• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
  • ||

বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ: প্রতি মিনিটে রোগী আসছে হাসপাতালে

প্রকাশ:  ৩০ মার্চ ২০২২, ০৯:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক

দু-এক মিনিট পর পরই সিএনজি অথবা এম্বুলেন্স এসে দাঁড়াচ্ছে আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালের মূল গেটে। এরপর স্বজনরা দ্রুত ধরাধরি করে নামাচ্ছেন ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগীদের। পরে তাদেরকে মেডিকেলের হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের কেউ একদিন আগে, কেউবা দুইদিন আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সরজমিন আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এমনই একই পরিবারের দু’জন আক্রান্ত হয়ে আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে ভর্তি হন। মা ও মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন হাসপাতালটিতে। ৪ বছরের শিশুকন্যার পাশের শয্যায় মা সুইটি আক্তারও ভর্তি রয়েছেন।

রাতের দিকে শিশুটির প্রচণ্ড বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। আর মায়ের শুরু হয় সকালের দিকে। হাসপাতালের শয্যায় কিছুক্ষণ পর পর ২৬ বছর বয়সী মা কাতরাচ্ছেন। আর চোখ মিলে মেয়ের দিকে তাকাচ্ছেন। শিশুটি চুপচাপ থাকলেও মা পেটের ব্যথায় চিৎকার করে উঠছেন। একই পরিবারের এই দুই সদস্য ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যাত্রাবাড়ীর মীরহাজারীবাগ এলাকায়।

গতকাল সাড়ে ১২টায় ভর্তি হন হাসপাতালটিতে। তাদের স্বজনরা জানান, অতিরিক্ত গরম ও পানির কারণে তাদের ডায়রিয়া হয়ে থাকতে পারে। তাদের এক স্বজন জানান, তারা বেশির ভাগ সময় ফুটানো পানি পান করেন না। শনিরআখড়া থেকে এসেছেন আরেক রোগী নাজমুল। বয়স ৩৫ বছর। তার দুইদিন আগে থেকেই বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। রোগীর এক আত্মীয় জানান, লাইনের পানি খেয়েছিলেন। হয়তো তা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। কামরাঙ্গীরচর থেকে এসেছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ১৮ বছর বয়সী আমেনা বেগম।

হাসপাতালে রোগীর শয্যার পাশে বসে তার স্বামী এই প্রতিবেদককে জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয় তার স্ত্রীর। কালবিলম্ব না করেই দ্রুত আসেন এই হাসপাতালে। দুপুর আড়াইটার দিকে ভর্তি হন হাসপাতালটিতে। তারা লাইনের পানিই পান করেন। কখনো ফুটানো পানি পান করেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে, ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে প্রায় প্রতি মিনিটে মিনিটে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩৮ জন ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। আর গত ১৪ ঘণ্টায় (অর্থাৎ রাত ১২টার পর থেকে) মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৭৬৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। এই সংখ্যা আগের দিন উল্লিখিত সময়ে ছিল ৭২৪ জন। ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি’)।

আইসিডিডিআর,বি’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। হাসপাতালের বাইরে তাঁবুতেও রোগীদের জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। এখন হাসপাতালের বাইরে বড় দুইটি অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগীদের বেশির ভাগ বয়স্ক ও শিশু। তবে চিকিৎসাসেবা দেয়ার বিষয়ে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।

ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে আইসিডিডিআর,বি’। এখন সেখানে প্রায় ১৫০০ রোগীর ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন।

আইসিডিডিআর,বি’র এক চিকিৎসক জানান, ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি’ সূত্র বলছে, সারাবছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছু বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার রোগী বেশি আসছে।

আইসিডিডিআর,বি’র এসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিস্ট ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। হঠাৎ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গরমে ডায়রিয়ার জীবাণুটি অনুকূল পরিবেশ পায়। এ সময়ে তারা বেশিক্ষণ তারা ফাইট করে বাঁচতে পারে। তাছাড়া গরমের সময়ে জীবাণুটি বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, অনেক বেশি ছড়িয়ে থাকে। তাছাড়া মানুষ গরমের কারণে পিপাসার্ত হয় এবং পানি পানের ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে না। এ দুটি কারণ ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়াতে সাহায্য করে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মোহাম্মদপুর, শনিরআখড়া, উত্তরা থেকে বেশি রোগী আসছেন বলে এই চিকিৎসক উল্লেখ করেন। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি আসছেন। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের বিকল্প নাই। সবচেয়ে ভালো করে তৈরি করা খাবার ও ফুটানো পানি খেতে হবে। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

আইসিডিডিআর,বি’র বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, চলতি মাসের ২৯শে মার্চ পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে মোট ২৭ হাজার ৩৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।

পূর্ব পশ্চিম/জেআর

ডায়রিয়া
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close