুলিশও হামলা করেছে। অনেক জায়গায় ভোটারদের প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করছে সরকারী দলের লোকজন। বিভিন্ন স্থানে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। পীরগঞ্জে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বাইরে থেকে তালা লাগানো, কিন্তু পরে দেখা যায় ভেতরে সরকার দলীয় লোকজন নৌকা মার্কায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরা ও নকল ভোটার দিয়ে বুথ জ্যাম করে রাখা হয়েছিল।

    বাম গণতান্ত্রিক জোটের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জোটের সমন্বয়ক ও সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম। উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের মোশাররফ হোসেন নান্নু, সিপিবি’র রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক প্রমুখ।

    পিবিডি/আরিফ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close