• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বিএনপির মহাযাত্রা: কার মরণযাত্রা?

প্রকাশ:  ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০২
সৈয়দ বোরহান কবীর

অবশেষে বিএনপি ‘মহাযাত্রা’ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’ শুরু করবে দলটি। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘ঐ দিন থেকে (২৮ অক্টোবর) আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন ছাড়া ঘরে ফিরবো না।’ গত ১৫ বছর ধরেই বিএনপি বিভিন্ন সময়ে ‘ঘর ছাড়া’ বাউন্ডুলে কিংবা ‘হিমু’ হবার ঘোষণা দিয়েছে।

২০১৩ সালে বেগম জিয়া বলেছিলেন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় ছাড়া ঘরে ফিরবো না।‘ কিন্তু তার ছন্নছাড়া বহেমিয়ান জীবন বেশী দিন ভালো লাগেনি। ২০১৪ সালেতো তিনি (বেগম জিয়া) এবং বিএনপির আরেক নেতা রুহুল কবির রিজভী ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ নিয়েছিলেন। বেশ কিছু দিন পর, পুত্র শোকে কাতর বেগম জিয়া বুঝেছিলেন ‘ব্রতচারী গৃহেই তোমার সন্ন্যাস। ‘কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ ঘরে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বেগম জিয়ার চেয়ে অবশ্য রিজভীর ঘর ছাড়া জীবন অনেক দীর্ঘ।

২০১৮ সালে বেগম জিয়া কারান্তরীণ হলে রিজভী অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ‘ঘর ছাড়া’ হন। তবে তিনি আরেক নেতা সালাউদ্দিনের মতো অদৃশ্য হয়ে যাননি। ঘর ছেড়ে অফিসে ঠিকানা করেন। তাই ঘরে না থাকা বিএনপির নেতাদের পুরনো অভ্যাস। বিএনপির অনেক নেতাই ঘর ছেড়ে ‘গুম’ হয়ে আছেন। কেউ বিদেশে জুয়ার বোর্ডে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এনিয়ে নতুন করে কিছু লিখতে চাই না। বিএনপি মহাসচিবের ঘরে না ফেরার ঘোষণা তাই আমাকে চমকিত করে না। তবে বিএনপির মহাযাত্রা ঘোষণায় আমি রোমাঞ্চিত। ‘মহাযাত্রা’ বলতে মির্জা ফখরুল কি বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়ে আমি ভাবছি।

‘মহাযাত্রা’ মূলত: পথ হাটা বা পথ যাত্রা গোছের কর্মসূচী। হিন্দু ধর্মে ‘কাশি’ যাত্রাকে মহাযাত্রা বলা হয়। অন্তিম সময়ে অনেক ধর্মপ্রাণ কাশিতে কাটাতে চান। এজন্য ‘তীর্থযাত্রা’ করেন। প্রখ্যাত, কিংবদন্তী যাত্রা শিল্পী অমলেন্দু বিশ্বাস জীবনের শেষ দিকে এসে যাত্রা শিল্পকে পূণ:রুদ্ধারের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছিল অমলেন্দু বিশ্বাসের ‘মহাযাত্রা পালা। ‘যাত্রার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি তারকাদের এনে তিনি ‘মহাযাত্রা’র আয়োজন করতেন। কিছুদিন আগে রাহুল গান্ধী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভারত জোরো’ আন্দোলনের কর্মসূচী পালন করেন। এই কর্মসূচীকেও কেউ কেউ ‘মহাযাত্রা’ বলে অভিহিত করেছিল। কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারী পর্যন্ত পদযাত্রাকে বলা হয়েছিল মহাযাত্রা। মহামানবদের মহাপ্রয়ানের পর তাদের শেষ শবদাহ যাত্রাকেও মহাযাত্রা হিসেবে অভিহিত করা হয়। মির্জা ফখরুল আসলে কোন ‘মহাযাত্রা’র কথা বলেছেন? তিনি কি ২৮ অক্টোবর থেকে সারাদেশে পদযাত্রা করবেন? সারাদেশের নেতাকর্মীদের হেফাজত স্টাইলে ঢাকা অভিমুখে পদযাত্রা’র নির্দেশ দেবেন? নাকি তিনি প্রয়াত অমলেন্দু বিশ্বাসের অনুকরণে আন্দোলনের মহাযাত্রা পালা মঞ্চস্থ করবেন? অথবা ২৮ অক্টোবর হবে আন্দোলনের শব যাত্রার মহাযাত্রা? সময়ই তা বলে দেবে। তবে বিএনপির মহাযাত্রা কারো না কারো মরণ যাত্রা হবে তা বিলক্ষণ বলা যায়। এই মহাযাত্রার তিনটি ঘটনা ঘটতে পারে।

প্রথমত: বিএনপি মহাসচিব যেমনটি বলছেন, এর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের মরণ যাত্রা হবে। দ্বিতীয়ত: এর মাধ্যমে কিছুই হবে না। এটি যাত্রাপালার ‘মহাযাত্রা’র মতো একটি বিনোদন হবে। তৃতীয়ত: এই মহাযাত্রা বিএনপিরই মরণ যাত্রা হবে। ভুল আন্দোলনে বিএনপিরই চূড়ান্ত মৃত্যু হবে এই মহাযাত্রায়। আসুন দেখি মহাযাত্রার কোন পরিণতির সম্ভাবনা কতটুকু। বিএনপি মহাসচিব বলছেন, আর কোন ছাড় নয়। সরকারের পতন ঘটিয়েই তারা ঘরে ফিরবেন। আন্দোলন কি ৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচ, নাকি টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ? কয়েকদিনের সময় বেঁধে দিয়ে কি একটি সরকারকে ফেলে দেয়া যায়?

আন্দোলন সম্পর্কে সবচেয়ে মূল্যবান কথা বলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। ১৮ জানুয়ারি ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আন্দোলন গাছের ফল নয়। আন্দোলন মুখ দিয়ে বললেই করা যায় না। আন্দোলনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হয়। আন্দোলনের জন্য নিঃস্বার্থ কর্মী থাকতে হয়। ত্যাগী মানুষ দরকার। আর সর্বোপরি জনগণের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ সমর্থন থাকা দরকার। ‘বিএনপি কি গত এক বছরে আন্দোলনের তেমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পেরেছে? অন্য সবকিছু বাদ দিলাম। জনগণ কি বিএনপির আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে? কয়েক হাজার কিংবা কয়েক লাখ কর্মী জড়ো করলেই কি সরকারের পতন ঘটবে?

বিএনপির আন্দোলনের মূল দাবী হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই সরকার ব্যবস্থায় জনগণের কি লাভ? তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে কি চাল, ডাল, পিয়াজ আলুর দাম কমবে? এই সরকার কি ঢাকায় যানজট কমাতে পারবে? অনির্বাচিত একটি সরকার কি অর্থপাচার, খেলাপী ঋণ বন্ধ করতে পারবে? আমি জানি, আমার প্রশ্নের রেডিমেড উত্তর বিএনপি নেতাদের কাছে আছে। তারা বলবেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি ভালো নির্বাচন করতে পারবে। ভালো নির্বাচন হলে দেশে একটি জনগনের সরকার ক্ষমতায় আসবে। জনগনের সরকার এলে দূর্নীতি বন্ধ হবে, পণ্যের বাজারের সিন্ডিকেট বন্ধ করবে। অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সত্যি কি তাই?

২০০১ সালের অক্টোবরে তো এই বিএনপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জামায়াত বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। এদেশের জনগণ কি পেয়েছিল? লুণ্ঠন, হাওয়া ভবনের দূর্নীতি, বাজারে সিন্ডিকেট, সন্ত্রাস ছাড়া কি দিতে পেরেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট? বিএনপি নেতারা মনে করছেন এবং দাবী করছেন দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথমেই আইন লঙ্ঘন করবে এটা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।

বিএনপি তাদের দুই নেতা বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে মুক্ত করতে আইন কানুনের তোয়াক্কা করবে না। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ১৭ বছরের বুভুক্ষ। তারা ক্ষুধার্ত। তারা যদি ক্ষমতায় আসে মুহুর্তে লুটপাটে ঝাঁপিয়ে পরবে। পারলে পদ্মা সেতুর পিলার মেট্রোরেলের বগি তারা খুলে নিয়ে বেঁচে দেবে। বিএনপি পন্থী ব্যবসায়ীরা ব্যাংক লুট করবে, অর্থ পাচার করবে। দেশের বেশীর ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে ক্ষমতার হাত বদল হলে, তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। তাইতো এই আন্দোলনে জনগণ নীবর। জনগণ ছাড়া এই আন্দোলন আর যাইহোক সরকারের পতন হবে না। তাহলে এই মহাযাত্রা কি নিছক বিনোদন? যাত্রা পালা? কিছুটা বিনোদন তো বটেই।

বিএনপি এখন আন্দোলনের রোমান্টিকতায় ভুগছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু জোকারের কারণে। এরা প্রতিনিয়ত সরকার পতনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে। আগে বিদেশ থেকে হতো, এখন দেশে বসেই কিছু অর্বাচীন সুশীল জ্যোতিষীর মতো ভবিষ্যত বাণী করছে। এরা মির্জা ফখরুল পরিচালিত মহাযাত্রার পালার জোকার। আফরিন আক্তার কত তারিখের মধ্যে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলেছে, তা কেবল এক সুশীলের কানে কানেই আফরিন বলে গেছে! গুজব ফ্যাক্টিরীর নানামূখী উদ্ভাবনী আবিস্কারের জন্যই মির্জা ফখরুল মনে করছেন ডাক দিলেই পুজার মধ্যেই শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন। তাই ২৮ অক্টোবরের ‘মহাযাত্রা’ যাত্রা পালার বিনোদন হওয়া অসম্ভব না। তবে এটা কমেডী না ট্রাজেডী তা বুঝতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

এবার আসি তৃতীয় পরিণতি নিয়ে। মহাযাত্রা কি বিএনপির মরণযাত্রা হবে? ক্ষমতাগর্ভে জন্ম নেয়া দলটি দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে। জল ছাড়া যেমন মাছ বাঁচে না, তেমনি ক্ষমতা ছাড়া বিএনপিও মুমুর্ষ। নানা রোগ শোকে আক্রান্ত। এবার আন্দোলন ব্যর্থ হলে বিএনপি কি বাঁচবে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে বিএনপির দাবী কি তা আমাদের নতুন করে একবার উপলব্দি করতে হবে। আজ থেকে ঠিক ৩০ বছর আগে বিএনপি ছিলো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

৯৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। মূলত: মাগুরা উপ-নির্বাচনে নজীরবিহীন কারচুপির প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টি সামনে আসে। মাগুরা উপ নির্বাচনের পর মীরপুর উপ-নির্বাচন কারচুপির সব রেকর্ড ভঙ্গ করে। সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরে নানারকম আলোচনা এবং বিতর্ক হয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটাকে ‘সাময়িক ব্যবস্থা’ হিসেবে বলা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগ তার মূল প্রস্তাবে তিন মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছিল। এটি চিরস্থায়ী কোন ব্যবস্থা হতে পারে না। যেকোন সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য এরকম একটি ব্যবস্থা অবমাননাকর।

৯৪-৯৫ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্কে এই ব্যবস্থার বিপক্ষে সোচ্চার ছিলেন বিএনপি নেতারা। জাতীয় সংসদে তৎকালীন সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া বলেছিলেন ‘একমাত্র পাগল এবং ছাগল ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নন। ‘তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এবং দার্শনিক বক্তব্য দিয়েছিলেন বিএনপির নেতা এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। ৯৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদে তিনি বলেছিলেন ‘কি আশ্চর্য কথা। আমাদের জনগণ ভোট দেয় পাঁচবছর দেশ চালানোর জন্য । পাঁচ বছর আমরা দেশ চালাইতে পারি, কিন্তু আমরা নির্বাচন করতে পারবো না। তাহলে এই সংসদে আমরা ৩শ জন জনপ্রতিনিধি চুর (চোর)। আমরা শয়তান। পাঁচ বছর দেশ চালাই আমরা শয়তানরা। আর ৯০ দিন দেশ চালাইবো ফিরিস্তারা। কি আজব কথা। মাননীয় স্পীকার, আমরা শয়তান। আর ৩শ শয়তান নির্বাচন করবে ১০ জন ফিরিস্তা। এই ফিরিস্তারা কোহান (কোথায়) থেকে পয়দা হইলো। এই ফিরিস্তারা কারা। মাননীয় স্পীকার, ‘এই সিস্টেমে অফিসিয়ালি রাজনীতিবীদদের চুর (চোর) এবং ডেভিল (শয়তান) বানানো হইছে। এটা হইতে পারে না। ‘দশ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা সহ উপদেষ্টা মন্ডলী থাকবেন নিরপেক্ষ ব্যক্তি। তারা কোন ফেরেস্তা? এই প্রশ্নটি করেছিলেন প্রয়াত সাইফুর রহমান। জনপ্রতিনিধি যারা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন, তারা কি তাহলে ‘শয়তান’।তবে শয়তান সবাই না হলেও, কেউ কেউ যে ছিলো তাই বা অস্বীকার করি কি করে।

তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের মার্চে দেশের সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা’ সন্নিবেশিত করা হয়। শুরু থেকে এই ব্যবস্থাকে নিজের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করে ‘শয়তান’রা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় অনেক গুলো ছিদ্র ছিলো। সেই ছিদ্রগুলো দিয়েই একে অকার্যকর করা হয়। ৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অকার্যকর করতে চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত আবদুর রহমান বিশ্বাস। তিনি সেনাবাহিনীকে বিএনপির পক্ষে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ফলে সেনাবাহিনীর মধ্যে শুরু হয় বিভক্তি এবং উত্তেযনা। রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে না জানিয়েই সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমকে বরখাস্ত করেন। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। প্রধান উপদেষ্টা বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি সামাল না দিলে দেশে হয়তো আরেকটি সামরিক শাসনের অধ্যায় চালু হতো। আগে থেকেই সবাই জানতো লতিফুর রহমান হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপির লোকজন গোপনে তার সাথে যোগাযোগ শুরু করে। তাকে প্রভাবিত করে। দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেন, যাতে বিএনপির জয় নিশ্চিত হয়।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেই ‘একান্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত’ একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়। প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানো হয় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। যেন সাবেক বিএনপি নেতা কে.এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে পারেন। তীব্র আন্দোলনের মুখে কে.এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে অস্বীকৃতি জানালে বিএনপি তার গৃহভূত্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করেন। এর ফলে এই ব্যবস্থাই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এই ব্যবস্থা ধ্বংস প্রাপ্ত হচ্ছে, এটা জেনে বুঝেই ২০০৭ সালে বিরাজনীতিকরণের প্রবক্তা সুশীলরা চূড়ান্ত আঘাত হানে।

১১ জানুয়ারি চরম রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে সেনাবাহিনীর সমর্থনে তারা ক্ষমতা দখল করে। আমি মনে করি, জিয়া-এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলের মতোই এক-এগারো সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ অসাংবিধানিক। দুই বছর কোন ম্যান্ডেট ছাড়াই সুশীলরা এদেশে রাজত্ব করেন। এসময় প্রমাণিত হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ভয়ংকর ব্যবস্থা। জনগণের অধিকার হরণের এটি একটি পথ। এখন বিএনপি সেই বাতিল হয়ে যাওয়া, গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছে কেন? আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য?

কিন্তু ২০০৭ সালের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে, অনির্বাচিত সরকার আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলের জন্যই ক্ষতিকর। এটা আসলে সুশীলদের বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন। আরেকবার এক-এগারোর মতো সরকার এলে দেশ রাজনীতি শূণ্য হবে। তখন কি বিএনপির অস্তীত্ব থাকবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী তুলে বিএনপি কি নিজের ‘শবযাত্রা’র আয়োজন করছে?

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

সৈয়দ বোরহান কবীর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close