• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দেদারছে ইলিশ শিকার

প্রকাশ:  ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৫৬
শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর

এখন চলছে ইলিশের প্রজনন সময়। সমুদ্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে মা ইলিশ মিঠা পানিতে আসছে ডিম ছাড়ার জন্য। নিরাপদে ডিম পাড়ার জন্য মিঠা পানিতে এসেই হত্যার শিকার হচ্ছে ইলিশ। ফলে ইলিশের প্রজনন হচ্ছে ব্যাহত। এভাবে প্রজনন ব্যাহত হলে ইলিশের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এই অবস্থা উপলদ্ধি করতে পেরে প্রজনন মৌসুমে সরকার ২২ দিন ইলিশের অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা, জাল ফেলা, ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।

এর ব্যত্যয় ঘটলে ২ বছরের কারাদন্ড অথবা ১০ হাজার করে টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু কে শুনছে কার কথা ? নিষিদ্ধ এই সময়েও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করা হচ্ছে।

ইলিশের প্রজনন রক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করতে একশ্রেণির জেলে কখনো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার কোথায়ও কোথায়ও আাঁতাত করে নদীতে জাল ফেলে মা ইলিশ শিকার করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে যখন সাগর ও নদী উত্তাল, তখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পদ্মা-মেঘনায় ডিম ছাড়ার জন্য আসে। আর এ সুযোগটা বেশি কাজে লাগায় জেলেরা। শত শত জেলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ইলিশ নিধনে মেতে ওঠেছে। খোদ চাঁদপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতেই ইলিশের বেঁচা-বিক্রি হচ্ছে বেশি। অসচেতন ও লোভী কিছু মানুষ কম দামে ডিমওয়ালা ইলিশ কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এ যেন মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ, কোষ্টগার্ড, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল প্রদর্শণ।

জানা যায়, মেঘনার পশ্চিম পাড়ের রাজরাজেশ্বর চর এলাকা ও শরীয়তপুর-চাঁদপুরের নৌ-সীমানার পদ্মা নদী থেকে শুরু করে সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের চরফতেজংপুর, গুচ্ছগ্রাম চর, আলুবাজার, ঈদগাহ বাজার, লক্ষীরচর, সাখুয়া খাল, জাফরাবাদ, নন্দীদের খাল, লক্ষীপুর ইউনিয়নের রামদাসদী খাল, দোকানঘর, গুচ্ছগ্রাম, বহরিয়া, লোদেরপাড়, নন্দেশ খাঁর খাল, হানারচর ইউনিয়নের নন্দীর দোকান, গোবিন্দিয়া, চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট, বাখরপুর গ্রামের নদীর পাড়, জ্বীন গাছতলা, তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দবাজার, সৈয়ালবাড়ি খাল, কল্যাণপুর ইউনিয়নের নদীর পাড়, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এবং হাইমচরের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে মাছ ধরা হচ্ছে।

উল্লেখিত এলাকার নদীর পাড়ে পাড়ে ভর দুপুরে, সন্ধ্যার পর, মধ্যরাতে এবং ফজর নামাজের পর ইলিশ বিক্রির উৎসব চলে। বস্তায় বস্তায় ইলিশ মাছ আবার ঢুকে পড়ছে গ্রামে গ্রামে। ফরিদগঞ্জসহ আশপাশে সকালে প্রচুর ইলিশ ফেরি করে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সাইজের এক হালি ইলিশ ৮/৯'শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোষ্ট গার্ড, নৌ পুলিশ এবং ফাঁড়ি ও থানা পুলিশের তৎপরতা এবার লক্ষ্যণীয় নয়। এই সুযোগে জেলেরা তাদের স্বার্থের জন্যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরছেই।

শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেল পৌনে চারটার দিকে দেখা যায়, একেবারে শহরের সাথে তরপুরচন্ডি ইউনিয়নের ছৈয়াল কান্দি এলাকার খালে রতন নামের একজন জেলে ও তার প্যান্ট-সার্ট পড়–য়া সহযোগিরা নৌকার পাটাতনের নিচে রেখে ইলিশ বিক্রি করছে। নৌকাতে কোন জাল নেই। প্যান্ট-সার্ট পড়–য়া যাত্রীবেশি ইলিশ বিক্রিকারীরা। পাটাতনের নিচে মাছ। মুখ বুঝে বিক্রি হচ্ছে মাছ। বুঝার উপায় নেই এই নৌকায় মাছ রয়েছে। দেখলে মনে হবে যাত্রী পারাপারের নৌকা। বিষয়টি লক্ষ্য করে সাথে সাথে নৌ-পুলিশ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, কোষ্টগার্ড, জেলা প্রশাসনকে অবহিত করার চেষ্টা করা হয়। এর ভেতর চাঁদপুর নৌ-থানার ইনচার্জ এবং জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফোনই ধরেননি। কোষ্টগার্ডের অপর প্রাপ্ত থেকে জানানো হয় তথ্য প্রদাণকারীকে ১৫/২০ মিনিট নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে। আর খোদ জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান ফোন রিসিভ করে জানালেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। ওনাদের এই দেখাদেখির সুযোগে অসাধু জেলে রতন ও তার দলবল মাছ নিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

এদিকে নদী থেকে আটককৃত নৌকা ডুবিয়ে দেয়া, জাল পুড়িয়ে দেয়া হলেও জব্দকৃত মাছ কোথায় যায় সে নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। এসব মাছ কোল্ড ষ্টোরে সরক্ষণ করে পরে তা কী করা হয় গত ৬ বছরেও জানতে পারেনি সাধারণ মানুষ।

/এসএফ

চাঁদপুর,ইলিশ শিকার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close