• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

জাহাজ থেকে লুকিয়ে মায়ের সঙ্গে ফোনালাপ, ক্ষমা চান তৌফিকুল

প্রকাশ:  ১৩ মার্চ ২০২৪, ১৮:৫৩ | আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৪, ২০:৩৩
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‌“এমভি আবদুল্লাহ” থেকে লুকিয়ে মোবাইলে কল দিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তৌফিকুল ইসলাম। তৌফিকুল ওই জাহাজটির সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার।

জাহাজটি জিম্মি হওয়ার পর স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন তৌফিকুল।

খুলনা নগরীর বয়রা করিমনগর এলাকার বাসিন্দা মো. ইকবালের তৃতীয় সন্তান তৌফিকুল। ব্যক্তি জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা তিনি।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকাল ৫টার দিকে কল দিয়ে মায়ের কাছে দোয়া ও মাফ চান। এ সময় তার মোবাইল ফোন নিয়ে যায় দস্যুরা। এর পর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি পরিবারের। এখন তার পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

তৌফিকুলের মা দিল আফরোজ জানান, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদুস্যদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি আবদুল্লাহ” থেকে গোপনে মোবাইল ফোনে তার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন তৌফিকুল। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। সেসময় জলদস্যুরা তার ফোনটি কেড়ে নেয়।

‘এখনও মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি, জলদস্যুদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে’‘এখনও মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি, জলদস্যুদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে’

২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন জাহাজে চাকরি করছেন তৌফিকুল। “এমভি আব্দুল্লাহ” জাহাজে যোগদান করেন ২০২৩ সালের নভেম্বরে।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ “এমভি আবদুল্লাহ”। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি কেএসআরএম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।

মঙ্গলবার দুপুরে জাহাজটি সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান মালিকপক্ষের কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। দস্যুরা কীভাবে জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং জাহাজটির সর্বশেষ কী অবস্থায় রয়েছে সে বিষয়ে বার্তায় জানিয়েছেন তিনি।

অডিও বার্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি।

অডিও বার্তায় জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান বলেন, “জাহাজে তখন সকাল সাড়ে ১০টা। গ্রিনিচ মান সময় ৭টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টা)। এই সময় একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে আল্যার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার আর জাহাজের দ্বিতীয় কর্মকর্তা ব্রিজে ছিলেন তখন। আমরা এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিওতে (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তারা ফোন রিসিভ করেনি। এরপর ওরা (জলদস্যুরা) চলে এল।”

অডিও বার্তায় আতিক উল্লাহ খান আরও বলেন, “তারা (জলদস্যুরা) ক্যাপ্টেন স্যার ও দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলল। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই এলাম। এ সময় কিছু গোলাগুলি করল। সবাই ভয় পেয়েছিলাম। সবাই ব্রিজে বসে ছিল। তবে কারও গায়ে হাত দেয়নি। এ সময় একটা স্পিডবোটে আরও কয়েকজন চলে এলো। এভাবে ১৫-২০ জন এলো জাহাজটিতে। কতক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং ভেসেল (মাছ ধরার নৌযান) এলো। ওটা ছিল ইরানের মালিকানাধীন মাছ ধরার জাহাজ, যেটিকে এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। মাছ ধরার জাহাজটি দিয়ে তারা সাগরে জাহাজ খুঁজছিল। এখন ওই মাছ ধরার জাহাজ ছেড়ে দেবে। তবে সেটির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। এখন আমাদের থেকে ডিজেল নিচ্ছে। আমাদের জাহাজটি থামিয়েছে তারা। জাহাজের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।”

অডিও বার্তায় আকুতি জানিয়ে জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন।”

আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীর কাছেও একটি অডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। অডিও বার্তায় আতিক তার স্ত্রীকে বলেন, “এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিও। আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলেছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিও।”

এদিকে, জাহাজটির নাবিক আসিফুর রহমান মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে কয়েকটি ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন তিনি। ভিডিওতে দেখা গেছে, ছোট্ট একটি নৌযান থেকে রশি বেয়ে প্রথমে একজন জলদস্যু জাহাজটিতে ওঠে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, জাহাজটির নাবিকেরা জাহাজ পরিচালনাকক্ষ থেকে ভিডিও করছেন। এ সময় জাহাজটির এক নাবিককে বলতে শোনা যায়, “স্যার উঠে যাচ্ছে। ওই। ওই। সাথে গান আছে।”

এদিন সন্ধ্যায় এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী সাইদুজ্জামান শিপিংয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, “আমরা ভালো আছি। আমাদের সব মোবাইল তারা (জলদস্যুরা) নিয়ে যাচ্ছে। আমরা একটা মোবাইল রাখার চেষ্টা করছি। জাহাজে ওয়াইফাই আছে। ওয়াইফাই যেন চালু রাখা হয় সে অনুরোধ করেছি তাদের।”

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধোরের বিষয়ে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, তারা নাবিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। নাবিকদের সুরক্ষাই তাদের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। এর আগে জলদস্যুদের কবলে পড়া জাহান মনি জাহাজের নাবিকদেরও নিরাপদে দেশে এনেছেন। এ জাহাজের নাবিকদেরও নিরাপদে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।

খুলনা,জাহাজ,সোমালিয়া,মহাসাগর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close