• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এখনকার এই নিষ্ঠুর পারিবারিক শিষ্টাচার চাই না

প্রকাশ:  ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩০
এবিএম জাকিরুল হক টিটন

তখন হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিলো না। ল্যান্ড ফোন ছিলো হাতেগোনা কিছু পরিবারে। আমাদের বগুড়া বাসায় তখনো একটা ল্যান্ড ফোন ছিলো। হুটহাট বাড়িতে চলে আসতো চাচা-চাচি, মামা-মামি, খালা-খালু, ফুপা-ফুপিরাসহ নানা ধরনের আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনরা। আমাদের বাসায় আসতো বেড়াতে কিংবা নানা কাজে।

যেমন- ডাক্তার দেখানো, ম্যাট্রিক, ইন্টার পরিক্ষা দিতে, চাকুরির পরিক্ষা দিতে, কেনা-কাটা করতে, ভালো সিনেমা দেখতে, এমন কি বিদেশে অবস্থানরত তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে টেলিফোনে কথা বলতে। অনেক সময় সাথে থাকতো তাদের ছেলে-মেয়েরাও।

কি আনন্দ, কি আনন্দ! গোটা বাড়িতেই ছড়িয়ে পড়তো অন্যরকম এক আনন্দ ও ভালো লাগা। অতিথি খুশি, খুশি বাড়ির গৃহকত্রীও। আর ছেলে-মেয়েরা তো মহাখুশী। আমরা তখনো যৌথ পরিবার ছিলাস, এখনো আছি। একসাথে অনেক রান্নাবান্না, একসাথে খাওয়া-দাওয়া। মেঝেতে, সোফায় ঘুমানো, আনন্দের যেনো শেষ নেই৷

অথচ সেই আমরাই সময়ের পরিক্রমায় কখন যে অমানুষ হয়ে গেলাম, সভ্যতার আলোয় এসে পারিবারিক বন্ধন, মূল্যবোধ, আত্মীয়তা হারিয়ে ফেললাম। ভাবতেই কষ্ট হয়। অবাক লাগে! এখন কেউ বাড়িতে আসতে চাইলে আগে ফোন করতে হয়। নইলে অভদ্রতা হয়ে যায়। নায়োর আসার কথা মানুষ তো ভুলেই গেছে এখন। কিছুদিন পর হয়তো এই নায়োর শব্দ শুধু বাংলা অভিধানে পাওয়া যাবে।

এখন বাড়িতে কেউ আসতে চাইলে কৃত্রিম সংকটের দোহাই দিয়ে বলা হয়, ‘আল্লাহ ভাবী, আমি তো ঢাকার বাহিরে যাচ্ছি, আপনি আসবেন? কিংবা ভাবী, আমার ছোটা মেয়েটার টিউটেরিয়াল পরীক্ষা চলছে যে, এখন আসাটা কি জরুরি? মেয়েটার গত টার্মেও পরীক্ষা খারাপ হয়েছে- এমন নানান অজুহাত।

বলুনতো এমন কথা শোনার পর কেউ কি আসবে কারো বাসায়? এই হলো বর্তমান তথাকথিত অধুনিক ব্যবস্থা। ‘তিথি না মেনে যিনি বেড়াতে আসেন, তিনিইতো অতিথি’- এ কথা আমরা ভুলে গেছি আমাদের আধুনিক কালচারের প্রভাবে। হঠাৎ দুপুরে অথবা রাতে কোনো মেহমানকে খেতে দিতে হলে অনেক গৃহকত্রীর মাথায় বাজ পড়ে। অথচ মনে পড়ে মাঝে মাঝেই স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে দু’একজন বন্ধু নিয়ে বাসায় যেতাম। সবাই ভাত খেয়ে আবার স্কুলে আসতাম। কলেজ জীবনে রাজনৈনিক সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিনে নোটিশে বাসায় ৫/৭ জন হাজির হয়ে বলতাম মা টেবিল লাগাও, আমরা সবাই ক্ষুদার্ত। মা হাসি মুখে ব্যবস্থা করতো।

আমি কোনোদিন কম্মিনকালেও মা’র মুখে বিরক্ত দেখিনি। যেনো এটাই ছিলো স্বাভাবিক। আমরা বিশাল ধনী ছিলাম না ঠিকই কিন্তু কোনোদিন এ কারণে খাবার কম পড়েছে, এমনটা হয়নি। জানি না, আবার কখনো আমরা ঐরকম প্রাণবন্ত বাড়ি খুঁজে পাবো কি না। আবার কখনো আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠদের সাথে হাসি-হুল্লোড় করে আড্ডা দিতে পারবো কি না।

কারণ আমরা এখন অনেক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছি, অনেক সভ্যতার পরশে আধুনিক হয়েছি। আমরা প্রযুক্তির উন্নয়নে হাতে মোবাইল নিয়ে একা একা বাঁচতে শিখে গেছি৷ কি নিষ্ঠুর এই সভ্যতা, কি নিষ্ঠুর এই আধুনিকতা। যখনি আগের কথা ভাবি, এখনের সাথে তুলনা করি তখনি প্রচণ্ড কষ্ট পাই। এমন কষ্ট নিয়েই হয়তো চলে যেতে হবে।

তাই হয়তো মন কষ্টে গেয়ে উঠি, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’।

লেখক: রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী এবং সম্পাদক, পূর্বপশ্চিম.নিউজ

শিষ্টাচার,নিষ্ঠুর,পারিবারিক,এবিএম জাকিরুল হক টিটন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close