• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন প্যানেলে লড়বেন যারা

প্রকাশ:  ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:০৭ | আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০১:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন এ ঘিরে সরগরম। ছাত্র সংগঠনগুলোর ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ডে গতি এসেছে। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ছাত্র নেতাদের তুমুল দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। প্রার্থী হতে রাত-বিরাত পর্যন্ত মূল দল ও ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা।

ডাকসু’র সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরের বছর অর্থাৎ ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গঠিত হয়েছিল ডাকসু। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই অধিকার আদায়ের লড়ােইয়ে ডাকসু গৌরবময় ভূমিকা পালন করে আসছে। ডাকসুর প্রধান তিনটি পদ ভিপি-জিএস-এজিএস পদে যুগে যুগে যারা এসেছেন- তারা প্রত্যেকেই ছিলেন মেধাবী, সুপরিচিত ও সাংগঠনিক গুনাবলীর অধিকারী। প্রায় তিন দশক পর আবার ডাকসু’র চাকা সচল হওয়ায় সেই ঐতিহ্য বাজায় রেখেই প্যানেল গঠনের পরিকল্পনা করছে ঢাবি ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচিতি আছে, নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর রেকর্ড নেই, ফল ভালো এবং সাংগঠনিক প্রজ্ঞার অধিকারীদেরই ভিপি-জিএস-এজিএস পদে বেছে নিতে চান তারা। পাশাপাশি আদর্শিক মিল আছে- এমন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাদেরও নেয়া হতে পারে প্যানেলে। আবাসিক হলগুলোর নির্বাচনে হল সংসদ শাখার বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতা এবং যারা নতুন করে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী তারা অগ্রাধিকার তালিকায়।

ডাকসু নির্বাচনে সামনে সব ছাত্র সংগঠনই সক্রিয় হয়ে ওঠলে বাড়তি আলোচনা হচ্ছে প্রধান দুই ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের প্যানেল ঘিরে। কারা থাকছেন এ দুই সংগঠনের প্যানেলে সেটিই এখন চায়ের কাপে আলোচনার ঝড় তুলছে। যদিও ক্যাম্পাসে গত দশ বছর ধরে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছিল অনুজ্জ্বল, নিষ্ক্রিয় ও কোনঠাসা। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, সাংগঠনিক তৎপরতায় কয়েকধাপ এগিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সঙ্গে লড়াই দেয়ার মতো নিরব সমর্থন ছাত্রদল ধরে রেখেছে।

ছাত্রলীগ

জাতীয় রাজনীতির মতোই ডাকসু নির্বাচনেও এবার জোটগত প্যানেল গঠনের তৎপার হয়েছে প্রধান দুই ছাত্র সংগঠন। এ নিয়ে কথাবার্তাও গড়িয়েছে বহুদূর। ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র আন্দোলন, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ (বিসিএল) ও ছাত্র সমিতির সঙ্গে কথাবার্তা চলছে ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগের কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) আখতারুজ্জামান।

ছাত্রলীগ নেতারা জানান, প্যানেলে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া টিএসসিভিত্তিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলছেন তাঁরা। দলে ভেড়াতে টার্গেট করছেন পাহাড়ি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও। স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ করতে ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ২০ দফা দাবি দেওয়া হয়েছে। হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের ভোট পেতে পরিবহন সংকট কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বাসের রুট বৃদ্ধিসহ নানা দাবি তুলেছে সংগঠনটি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের বয়সও ৩০-এর মধ্যে। ফলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে ভিপি-জিএস পদে ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সও আলোচনায় আছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, প্যানেল গঠনে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সমন্বয়ে মনোনয়ন বোর্ড হবে। তারাই প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। মেধাবী, ক্লিন ইমেজ এবং ছাত্রবান্ধব নেতারাই আসবে প্যানেলে।

ছাত্রদল

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় প্যানেলের চিন্তা-ভাবনা করছে ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠন। এক্ষেত্রে প্রধান প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগের প্যানেলের বিরুদ্ধে জয়ীবিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সহজ বলে মনে করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এমন মনোভাবের আভাস পাওয়া গেছে। একাধিক ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদলের ভাবনায় রয়েছে, ভিপি পদে তাদের সংগঠন থেকে প্রার্থী দিয়ে জিএস ও এজিএস পদের প্রার্থী হোক ভিন্ন সংগঠন থেকে। এরই মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। আর বামধারার প্রগতিশীল ছাত্রজোট চাইছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্যানেল করতে।

ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কোটা সংস্কারের সঙ্গে জড়িত ছাত্রনেতারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগে প্রার্থিতা কীভাবে হবে, ভোটার কারা হবে, তা পরিষ্কার নয়। সর্বোপরি ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন হতে হবে। সেক্ষেত্রে তফসিলের আগে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা কঠিন। তবে ভিপি, জিএস এবং এজিএস পদের প্রার্থিতা নিয়ে ছাত্রদল এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোটে আলোচনা শুরু হয়েছে।

৩০ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা প্রার্থী হতে পারবেন না। ফলে ছাত্রদলকে প্যানেল গঠনে বেগ পেতে হবে। ছাত্রদলের সাত শতাধিক সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগেরই বয়স ৩০-এর বেশি।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজিব আহসান ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাবি বাংলা বিভাগে ভর্তি হন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ভর্তি হন ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ২০০২-০৩ শিক্ষাবর্ষে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন তৎকালীন সংস্কৃত ও পালি বিভাগে ভর্তি হন।

ছাত্রদলের প্যানেলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির ছাত্রদল সভাপতি আবুল বাশার সিদ্দিকী বলেন, প্রশাসন ছাত্রলীগের দাবি অনুযায়ী গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করেছে। প্রার্থিতা যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের কথা চিন্তা করেই। তবু আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় ও হলপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। তফসিল হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গ্রহণযোগ্যতা আছে, বিগত দিনে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল, ছাত্রবান্ধব, মেধাবী শিক্ষার্থীদেরই প্যানেলে রাখা হবে।

অন্যান্য

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের চার নেতার মধ্যে তিনজনই ঢাবি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, ঢাবি শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক রাজীব দাস প্রার্থী হতে পারেন। লিটন নন্দী বলেন, আমরা একটি বৃহত্তর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গড়ে তুলব।সঙ্গে প্রগতিশীল বিতার্কিক ও খেলোয়াড়রাও থাকবে আমাদের প্যানেলে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সমর্থিত সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চারজনের মধ্যে তিনজনই ঢাবির নিয়মিত ছাত্র নয়। একমাত্র ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজীব গান্ধী রায় প্রার্থী হতে পারবেন।

বাসদ (মার্কসবাদী) সমর্থিত সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাড়া অন্য তিনজন ঢাবির সাবেক ও বর্তমান ছাত্র। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর স্নাতকোত্তর চলছে। ফলে তিনি প্রার্থী হতে পারেন। আর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের বয়স ৩০ ছাড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমার মাস্টার্স শেষ এবং অন্য কোথাও ভর্তি নেই। ফলে তিনি প্রার্থী হতে পারছেন না।

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। ঢাবি শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর মাস্টার্স শেষ এবং অন্য কোথাও ভর্তি নেই। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক ইশতিয়াক ঢাবি আইন বিভাগের ছাত্র। তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য।

জাসদ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। ফলে তারা প্রার্থী হতে পারছেন না। আর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পাল ঢাবি শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে চন্দ্রনাথের পড়াশোনা শেষ হওয়ায় প্রার্থী হতে পারছেন না।

এখানে যোগ্য প্রার্থী কেবল মাসুদ। জাসদ (আম্বিয়া) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নয়। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুর রহমান সাগর ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রাহাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী।

ফলে তারা প্রার্থী হতে পারবেন। বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঢাবির ছাত্র নন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রুদ্র রফিকুল্লাহ রাব্বী এবং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেল ঢাবির শিক্ষার্থী। তারা প্রার্থী হতে পারেন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত হলে হলে ভোটগ্রহণ চলবে। অনার্স, মাস্টার্স, এমফিলের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও ৩০ বছর বয়সী একাধিক মাস্টার্স, সান্ধ্যকালীন ও অন্যান্য কোর্সের শিক্ষার্থীরাও ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন- এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই প্যানেল নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো।

এনই

ডাকসু
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close