• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ডা. তারিমসহ পাঁচ চিকিৎসক যেভাবে জড়ালেন প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে!

প্রকাশ:  ২২ আগস্ট ২০২৩, ০২:০৫
শেখ নাদীর শাহ্,খুলনা প্রতিনিধি

মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনার পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঢাকার সদস্যরা। রোববার (২০ আগস্ট) রাতে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার টিম।

গ্রেপ্তারকৃতরা হল, চক্রের অন্যতম খুলনার থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের উপদেষ্টা ও খুমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম (৪০), ডা. লুইস সৌরভ সরকার (৩০), ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া (২৫), ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল (২৬) ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা (২৪)। তাদের মধ্যে ডা. শর্মিষ্ঠা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও অন্যরা বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী দেখেন। এসময় তাদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জব্দ করা হয়।

সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান আজ সোমবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় এই সকল চিকিৎসকদের প্রশ্নপত্র ফাঁসে কিভাবে জড়িত তার ইষৎ বর্ণনা দিয়ে জানান, গত ১৩ আগস্ট মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত সাত চিকিৎসকসহ সর্বোমোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতদের আটজন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল সংখ্যক ব্যাংক চেক ও এ্যাডমিড কার্ড জব্দ করা হয়।

এর আগে, গ্রেপ্তার হওয়া এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি জব্দ করা হয়। সেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা তার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্য সদস্যদের নামসহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম একজনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার ইউনিট। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মূলহোতা ডা. মো. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার এবং খুলনা শহরের বহুলালোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের উপদেষ্টা। ডাক্তারি পেশা বাদ দিয়ে কোচিং ব্যবসায় জড়ায় সে। প্রতিষ্ঠা করেন থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টার। এমনকি নিজেকে ডাক্তার তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচয় দেন তিনি।

আজাদ রহমান জানান, মেডিক্যালের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন ডা. তারিম। এমনকি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত অন্যতম এই হোতা শত শত শিক্ষার্থীদের এভাবে ভর্তি করিয়ে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তার এবং তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে প্রায় ২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গেছে। হাসপাতাল, ফ্ল্যাট, জমি, মৎস্য ঘের, হোটেল শেয়ারসহ গড়েছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদের পাহাড়। এর আগেও আলোচিত ডা. তারিমের বিরুদ্ধে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের কথা জানান তিনি।

সিআইডির মুখপাত্র বলেন, ডা. লুইস সৌরভ সরকার খুলনা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও খুলনা শহরের আলোচিত মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার থ্রি ডক্টরসের শিক্ষক। বর্তমানে একটি বেসরকারি এনজিওতে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত সে। ডা. মুসতাহিন হাসান লামিয়া ২০১৫-১৬ সেশনের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান অর্জন করেন। তিনি খুলনা থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক ডা. ইউনুসুজ্জামান খান তারিমের স্পেশাল ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও তাকে বাসায়ও পড়াতেন তারিম। কম মেধাবী হওয়ার পরও তারিমের কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়ে তিনি মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। তারিমের ঘনিষ্ঠজন ও তৎকালীন কোচিংয়ের তিনজন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। জাতীয় মেধায় ১১তম হওয়ার পরও তিনি চারটি ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সামিনেশনের সব সাবজেক্টে ফেল করেন।

পরবর্তীতে একাধিকবারের চেষ্টায় পাশ করেছেন। লামিয়ার প্রশ্ন পেয়ে চান্স পাওয়ার বিষয়টি খুলনার চিকিৎসক মহলে ওপেন সিক্রেট। লামিয়ার ভর্তির জন্য তার স্বামী শেখ ওসমান গনি ও ডা. তারিমের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া ডা. শর্মিষ্ঠা মন্ডল ও ডা. নাজিয়া মেহজাবিন তিশা উভয়েই ২০১৫-১৬ সেশনের ফাঁস করা প্রশ্নপত্র থ্রি ডক্টরসের মালিকের কাছ থেকে কিনে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ডা. তারিম চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। প্রায় দেড় যুগ ধরে তিনি মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের সাথে জড়িত।

প্রশ্নফাঁস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close