• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সাত দশকেও হয়নি ভাষা সৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

প্রকাশ:  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:২৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু সাত দশকের এই দীর্ঘ সময়ে ভাষাসৈনিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। কারা আমাদের গৌরবের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়নি এতদিনেও। কেন ভাষাসৈনিকদের তালিকা এতদিনেও প্রণয়ন করা হয়নি তার সুস্পষ্ট কোনো উত্তরও কেউ দিতে পারেননি।

বাংলা ভাষার গৌরবের আন্দোলনে সম্পৃক্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশে এক বছর পরে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ১৪ নারীসহ জীবিত ৬৮ জনকে ভাষাসৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে কিছু নামে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি ওই তালিকার। হাইকোর্টের নির্দেশনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাষা সৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল শুধু ঢাকায়। কমিটিতে আরও ছিলেন রফিকুল ইসলাম ও মুনতাসীর মামুন। তবে ওই কমিটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। অন্য জেলাগুলোতেও কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। কমিটির মাত্র একটি বৈঠক হয়েছিল, যাতে কাজের পদ্ধতির জটিলতা নিয়েই শুধু আলোচনা হয়। এরপর থেকে তালিকা প্রণয়নে কাজটি কার্যত বন্ধ রয়েছে।

কমিটির আহ্বায়ক ভাষাসংগ্রামী, লেখক আহমদ রফিক ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পরে তালিকা কি সঠিকভাবে করা সম্ভব? সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে চেষ্টা করা হলেও বিষয়টি নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। নানান জায়গা থেকে ভাষাসংগ্রামী বলে নিজেকে দাবি করে নানাজন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে যত কাজ হয়েছে, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে তেমন কাজ হয়নি। এখন ইচ্ছা থাকলেও আর সেটা সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের বন্ধু-বান্ধব যারা সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, আন্দোলন সংগঠিত করেছেন বা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই আজ প্রয়াত। আমিও এখন অনেক কিছু মনে করতে পারি না।’’

উচ্চ আদালতের রুলে ভাষা সংগ্রামীদের তালিকা তৈরি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে একটি গ্রন্থাগার ও ভাষা জাদুঘর নির্মাণসহ আট দফা নির্দেশনা ছিল। পঞ্চম দফা নির্দেশনা ছিল ভাষাসৈনিকদের তালিকা তৈরি করা। কিন্তু কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাশের গ্রন্থাগার ও ভাষা জাদুঘর নির্মাণের কাজটিও সাইনবোর্ডেই সীমাবদ্ধ।

আহমদ রফিক বলেন, “যতটুকু জানি হাইকোর্ট জাতীয় জাদুঘরকে দুই বছরের মধ্যে এই তালিকা প্রকাশ করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমি নিজ উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ২২৫-২৩০ জনের মতো একটি তালিকা করেছি। কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থা তেমন একটা ভালো না, চোখে দেখতে পাই না। তাই তালিকাটা এগোতে পারছি না।”

আদালতের নির্দেশনার পর পাঁচজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। সবশেষ সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন কে এম খালিদ। তিনি জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় কাজ করেছে। তবে কাজ কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে-জিজ্ঞেস করলে তিনি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কারো সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। বর্তমান সরকারে সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাননি। তিনি জানান, বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। ভাষাসৈনিক ও ইতিহাসবিদদের নিয়ে একটি কমিটি আছে। তারাই বিষয়টি দেখছেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের যতটুকু করণীয়, তা মন্ত্রণালয় করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। ৬৮ ভাষা সৈনিকের তালিকা

প্রথম দফায় প্রকাশিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন- সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবদুল মতিন, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, অলি আহাদ, রওশন আরা বাচ্চু, ডা. শরফুদ্দিন আহমদ, শিল্পী ইমদাদ হোসেন, শিল্পী মুর্তজা বশীর, ড. সুফিয়া আহমেদ, ড. হালিমা খাতুন, গোলাম আরিফ টিপু, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, আবুল মাল আবদুল মুহিত, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক অজয় রায়, আহমদ রফিক, বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর, সন্জীদা খাতুন, কামাল লোহানী, সাঈদ হায়দার, দেবপ্রিয় বড়ুয়া (ডিপি বড়ুয়া), ড. ফারুক আজিজ খান, এম মুজিবুল হক, সাঈদউদ্দিন আহম্মদ, জিয়াদ আলী, সমীরউদ্দীন আহমদ, তোফাজ্জল হোসেন, খালেদা ফেন্সী খানম, জহরত আরা খানম, বাহাউদ্দিন চৌধুরী, শিল্পী আমিনুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জী, আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, আবুল হোসেন, সাইফুল ইসলাম (পাবনা), রণেশ মৈত্র (পাবনা), মমতাজউদ্দীন আহমেদ (রাজশাহী), নাদেরা বেগম, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, বেগম চেমন আরা, আবদুল গফুর, খোদাদাদ খান, নুরুল হক ভূঁইয়া, সৈয়দ ফজলে আলী, আবদুল লতিফ, মোতাহার হোসেন সুফি (রংপুর), কার্জন আলী (গাইবান্ধা), প্রাণেশ সমাদ্দার (ঢাকা) ডা. আলী আছগর (ঢাকা), শাহ তফাজ্জল হোসেন প্রধান (ঢাকা), শাহ তবিবুর রহমান প্রধান (রংপুর), এ কে এম আজহারউদ্দিন (বরিশাল), আনিসুল হক পেয়ারা (রংপুর), নিলুফার আহমদ ডলি (রংপুর, বর্তমানে ঢাকায়), রওশন জাহান হোসেন (ঢাকা), রওশন আরা চৌধুরী (ঢাকা), ড. জাহানারা বেগম (রাজশাহী, বর্তমানে ঢাকায়), হাসান ইমাম টুলু (গাইবান্ধা), শাহ আবদুর রাজ্জাক (রংপুর), ডা. এম ইসলাম (ঢাকা), চৌধুরী হারুনুর রশীদ (চট্টগ্রাম), এ কে এম রফিকুল্লাহ চৌধুরী (চট্টগ্রাম), একরামুল হক (রাজশাহী), অধ্যাপক আবুল কাসেম, শাহেদ আলী এবং মমতাজ বেগম (নারায়ণগঞ্জ)।

আন্দোলন,শহিদ মিনার,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close